যুক্তরাজ্যের হাইকোর্ট বার্মিংহাম নিউ স্ট্রিট স্টেশনে অনুষ্ঠিত এক ইমিগ্রেশন সাক্ষাৎকারকে ‘প্রক্রিয়াগতভাবে অন্যায্য’ ঘোষণা করে হোম অফিসের সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে। আদালত রায়ে বলেছেন, জনসমক্ষে, শব্দপূর্ণ পরিবেশে এবং যথাযথ ন্যায্যতা নিশ্চিত না করে নেওয়া জিজ্ঞাসাবাদ একজন
অভিবাসীর ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুতর অন্যায়।
মামলাটি ছিল বাংলাদেশি নাগরিক মামুন আহমেদকে কেন্দ্র করে, যিনি ২০২৩ সালের অক্টোবরে আয়লসবেরির এক কেয়ার হোমে কাজের জন্য স্কিল্ড ওয়ার্কার ভিসা পান। ১২ ডিসেম্বর তিনি যুক্তরাজ্যে পৌঁছান এবং ১ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে চাকরি শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু ১১ জানুয়ারি বার্মিংহাম নিউ স্ট্রিট স্টেশনে ইমিগ্রেশন এনফোর্সমেন্ট কর্মকর্তারা তাকে থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। কর্মকর্তারা দাবি করেন, মামুন তাদের দেখে নার্ভাস হয়ে দূরে সরে যাচ্ছিলেন, এবং সাক্ষাৎকারে তিনি নাকি স্বীকার করেন যে তিনি এখনো কেয়ার হোমে কাজ শুরু করেননি, স্পনসরের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি এবং কাকার রেস্টুরেন্টে নগদ টাকায় কাজ করছেন। এই তথাকথিত স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে হোম অফিস তার ভিসা তাৎক্ষণিকভাবে বাতিল করে ও তাকে আটক করে কয়েকদিন হেফাজতে রাখে।
এরপর মামুন আহমেদ হাইকোর্টে বিচারিক পর্যালোচনার আবেদন করেন। আদালতে তিনি জানান, সাক্ষাৎকারটি ট্রেন স্টেশনের মাঝখানে জনসমক্ষে, শব্দপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে তিনি তার দ্বিতীয় ভাষায় প্রশ্নগুলো বুঝতে ও সঠিকভাবে উত্তর দিতে পারেননি। তিনি অভিযোগ করেন, কর্মকর্তারা তার বক্তব্য বিকৃতভাবে রেকর্ড করেছেন; বাস্তবে তিনি কেবল মাঝে মাঝে কাকাকে সাহায্য করতেন, কোনো বেতন নেননি, এবং স্পনসরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন—যিনি জানিয়ে দেন, কাজ শুরু করতে কিছুটা সময় লাগবে।
আদালত সাক্ষাৎকারের পরিস্থিতি ও রেকর্ড বিশ্লেষণ করে দেখতে পায়, কর্মকর্তারা সাক্ষাৎকার পরিচালনায় ন্যূনতম ন্যায্যতার শর্তও মানেননি। রায়ে বিচারক বলেন, “একজন ব্যক্তির তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদি ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ এমন সাক্ষাৎকার শব্দপূর্ণ ও জনসমাগমপূর্ণ পরিবেশে নেওয়া প্রক্রিয়াগত ন্যায্যতার পরিপন্থী।” আদালত আরও মন্তব্য করে, হোম অফিস যথাযথ তদন্ত ও স্পনসরের মতামত নিলে ফলাফল ভিন্ন হতে পারত। ফলে আদালত ভিসা বাতিলের সিদ্ধান্ত ও পরবর্তী আটকাদেশ—দুটিই বাতিল ঘোষণা করে।
এই রায় যুক্তরাজ্যের ইমিগ্রেশন প্রশাসনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। আদালত মনে করিয়ে দিয়েছে যে, হোম অফিসের প্রয়োগক্ষমতা যতই বিস্তৃত হোক, তা অবশ্যই ন্যায্যতা ও মানবিক প্রক্রিয়ার আওতায় থাকতে হবে। একইসঙ্গে এই রায় অভিবাসী কর্মীদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছে—তাদের যেকোনো যোগাযোগ, কর্মসংস্থানের অবস্থা বা পারিবারিক সহায়তার তথ্য যথাসম্ভব লিখিতভাবে সংরক্ষণ করা উচিত, যাতে ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ না থাকে।
আইনজীবী মহল বলছে, এই রায় ইমিগ্রেশন জিজ্ঞাসাবাদের পদ্ধতি ও পরিবেশে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। ভবিষ্যতে কর্মকর্তাদের ভাষাগত সীমাবদ্ধতা, সাক্ষাৎকারের স্থান, এবং প্রমাণ যাচাইয়ের প্রক্রিয়া সম্পর্কে আরও সংবেদনশীল হতে বাধ্য করবে। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ও কর্মীদের অধিকার সুরক্ষায় এটি একটি দৃষ্টান্তমূলক রায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সূত্রঃ ফ্রি মুভমেন্ট
এম.কে
১৬ অক্টোবর ২০২৫