মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সাথে লেজেগোবরে অবস্থা জান্তা বাহিনীর। এরই মধ্যেই কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গারা বলছেন, ‘লড়াইয়ের জন্য সেনাবাহিনীতে যোগ দিলে নাগরিকত্ব দিবে-জান্তা সরকারের এমন প্রস্তাবে রাজি তারা। পাশাপাশি স্বদেশে ফিরে আরাকানকেও রক্ষা করতে চায় রোহিঙ্গারা।’
রাখাইনে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সাথে তুমুল লড়াইয়ে ব্যস্ত দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি ও জান্তা বাহিনী।
প্রতিদিনই গুলি ও মর্টারশেলের গোলা বর্ষণের ঘটনা ঘটছে। আর আরাকান আর্মির সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে একের পর এক ঘাঁটি হারাচ্ছে বিজিপি ও দেশটির সেনাবাহিনী। বিদ্রোহীদের সাথে যুদ্ধে না পেরে লেজেগোবরে অবস্থা জান্তা বাহিনীর। এ অবস্থায় রোহিঙ্গাদের বিশেষ টোপ দিয়েছে জান্তা সরকার। বলা হচ্ছে, যারা সেনাবাহিনীতে যোগ দিবে তাদেরকে মিয়ানমারের নাগরিকত্ব দেয়া হবে।
বিশেষ এই টোপে স্বদেশে ফিরতে রাজি আশ্রিত রোহিঙ্গারা। তারা বলছেন, নাগরিকত্ব দিলে যুদ্ধের মধ্যেই স্বদেশে ফিরতে চান তারা।
উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প-১ এফ ১৭ ব্লকের বাসিন্দা মোহাম্মদ রশিদ বলেন, ‘মিয়ানমার সরকার যদি রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়, সরকারি কাজে নিয়োজিত করে তাহলে আমরা প্রস্তুত আছি। আমরা স্বদেশে চলে যেতে চাই।’
একই ক্যাম্পের রফিক বলেন, ‘আমরা নাগরিকত্ব চাই, এটা দিলে আমরা অবশ্যই চলে যাবো।’
ক্যাম্প-১-এর বাসিন্দা মোহাম্মদ আলম বলেন, ‘যুদ্ধের মধ্যে যদি আমাদেরকে মিয়ানমার সরকার নাগরিকত্ব দেয় তাহলে আমরা যুদ্ধের মধ্যেও স্বদেশে যেতে রাজি। মিয়ানমার আমাদের জন্মস্থান। স্বদেশের মায়ায় চলে যাবো।’
কুতুপালং লম্বাশিয়া ক্যাম্পের বাসিন্দা আনোয়ার সাদেক বলেন, ‘আমাদের তো অবশ্যই স্বদেশ মিয়ানমারে চলে যেতে হবে। আমাদেরকে যদি পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কাজে নিয়োজিত করে, অবশ্যই আমাদের দেশে চলে যাবো, জিহাদ করে হলেও চলে যাবো।’
এদিকে, কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রায় ১৩ লাখের মতো রোহিঙ্গা বসবাস করছে। তাদের প্রত্যাবাসনে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করা হলেও মিয়ানমারের অনীহায় তা সম্ভব হয়নি।
রোহিঙ্গা নেতার দাবি, মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব এবং স্বীকৃতি দিলে দেশে ফিরে আরাকান রক্ষা করবেন তারা।
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জোবাইর বলেন, ‘মিয়ানমার কেড়ে নিয়েছে অধিকার, কেড়ে নিয়েছে নাগরিকত্ব। এখন যদি এগুলো ফেরত দিয়ে সংসদে বিশ্ববাসীকে জানায়, তাহলে আমাদের আরাকানে আমরা এখন চলে যাবো। আমরা এখনো প্রস্তুত চলে যাবার জন্য। অবশ্যই আরাকান আমাদের, আরাকানকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। এটা যুদ্ধ করে হলেও।’
এদিকে মিয়ানমারের চলমান সংঘাতে ক্যাম্পে নিরাপত্তা জোরদার করেছে এপিবিএন। বাড়ানো হয়েছে চেকপোস্টও।
উখিয়ার ৮ এপিবিএনের অধিনায়ক মো: আমির জাফর বলেন, ‘মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘাত চলছে। তাই ক্যাম্পে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ক্যাম্পের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’
১১ নম্বর ক্যাম্পের রোহিঙ্গা সোলতান আহমেদ বলেন, ‘গত ১০ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের সামরিক জান্তা ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী সব নারী-পুরুষকে সামরিক বাহিনীতে যোগদান বাধ্যতামূলক করে। এরপরই রোহিঙ্গা পুরুষদের সামরিক বাহিনীতে যুক্ত করার কার্যক্রম শুরু করে জান্তা। এরইমধ্যে ৪০০ জনকে প্রশিক্ষণের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’
আরেক রোহিঙ্গা যুবক ইয়াসিন বলেন, ‘ক্যাম্প থেকে আমার বেশ কয়েকজন বন্ধু মিয়ানমারে যুদ্ধ করতে ইতোমধ্যেই চলে গিয়েছে।’
এম.কে
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪