জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থার প্রধান অ্যামি পোপ সতর্ক করে বলেছেন, মানুষ যখন ফ্রান্সের উত্তরে পৌঁছায়, তখন তাদের ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেওয়া ঠেকাতে দেরি হয়ে যায়। যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স সরকার যখন উপকূল থেকে ডিঙ্গি রওনা ঠেকাতে যৌথ পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন এই মন্তব্য করলেন তিনি।
পোপ বলেন, নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল অভিবাসনের সুযোগ অভিবাসনের উৎস দেশগুলোর কাছাকাছি তৈরি করাই বেশি কার্যকর হবে। একইসঙ্গে তিনি যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে বিরাজমান বিষাক্ত অভিবাসনবিরোধী বক্তব্য থেকে সরে আসার আহ্বান জানান।
ফ্রান্সের উপকূল থেকে ৩০০ মিটার দূরত্বে ডিঙ্গি আটকানোর পরিকল্পনাকে ঘিরেই ম্যাক্রোঁর যুক্তরাজ্য সফরের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু তৈরি হয়েছে। কিন্তু পোপের মতে, অভিবাসীরা যখন ফ্রান্সে পৌঁছায়, তখন তারা ইতোমধ্যে তাদের যাত্রায় হাজার হাজার পাউন্ড খরচ করে, পরিবার থেকে আসা চাপের মধ্যেও থাকে।
তিনি বলেন, “প্রত্যেকটি ধাপে অভিবাসীরা তাদের যাত্রার প্রতিশ্রুতি আরও দৃঢ় করে ফেলে।” ফলে এ পর্যায়ে এসে তাদের ফেরানো অত্যন্ত কঠিন।
ছোট নৌকা ঠেকাতে চ্যানেলেই নজর কেন্দ্রীভূত করা নয়, বরং তাদের প্রথম গন্তব্যেই সহায়তা দেওয়ার ওপর গুরুত্ব দিতে বলেন তিনি। এতে তারা দ্বিতীয় বা তৃতীয় দেশে যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করবে না।
“আমাদের হস্তক্ষেপ আরও আগেই করতে হবে। কেউ যখন ভাবছে তার সবচেয়ে ভালো সুযোগ হলো ডিঙ্গি নিয়ে পার হওয়া—সেই সময়েই তাকে বোঝাতে হবে। এটা ক্যালের তীরে গিয়ে করার বিষয় নয়,”— বলেন পোপ।
ছোট নৌকা ঠেকাতে ডিঙ্গি ফেরানোর (pushback) কৌশলের কার্যকারিতা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, “এ ধরনের কৌশল একা প্রয়োগ করে তেমন ফল পাওয়া যায় না।”
যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে লন্ডন সফরে আলোচনায় বসে তিনি এসব বিষয় তুলে ধরেন। পোপ মনে করেন, ব্রিটিশ সরকার এখন বুঝতে শুরু করেছে যে কেবল চ্যানেল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা সবচেয়ে কম কার্যকর এবং মানবিকভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর হতে পারে।
কলম্বিয়ায় IOM পরিচালিত মোবাইল স্বাস্থ্যসেবা প্রকল্পের উদাহরণ দিয়ে তিনি দেখান, কীভাবে শরণার্থী আগমনের চাপ হালকা করা যায়। একইভাবে অন্যান্য অভিবাসন সংকটেও এমন সমন্বিত ব্যবস্থা দরকার বলে জানান তিনি।
পোপ রাজনৈতিক বিতর্ক থেকে অভিবাসন ইস্যুকে আলাদা করে ব্যুরোক্রেটিক বা প্রশাসনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে এগিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেন। “আমাদের এমন সমাধান দরকার যা রাজনৈতিক আওয়াজের বাইরে গিয়ে বাস্তবভিত্তিক ও কার্যকর হয়।”
তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে, যুক্তরাজ্য একদিকে অভিবাসন সংকট নিয়ে কথা বলছে, অন্যদিকে মানবিক ও উন্নয়ন সহায়তা কমানোর পরিকল্পনা করছে। এটি অভিবাসনের বাস্তবতা বুঝতে ব্যর্থতার পরিচায়ক বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
“আমি অভিবাসীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা মানুষ—এবং যে সিদ্ধান্তগুলো তারা নিচ্ছে, সেই একই সিদ্ধান্ত অন্য কোনও মানুষও নিত যদি তারা একই পরিস্থিতিতে থাকত,”— বলেন IOM প্রধান। “মানবসভ্যতার ইতিহাসে মানুষ সবসময়ই অভিবাসন করেছে।”
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
০৯ জুলাই ২০২৫