ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ ঘিরে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ করেছেন একদল শিক্ষার্থী। এসময় তারা স্লোগান দেন— “ভিসি স্যার জানেন নাকি, নীলক্ষেতের নায়ক আপনি” এবং “ভিসি না নীলক্ষেত, নীলক্ষেত-নীলক্ষেত”। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ভোটে অনিয়ম ও কারচুপির নানা প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অভিযোগগুলো অগ্রাহ্য করেছে।
পরিস্থিতি নতুন মোড় নেয় একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের পর। সেখানে বলা হয়, গোপনীয়ভাবে ছাপার কথা থাকলেও নীলক্ষেতে অরক্ষিত পরিবেশে ছাপানো হয়েছে ডাকসুর ব্যালট পেপার। শুধু তাই নয়, সংখ্যাতেও রয়েছে গরমিল। এ সংবাদ প্রকাশের পর নেটিজেনদের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়। অনেকে ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে নতুন নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানান।
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে অংশ নিয়ে অনেকে জানান, প্রশাসনের দাবি অনুযায়ী যদি নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠু হয়ে থাকে তবে কেন সিসিটিভি ফুটেজ ও ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে না। তাদের অভিযোগ, গোপনীয়তার দোহাই দিয়ে আসলে অনিয়ম আড়াল করা হচ্ছে। অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী এম এ মহমিতুর রহমান বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যালট কোথায় ছাপানো হয়েছে তা গোপন রেখেছে। অথচ অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে স্পষ্ট হয়েছে, নীলক্ষেতেই ব্যালট ছাপা হয়েছিল।”
এ অভিযোগের প্রমাণ মিলে জালাল প্রেস ও মক্কা কাটিং হাউসের মালিকদের কাছ থেকেও। জালাল প্রেস স্বীকার করেছে তারা ৯৬ হাজার ব্যালট ছাপিয়েছে। অপরদিকে মক্কা কাটিং হাউস জানিয়েছে, তাদের মাধ্যমে কাটিং করা হয়েছে প্রায় ৮৮ হাজার ব্যালট। অন্যদিকে ডাকসুর ব্যালট ও গণনার টেন্ডার পাওয়া প্রতিষ্ঠান আঞ্জা করপোরেশনের চেয়ারম্যান দাবি করেছেন, তাদের প্রেস থেকে ছাপানো হয়েছে ১ লাখ ৫৩ হাজার ব্যালট। এতে ব্যালটের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে দেখা দিয়েছে ব্যাপক গরমিল।
ছাত্রদল মনোনীত ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান ২২ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন নিয়ে ১১টি অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগ উত্থাপন করেন। তার দাবি, প্রশাসন যদি অবস্থান স্পষ্ট না করে তবে ছাত্রদল এই নির্বাচনকে বৈধতা দেবে না।
এদিকে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, তারা অভিযোগগুলো সর্বোচ্চ গুরুত্বসহকারে তদন্ত করছে। ডাকসু নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেছেন, “ব্যালট পেপার-সংক্রান্ত অভিযোগ অতীব গুরুত্বসহ পর্যবেক্ষণ ও তদন্ত করা হচ্ছে।” শিগগিরই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিস্তারিত জানানো হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
শিক্ষার্থী মহলে এখন জোরালোভাবে প্রশ্ন উঠছে— ভোটার সংখ্যা যেখানে ৩৯ হাজার ৭৭৫, সেখানে একাধিক প্রতিষ্ঠানের ভিন্ন ভিন্ন হিসাব অনুযায়ী লাখেরও বেশি ব্যালট কেন ছাপা হলো? এই প্রশ্নের জবাব না মিললে ডাকসু নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে আরও তীব্র বিতর্ক দেখা দেবে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
সূত্রঃ ইনকিলাব
এম.কে
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫