বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের সাবেক ‘সিটি মিনিস্টার’ টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে চলমান বিচারের সমালোচনা করেছেন যুক্তরাজ্যের শীর্ষস্থানীয় একদল আইনজীবী। তাদের মধ্যে যুক্তরাজ্যের সাবেক কনজারভেটিভ সরকারের একজন বিচারমন্ত্রীও রয়েছেন। আগামী ১ ডিসেম্বর এ মামলার রায় ঘোষণার আগে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে চিঠি পাঠিয়ে এ অবস্থান জানিয়েছেন ওই আইনজীবীরা।
গত জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের সরকারের সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে ইস্তফা দেওয়া টিউলিপ সিদ্দিকের অনুপস্থিতিতেই মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। এ মামলায় তার সর্বোচ্চ সাজা হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড চেয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
লন্ডনের হ্যাম্পস্টিড ও হাইগেট আসনের লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দমন-পীড়নের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গত সপ্তাহে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সরকারের বিচারমন্ত্রী রবার্ট বাকল্যান্ড কেসি ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ডমিনিক গ্রিভিসহ দেশটির খ্যাতিমান একদল আইনজীবী দেশটিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার আবিদা ইসলামকে ওই চিঠি লিখেছেন। চিঠিতে তারা অভিযোগ করেছেন, বিচার চলাকালে টিউলিপ সিদ্দিকের মৌলিক অধিকারগুলো রক্ষা করা হয়নি। এর মধ্যে রয়েছে তার বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ আনা হয়েছে, সেগুলো তাকে জানানো হয়নি বা বিচারে তার আইনি প্রতিনিধিত্বের সুযোগ দেওয়া হয়নি।
ব্রিটিশ আইনজীবীদের এই দলে চেরি ব্লেয়ার কে সি, ফিলিপ স্যান্ডস কে সি ও জিওফ্রে রবার্টসন কে সি রয়েছেন।
‘এ ধরনের একটি প্রক্রিয়া বিচার পরিচালনার ক্ষেত্রে কৃত্রিম, সাজানো ও অন্যায্য’ বলে চিঠিতে লিখেছেন তাঁরা।
গত বছর আগস্টের পর থেকে ঢাকায় টিউলিপ সিদ্দিকের পাশাপাশি তার খালা, মা, ভাই, বোনসহ আরও অনেক ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিচার চলছে।
লেবার পার্টির এমপি টিউলিপের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ঢাকার উপকণ্ঠে মায়ের জন্য একটি প্লট নিশ্চিত করতে হাসিনার (গত বছর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত) ওপর প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। টিউলিপের মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন।
অভিযোগ অস্বীকার করে টিউলিপ বলেছেন, এসব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
ব্রিটিশ আইনজীবীরা এমন সময়ে বাংলাদেশের বিদ্যমান ফৌজদারি মামলার বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করলেন, যখন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বারবার দেশে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন।
চিঠিতে টিউলিপের বিষয়ে তারা লিখেছেন, ‘যেহেতু তিনি যুক্তরাজ্যে বসবাস করেন এবং যুক্তরাজ্যের একজন নাগরিক, সে কারণে তিনি একজন পলাতক ব্যক্তি নন। তিনি একজন নির্বাচিত পার্লামেন্ট সদস্য, যার সঙ্গে হাউস অব কমন্সে যোগাযোগ করা যায় এবং তার প্রত্যর্পণের পক্ষে যথাযথ যুক্তি থাকলে প্রয়োজনে অভিযোগের মুখোমুখি হওয়ার জন্য তাঁকে বাংলাদেশে প্রত্যর্পণ করা যায়।’
ব্রিটিশ আইনজীবীরা বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষগুলোর প্রতি এসব উদ্বেগ দূর করে ন্যায়বিচার এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
লেবার পার্টি গত বছর যুক্তরাজ্যে সরকার গঠন করলে টিউলিপ সিদ্দিককে দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘সিটি মিনিস্টার’-এর দায়িত্ব দেওয়া হয়। বাংলাদেশে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর সমালোচনার মুখে গত ১৪ জানুয়ারি ওই দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। এরপর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর স্বাধীন পরামর্শক স্যার লরি ম্যাগনাস টিউলিপের বিরুদ্ধে তদন্ত করে সিদ্ধান্ত দেন যে তিনি কোনো অনিয়ম করেননি।
তবে লরি ম্যাগনাস এ-ও বলেছিলেন, পারিবারিক সম্পর্ক থেকে তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার সম্ভাব্য ঝুঁকির বিষয়ে টিউলিপ সিদ্দিক ততটা সাবধান ছিলেন না—বিষয়টি দুঃখজনক।
ব্রিটিশ আইনজীবীদের চিঠির বিষয়ে বক্তব্যের জন্য যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে

