নানা কারণে কার্যাদেশ সংকটে রয়েছে দেশের পোশাকখাত। কাজ না থাকায় বন্ধ হচ্ছে গার্মেন্টস। বেকার হয়ে পড়ছেন শ্রমিকরা।
কাজ না থাকার পাশাপাশি শ্রমিক অসন্তোষের কারণে ঈদের পর বন্ধ হয়ে যায় আশুলিয়ার ডি কে নিটওয়্যার। একই কারণে বন্ধ হয় গাজীপুরে অবস্থিত ক্রসলাইন ফ্যাক্টরি। আর ঈদের আগে ডি কে নিটওয়্যার কোম্পানিতে শমিক অসন্তোষ দানা বাঁধে। এমডির কক্ষ ভাঙচুর করা হয়। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটি গত ২ মে থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানা সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ঈদের আগে বেশকিছু দাবি-দাওয়া নিয়ে কারখানাগুলোতে শ্রমিকরা আন্দোলন করেন। এমনকি ভাঙচুরও করেন তারা। একে তো অর্ডার নেই, অন্যদিকে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিতে সমস্যা হলে আন্দোলন। এসব কারণে কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘ঈদের পর দুটি কারখানা বন্ধ হয়েছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে কারখানাগুলোতে পর্যাপ্ত কার্যাদেশ নেই। এটাই মূল কারণ। আরেকটি কারণ শ্রমিক অসন্তোষ।’
তিনি আরও বলেন, ‘কয়েক দিনের মধ্যে আরও কয়েকটি কারখানা বন্ধ হবে। তার মধ্যে নারায়ণগঞ্জের একটি কারখানা রয়েছে। সেখানেও শ্রমিক অসন্তোষ ছিল।’
নতুন করে অর্ডার না পাওয়ায় কারখানা বন্ধ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিজিএমইএ সহ-সভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম। তিনি দাবি করেন, গত তিন মাস ধরে নতুন করে অর্ডার নেই। এ কারণে কারখানা বন্ধ করে দিচ্ছেন মালিকরা।
তিনি বলেন, ‘এখন অর্ডার অনেক কম। অর্ডার সংকটের কারণে এবারের ঈদে ১২ দিন পর্যন্ত ছুটি দেওয়া হয়। আগে ঈদে যেখানে তিন দিন ছুটি দেওয়া যেত না, দম বের হয়ে যেত; সেখানে এবার ১২ দিন ছুটি, ভাবা যায়।’
বাংলাদেশ শিল্প পুলিশের তথ্য মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ অর্থাৎ প্রথম তিন মাসে দেশের মোট ৯৭টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। এগুলো বন্ধ হওয়ার কারণে ২০ হাজার ২৭৬ শ্রমিক চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছেন। বন্ধ হওয়া কারখানাগুলোর মধ্যে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত ১৭টি কারখানায় ছয় হাজার ৬৪৭ শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন। বিকেএমইএর সাত কারখানায় এক হাজার ৪৮৬ জন, বিটিএমইএর তিন কারখানায় দুই হাজার ৮৭ জন, বেপজা’র দুই কারখানায় দুই হাজার ৪৫ জন এবং অন্যান্য ৬৮টি কারখানায় আরও আট হাজার ৩২ শ্রমিক বেকার হয়েছেন।
এপ্রিলে খুলনা ও সিলেট এলাকার আরও ১৮৯টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। বেকার হয়েছেন হাজার হাজার শ্রমিক। সবমিলিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে প্রায় ৩০০ কারখানা বন্ধ হয়েছে। এসব কারখানায় কর্মরত ২৫ থেকে ৩০ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন, বলছেন সংশ্লিষ্টরা।