বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা, আনন্দ শোভাযাত্রা থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা। বাঙালির পহেলা বৈশাখ উদ্যাপনের অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে এটি।
এবার পহেলা বৈশাখের শোভাযাত্রায় অন্যতম প্রতীক হবে ফ্যাসিবাদের বলে জানিয়েছে সংষ্কৃতি মন্ত্রণালয়। যেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি মুখাবয়বের দুপাশে থাকবে শিংয়ের মতো। জুলাই বিপ্লবের প্রতীক হিসাবে মুগ্ধর পানি লাগবে বোতলটি পাবে ১৫ ফিট উচ্চতার আদল। তার ভেতরে আরও অনেক পানির বোতল থাকবে শহিদদের স্মরণে।
জুলাই বিপ্লবের পর প্রথমবারের মতো পহেলা বৈশাখ উদযাপিত হবে এবার।
সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী সাম্প্রতিক সময়ে ‘মঙ্গল’ শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন হতে পারে এমন ইঙ্গিত দেন। পরে ২৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভা শেষে তিনি জানান, মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন নাও হতে পারে।
এদিকে মঙ্গল শোভাযাত্রার নামের পরিবর্তন হতে পারে কিনা জানতে চাইলে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আজহারুল ইসলাম চঞ্চল বলেন, আলোচনা চলছে বিশ্লেষণ চলছে। পরিবর্তন হতে পারে। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট থেকে কিভাবে শোভাযাত্রাটি শুরু হয়েছে তার আদ্যোপান্ত বিশ্লেষণ নিয়ে আলোচনা চলছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক কমিটিগুলো কাজ করছে। পাঁচটি উপ-কমিটি হয়েছে। ৯টি ওয়ার্কিং কমিটি। খুব শিগগিরই আলোচনা করে বোঝা যাবে কোন দিকে যাচ্ছে। সিদ্ধান্ত আসবে।
এই বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, ধারাবাহিকভাবে যেটি চলে এসেছে সেটি থাকতে পারে। তবে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় চাইলে বাঙালির ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতিকে ঠিক রেখে নামের পরিবর্তন করতেও পারে।
এদিকে রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় সরেজমিন দেখা যায়, মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি চলমান আছে। নানা প্রতীক তৈরির কাজ চলছে। ভাস্কর্য বিভাগের প্রাক্তনী দীপক রঞ্জন সরকার বলেন, শিক্ষক-ছাত্র-প্রাক্তনী সবাই মিলে এবার কাজ করছেন। শোভাযাত্রার সামনে মূল বিষয় হচ্ছে ‘ফ্যাসিবাদী প্রতিকৃতি’। হাসিনার ফ্যাসিবাদী মুখাবয়ব থাকবে মিছিলের সামনে। থাকবে জাতীয় পশু বাঘ। আর মেলায় কাঠের যে বাঘ পাওয়া যায় লোকজ মোটিভের আদলে সে ধরনের একটি বাঘ থাকবে। থাকবে লোকজ মোটিভের কবুতর, পালকি।
জুলাই আন্দোলনের প্রতীক মুগ্ধর পানির বোতল থাকবে। রড দিয়ে ১৫ ফুটের এই পানির বোতল তৈরি হচ্ছে। বোতলটির ভেতরে আবার অনেক বোতল রাখা থাকবে। আন্দোলনের সময় যে প্রাণগুলো হারিয়ে গেছে, শহিদ হয়েছে খালি বোতলগুলো তাদের প্রতীক।
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী খুবই সংস্কৃতিবোধসম্পন্ন। তারা প্রকৃতি ও পাহাড়ের জীবনের আবহকে ধারণ করে। একত্রিত হয়ে যে আমরা বসবাস করি তা এবার প্রকাশ হবে আবার। তারা র্যালির সামনের দিকেই থাকবে। তাদের নিজস্ব ঐতিহ্যের নানা বিষয় নিয়ে সামনে আসবে। তাদের সামনে রেখেই শোভাযাত্রা এগিয়ে যেতে পারে।
জানা গেছে, এবার শোভাযাত্রা চারুকলা, শাহবাগ, টিএসসি হয়ে শহিদ মিনারের দিকে যাবে। দোয়েল চত্বর, বাংলা একাডেমি হয়ে আবার চারুকলায় এসে শেষ হবে। কিংবা শাহবাগ দিয়ে বের হয়ে হাইকোর্ট হয়ে শিশু একাডেমি হয়ে দোয়েল চত্বর থেকে বাংলা একাডেমি হয়ে আবার চারুকলায় এসে শেষ হতে পারে। এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে শিগগিরই।
সূত্রঃ যুগান্তর
এম.কে
০৭ এপ্রিল ২০২৫