12.4 C
London
April 19, 2025
TV3 BANGLA
আন্তর্জাতিক

ট্রাম্পের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কর-মুক্ত মর্যাদা প্রত্যাহারের হুমকি

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির একটি গুরুত্বপূর্ণ কর-মুক্ত সুবিধা বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছেন। এর কয়েক ঘণ্টা পরেই ট্র‍্যাম্প প্রশাসন এই অভিজাত প্রতিষ্ঠানটির জন্য বরাদ্দকৃত ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি ফেডারেল তহবিল স্থগিত করার ঘোষণা দেয়।
হোয়াইট হাউস দাবি করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় হার্ভার্ডকে নিয়োগ, ভর্তি এবং পাঠদানের পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে হবে, যা ক্যাম্পাসে ইহুদিবিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করবে।

ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে ট্রাম্প উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রভাব বিস্তার করতে চাচ্ছেন গবেষণার জন্য নির্ধারিত ফেডারেল তহবিল প্রত্যাহারের হুমকি দিয়ে।

হার্ভার্ড সোমবার প্রথম প্রধান মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে তার প্রশাসনের দাবিগুলো প্রত্যাখ্যান করে, এবং হোয়াইট হাউসকে তাদের সম্প্রদায় “নিয়ন্ত্রণ” করার চেষ্টা করার অভিযোগ তোলে।

মঙ্গলবার সকালে সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে, ট্রাম্প শুধু ফেডারেল তহবিল আটকে রাখার হুমকিতেই থেমে থাকেননি, তিনি হার্ভার্ডের কর-মুক্ত মর্যাদাকেও টার্গেট করেছেন।

সাধারণত আমেরিকাতে বিশ্ববিদ্যালয়, অনেক চ্যারিটি ও ধর্মীয় গোষ্ঠী ফেডারেল আয়কর থেকে অব্যাহতি পায়। তবে এই সুবিধা তুলে নেওয়া যায় যদি কোনো প্রতিষ্ঠান রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে বা তাদের ঘোষিত উদ্দেশ্য থেকে সরে আসে।

ট্রাম্প Truth Social-এ লেখেন, “ হার্ভার্ডের কর-মুক্ত মর্যাদা কেড়ে নিয়ে তাদের একটি রাজনৈতিক সত্তা হিসেবে কর আরোপ করা উচিত। তারা রাজনৈতিক, মতাদর্শগত এবং সন্ত্রাসবাদ অনুপ্রাণিত/সমর্থনকারী ‘অসুস্থতা’ ছড়াতে থাকে? মনে রাখুন, কর-মুক্ত মর্যাদা পুরোপুরি গণস্বার্থে কাজ করার উপর নির্ভরশীল!”

এই সুবিধা হারালে প্রতি বছর হার্ভার্ডের বহু কোটি ডলার ক্ষতি হতে পারে বলে জানা যায়।

মঙ্গলবার, হোয়াইট হাউস প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট জানান, ট্রাম্প চান হার্ভার্ড ইহুদিবিদ্বেষ সহ্য করার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুক।

হোয়াইট হাউস যে পরিবর্তনগুলো চেয়েছে, তা কার্যকর হলে হার্ভার্ডের পরিচালনা পদ্ধতিতে বড় রদবদল আসতো এবং সরকারের হাতে অনেক নিয়ন্ত্রণ চলে যেত।

নিউ ইয়র্ক টাইমস প্রাপ্ত চিঠিতে বলা হয়েছে, হার্ভার্ড ‘মেধা ও নাগরিক অধিকার সংক্রান্ত শর্ত পূরণে’ ব্যর্থ হয়েছে, যা ফেডারেল বিনিয়োগের যৌক্তিকতা তৈরি করে।

চিঠিতে ১০টি পরিবর্তনের প্রস্তাব ছিল, যার মধ্যে রয়েছেঃ

আমেরিকান মূল্যবোধের প্রতি “শত্রুভাবাপন্ন” শিক্ষার্থীদের ফেডারেল সরকারে রিপোর্ট করা।

প্রতিটি একাডেমিক বিভাগে “দৃষ্টিভঙ্গির বৈচিত্র্য” নিশ্চিত করা।

ইহুদিবিদ্বেষমূলক হয়রানির উৎস খুঁজতে সরকার-অনুমোদিত বাহ্যিক সংস্থা দিয়ে অডিট করা।

শিক্ষকদের মধ্যে সাহিত্য চৌর্যবৃত্তি (plagiarism) আছে কি না তা পরীক্ষা করা।

ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গাজায় যুদ্ধ এবং ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন সমর্থনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকালে ইহুদি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়কে এই বিক্ষোভ চলাকালীন সময়ে “উল্লেখিত লঙ্ঘনগুলোর” জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্ট অ্যালান গারবার বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় তার স্বাধীনতা বা সংবিধান স্বীকৃত মত প্রকাশের অধিকার ত্যাগ করবে না।

তিনি বলেন, “যদিও সরকারের কিছু দাবি ইহুদিবিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য, কিন্তু বেশিরভাগই হার্ভার্ডের ‘জ্ঞানতাত্ত্বিক পরিবেশে’ সরাসরি সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা।”

হার্ভার্ডকে প্রতিরোধমূলক চিঠি পাঠানোর পরপরই শিক্ষা বিভাগ জানায়, তারা ২.২ বিলিয়ন ডলার অনুদান ও ৬০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি তহবিল তাৎক্ষণিকভাবে স্থগিত করছে।

শিক্ষা বিভাগের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “হার্ভার্ডের আজকের বিবৃতি আমাদের দেশের মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রচলিত এক সমস্যা – ‘প্রাপ্যতা ভাবনা’– আরও স্পষ্ট করে।”

এই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার বিঘ্ন ঘটানো অগ্রহণযোগ্য এবং ইহুদি শিক্ষার্থীদের হয়রানি সহ্য করা যায় না।

হার্ভার্ডের ইতিহাসের অধ্যাপক ডেভিড আর্মিটেজ বিবিসিকে বলেন, হার্ভার্ড যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ধনী বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় প্রতিরোধ করতে পারছে।

তিনি বলেন, “এটি একটি অনুমেয় এবং ভিত্তিহীন প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ, যার উদ্দেশ্য শুধু মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করা।”

মার্চ মাসে, ট্রাম্প প্রশাসন জানায় তারা হার্ভার্ডের ২৫৬ মিলিয়ন ডলার ফেডারেল চুক্তি এবং ৮.৭ বিলিয়ন ডলারের বহুবছর মেয়াদি অনুদান পর্যালোচনা করছে।

হার্ভার্ডের অধ্যাপকরা এর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন, অভিযোগ করেছেন ট্র‍্যাম্প সরকার বেআইনিভাবে মতপ্রকাশ ও একাডেমিক স্বাধীনতার ওপর আঘাত করছে।

গ্যালাপের এক জরিপ অনুযায়ী, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমেরিকানদের মধ্যে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আস্থা কমছে। কারণ হিসেবে রাজনৈতিক এজেন্ডা চাপিয়ে দেওয়ার ধারণা উল্লেখ করা হয়েছে।

গত সোমবার, কোলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ সংগঠকের একজন আইনজীবী জানান, তার মক্কেল নাগরিকত্বের আবেদন সংক্রান্ত সাক্ষাৎকারে যোগ দিতে গিয়ে অভিবাসন কর্মকর্তাদের হাতে গ্রেপ্তার হন।

গ্রিন কার্ডধারী মোহসেন মাহদাবি, যিনি আগামী মাসে স্নাতক হতে যাচ্ছেন, সোমবার ভারমন্টের কোলচেস্টারে আটক হন।

এছাড়াও, যেসব শিক্ষার্থী গাজা যুদ্ধবিরোধী ক্যাম্পাস বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে কোলম্বিয়ার মাহমুদ খালিল ও টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ের রুমেইসা ওজতুর্ক সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আটক হয়েছেন।

সূত্রঃ বিবিসি

এম.কে
১৬ এপ্রিল ২০২৫

আরো পড়ুন

ভারতের নাম পরিবর্তন নিয়ে যা বলল জাতিসংঘ

ওমরাহ পালনকারীদের সুখবর দিল মক্কা নগরী কর্তৃপক্ষ

মারা গেছে বিখ্যাত মিম কুকুর চিমস