ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ পরিচয়ে সংঘটিত নির্যাতনের সঙ্গে ইসলামী ছাত্রশিবিরের গুপ্ত সদস্যদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ করেছেন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আবদুল কাদের। রোববার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক দীর্ঘ পোস্টে তিনি একাধিক নাম উল্লেখ করে এই অভিযোগ তোলেন।
তিনি দাবি করেন, হলে অবস্থানরত কিছু ছাত্রশিবির কর্মী আইডেন্টিটি ক্রাইসিস কাটাতে ছাত্রলীগের হয়ে অতি উৎসাহী কর্মকাণ্ডে জড়াত এবং ছাত্রলীগের মতো নিপীড়নের সংস্কৃতি চর্চা করত। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে এরা ছাত্রলীগের হয়ে বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন চালায়।
ফেসবুক পোস্টে আবদুল কাদের ২০১৯-২০ সেশনের শাহরিয়াদকে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত মাজেদুর রহমান, ২০১৭-১৮ সেশনের দপ্তর সম্পাদক মুসাদ্দিক বিল্লাহ, জসীমউদ্দীন হলের আফজালুন নাঈম, মুজিব হলের ইলিয়াস হোসাইনসহ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বর্তমানে শিবিরের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ২০১৭ সালে মুহসীন হলে শিবির সন্দেহে পাঁচ শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত ছিলেন সাবেক ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক শাহাদাত হোসেন, যিনি শিবিরের পরিচিত সদস্য ছিলেন। এ ছাড়াও একাত্তর হলের হাসান সাঈদী ও এফ রহমান হলের তানভীর হাসান শান্তর নামও তার অভিযোগের তালিকায় রয়েছে।
কাদের দাবি করেন, ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে হলে হলে শিবিরের প্রেসক্রিপশনে ব্যাচ প্রতিনিধি ও শৃঙ্খলা কমিটি গঠন করা হয়। এই প্রতিনিধিরা ছাত্রলীগের ভেতরে থেকেও নিজেদের গুপ্ত পরিচয় গোপন রেখে শিবিরের স্বার্থ রক্ষা করে। এমনকি মামলার তালিকা থেকে নিজেদের লোকদের নাম বাদ দেওয়ার জন্য শিবিরের তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সাদিক কায়েম তদবির করেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
সাদিক কায়েমের সঙ্গে কথোপকথনের প্রসঙ্গ টেনে কাদের লেখেন, তিনি একাধিকবার শিবিরের গুপ্ত সদস্যদের বিষয়ে প্রশ্ন তুললেও সাদিক তাদের নাম মামলার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেননি। কাদেরের দাবি, সাঈদীসহ অনেকেই ছাত্রলীগের আমলে অপকর্ম চালিয়ে গেলেও ৫ আগস্টের পর শিবিরের নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
এছাড়া কাদের অভিযোগ করেন, সাঈদী ব্যবসায়ী অপহরণ ও হামলার মামলায় গ্রেপ্তার হলেও অল্প সময়ের মধ্যেই জামিনে মুক্তি পায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতায় সে পরীক্ষায় অংশ নেয় এবং পরে আবার ক্যাম্পাসে সক্রিয় হয়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি ও বর্তমান কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক আবু সাদিক কায়েম বলেন, কাদেরের অভিযোগ সত্য নয়। তিনি দাবি করেন, তিনি কেবল নির্দোষ শিক্ষার্থীদের হয়রানি থেকে রক্ষা করার জন্য খোঁজ নেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন।
কাদেরের দাবি, ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে হলে হলে শিবিরের ছায়া প্রশাসন কার্যক্রম চালিয়েছে। তিনি শিবিরের কাছে বিগত এক যুগের হল কমিটি ও ঢাবি শাখার কমিটি প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে সত্য উদঘাটিত হয়। তার মতে, এই তথ্য প্রকাশ হলেই গুপ্ত শিবিরের প্রকৃত চেহারা সামনে চলে আসবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস রাজনীতিতে ছাত্রলীগ ও শিবিরের গুপ্ত সম্পর্ক নিয়ে আবদুল কাদেরের অভিযোগ নতুন করে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে।
সূত্রঃ স্যোশাল মিডিয়া
এম.কে
০৪ আগস্ট ২০২৫