সিলেটবাসীর প্রাণের দাবি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আধুনিকীকরণ অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। অসম্পূর্ণ নকশাগত সমস্যা এবং নানা অজানা কারণে থমকে আছে ২ হাজার ৩০৯ কোটি টাকার এ বৃহৎ প্রকল্পটি।
সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্প ২৭ আগস্ট ২০২০-এ শুরু হয়েছিল। নকশাগত সমস্যা এবং ডিজাইন পরামর্শকদের দ্বিতীয় চুক্তি অনুযায়ী বকেয়া অর্থ পরিশোধ না করার কারণে প্রকল্পটি বিলম্বের সম্মুখীন।
বেইজিং আরবান কনস্ট্রাকশন গ্রুপ কো. লিমিটেড (বিইউসিজি) কর্তৃক পরিচালিত এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা, পরীক্ষা ও পরামর্শ কেন্দ্র (সিআরটিসি-সিইই, সাস্ট) দ্বারা তদারকি করা এই প্রকল্পটি মূলত ২৭ মে ২০২৩ এর মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। তবে এখন পর্যন্ত প্রকল্পটির অগ্রগতি মাত্র ২২ ভাগ।
ঠিকাদার প্রথমে ২০২০ সালের শেষের দিকে ডিজাইনের ত্রুটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং ২০২১ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কাছে একটি বিস্তৃত ত্রুটি তালিকা জমা দেয়। যদিও ডিজাইন পরামর্শক ইয়োশিনে এবং হেরিম এই সমস্যাগুলো সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তবে তারা শুধুমাত্র যাত্রী টার্মিনাল ভবনের সাব-স্ট্রাকচারের ডিজাইনটি সমাধান করে।
পরবর্তীতে চুক্তিতে থাকা সত্ত্বেও ইউটিলিটি টানেল এবং বাইরের এমইপি ডিজাইনের সমস্যাগুলি ইচ্ছাকৃতভাবে উপেক্ষা করা হয়। সেপ্টেম্বর ২০২৪ সাল পর্যন্ত হিসাব করলে এই নকশাগত সমস্যাগুলি ৪১ মাস ধরে অমীমাংসিত রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, প্রকল্প পরিচালকের চাপের মুখে সিএএবি টানেল এবং বাইরের এমইপি ডিজাইন সমস্যাগুলির সমাধানের জন্য স্থানীয় ডিজাইন পরামর্শক চুক্তিবদ্ধ করে। তবে ডিজাইন পরামর্শকরা তাদের চূড়ান্ত সংশোধিত নকশা চুক্তি অনুযায়ী জমা দেননি, কারণ তাদের অর্থ দ্বিতীয় চুক্তির পরও বকেয়া রয়েছে। যা প্রকল্পের অগ্রগতিতে বড় বাধা সৃষ্টি করছে।
দীর্ঘ সময়ের পরও ডিজাইনজনিত সমস্যাগুলি সমাধান না হওয়া উদ্বেগের বিষয়। অভিযোগ রয়েছে যে এই নকশাগত সমস্যাগুলি সমাধানে ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্ব করা হয়েছে, যাতে ঠিকাদারদের পুনর্বিবেচিত মূল্য সুবিধা প্রদান এবং একটি গোপন আন্তর্জাতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যায়। প্রকল্পটির ধীরগতির পেছনে প্রধান কারণ হলো ডিজাইন পরামর্শকদের অর্থ প্রদান না করা এবং নকশাগত ত্রুটিগুলি সমাধান না হওয়া।
এ ব্যাপারে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক বলেন, প্রকল্পটি পুনরায় সরকারের কাছে যাবে বলে তার ধারনা। প্রকল্পের ব্যয় আরো কমিয়ে আনা হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
অন্যদিকে উন্নয়ন প্রকল্পটির পরিচালক দাবি করেন, প্রকল্পটি চলমান আছে। এর আগে তৎকালীন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী ধীর অগ্রগতির বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন এবং সমস্যাগুলির দ্রুত সমাধানের আহ্বান জানিয়েছিলেন। একইভাবে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এই পরিস্থিতির গুরুত্ব তুলে ধরে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠি লিখেন।
তবে এই দুই প্রভাবশালী সাবেক মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ সত্ত্বেও প্রকল্পে কোনো ইতিবাচক অগ্রগতি হয়নি, যা উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়াও সদ্য সাবেক বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী ফারুক খান প্রকল্প কর্তৃপক্ষকে সকল সমস্যা সমাধানের জন্য এবং কাজের গতি বাড়ানোর জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দেন, কিন্তু ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।
অনেকে মনে করেন, প্রকল্পটিকে ইচ্ছাকৃতভাবে বাঁধাগ্রস্ত করার পেছনে একটি গোপন শক্তি কাজ করছে। এই পরিস্থিতি জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছে, কারণ প্রকল্পটি ক্রমাগত বিলম্ব এবং অমীমাংসিত সমস্যায় জর্জরিত হচ্ছে। যদিও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তবে এখন পর্যন্ত ডিজাইন পরামর্শক বা অন্য কোনো দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
উপরন্তু যাত্রী টার্মিনাল ভবন এবং কার্গো টার্মিনাল ভবনের কলামের রড দীর্ঘ সময় ধরে বালির নিচে রয়েছে, যা ভবনগুলোর দীর্ঘমেয়াদী স্থায়িত্বের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যদি আসন্ন শুষ্ক মৌসুমটি কাজে লাগানো না যায়, তবে প্রকল্পটি আরও এক বছরের জন্য বিলম্বিত হতে পারে। প্রকল্পের শুরুতে ঠিকাদারকে ২১৩ কোটি টাকা অগ্রিম প্রদান করা হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত সম্পন্ন কাজের ব্যয় প্রায় ১০০ কোটি টাকা।
এম.কে
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪