সরকার পরিবর্তনের পর বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন ধনকুবের গৌতম আদানি। এর জেরে ভারতীয় পাওয়ার গ্রিডে দ্রুত যুক্ত হতে তোড়জোড় চালাচ্ছে ঝাড়খন্ডে অবস্থিত আদানির কয়লাভিত্তিক ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, বিহারের লক্ষীসরাইয়ের একটি সাবস্টেশনের মাধ্যমে আদানির বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। তবে শর্ত হলো, আদানি পাওয়ার ঝাড়খন্ড লিমিটেডকে (এপিজেএল) ১৩০ কিলোমিটার ট্রান্সমিশন লাইন এবং অতিরিক্ত বে নির্মাণ করার জন্য অর্থ দিতে হবে।
গত ২১ আগস্ট আদানির গোড্ডা প্ল্যান্টের বিদ্যুৎ ভারতের গ্রিডে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে অনুমোদন দেয় ভারতের সেন্ট্রাল ট্রান্সমিশন ইউটিলিটি অব ইন্ডিয়া লিমিটেড (সিটিইউআইএল)। একটি বিশেষ সভায় এই অনুমোদন দেওয়া হয়। ওই সভায় বলা হয়, লক্ষীসরাই সাবস্টেশনের সাথে সংযুক্ত হবে আদানির গোড্ডা প্ল্যান্টের বিদ্যুৎ। এই সংযোগটি চালু করার জন্য আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রকে লক্ষীসরাইতে একটি ৪০০ কিলোভোল্ট (কেভি) ডেডিকেটেড ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণ করতে হবে এবং প্রযুক্তিগত প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে হবে।
বৈঠকে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, লক্ষীসরাই পর্যন্ত ১৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ ট্রান্সমিশন লাইন বাস্তবায়নে যথেষ্ট সময় লাগবে। আর এ জন্য তারা গোড্ডা প্ল্যান্ট থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বাঙ্কারের একটি সাবস্টেশনের মাধ্যমে ভারতীয় গ্রিডে দ্রুত সংযুক্ত হওয়ার জন্য আবেদন করে। তবে এই আবেদন প্রত্যাখ্যান করে সিটিইউআইএল।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সিটিইউআইএলকে সতর্ক করে জানায়, গোড্ডা প্ল্যান্টকে গ্রিডের সাথে সংযুক্ত করলে এই অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ ট্রান্সমিশন অবকাঠামো ওভারলোড হতে পারে।
সিটিইউআইএলও স্বীকার করেছে যে, বিদ্যুৎ সিস্টেমের কিছু অংশ ওভারলোড হয়ে আছে। তবে গোড্ডা থেকে বিদ্যুৎ ওভারলোডের কারণ হবে না। কারণ নেটওয়ার্ককে শক্তিশালী করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ হাই-ভোল্টেজ ট্রান্সমিশন লাইনে আপগ্রেড করার কাজ চলছে।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার জানিয়েছে, তারা আদানির সঙ্গে হওয়া বিদ্যুৎ চুক্তিটি পুনর্বিবেচনা করবে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন, চুক্তির শর্তাদি মূল্যায়ন এবং বিদ্যুতের দাম ন্যায়সঙ্গত কিনা তা নির্ধারণ করতে চুক্তি পর্যালোচনা করা হবে।
আদানি পাওয়ার ইতিমধ্যেই প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বরাবরে চিঠি লিখে তাদের পাওনা ৮০০ মিলিয়ন বা ৮০ কোটি ডলার মিটিয়ে দেওয়ার জন্য তার ‘হস্তক্ষেপ’ চেয়েছে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পুরোপুরি উৎপাদনে যাওয়ার কিছুদিন পরই ২০২৩ সালের জুলাইয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন আদানির চেয়ারম্যান ধনকুবের গৌতম আদানি। তখন এই বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ‘ভারত-বাংলাদেশ সহযোগিতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত’ হিসেবে অভিহিত করা হয়।
ঢাকার পরিস্থিতি জিজ্ঞাসা করা হলে, ‘আদানি পাওয়ারের একজন মুখপাত্র দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, বাংলাদেশ সরকার আমাদের চুক্তি পর্যালোচনা করছে এমন কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। সত্যিকারের অংশীদারিত্বের চেতনায় আমরা বিশাল বকেয়া থাকা সত্ত্বেও তাদের কাছে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালিয়ে যাচ্ছি। তাদেরকে আমরা বকেয়া দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য অনুরোধ করেছি। যাতে আমাদের কার্যক্রম টেকসই থাকে।’
সূত্রঃ রয়টার্স / ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
এম.কে
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪