মুক্তমত: প্রায় এক কোটি ঘণফুট পাথর অবৈধভাবে উত্তোলন করায় সিলেটের প্রশাসন সেগুলো বাজেয়াপ্ত করে উন্মুক্ত অকশনে বিক্রির উদ্যোগ নেয়ায় সিলেটের জেলা প্রশাসককে অভিনন্দন জানিয়েছিলাম।
আমরা প্রশাসনের সবসময় সমালোচনা করি, প্রশংসা করিনা এমন অভিযোগ কানে আসায় পাথর নিয়ে চলা নজিরবিহীন দুর্বৃত্ত্বপণার মধ্যে এই বাজেয়াপ্তকরণ ও অকশন উদ্যোগ প্রশংসাযোগ্য ভেবেই তা করেছি। কিন্তু জানতে পারলাম বাজেয়াপ্ত করা সেই পাথরের কয়েক লক্ষ ঘনফুট পাথর প্রায় ৭০টি পাথরবাহী বাল্কহেড জাহাজে করে পাচার করা হচ্ছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসনের বাহবা কুড়ানো সেই পাথর কিভাবে কানাইঘাট অতিক্রম করলো? তবে কি পাথর সিন্ডিকেটের সাথে সমঝোতা হয়ে গেছে? নাকি, পাথর বাজেয়াপ্ত করাটা অবৈধ ছিল? পাথর ব্যাবসায়ীরা সব সময় নিজেদের কর্মকান্ডকে বৈধ বলে। এই ক্ষেত্রেও ওরা দাবি করছে বাজেয়াপ্ত হওয়া পাথর তাদের বৈধভাবে উত্তোলন করা সম্পদ। তাদের দাবি যদি সঠিক হয় তবে পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন কোন কারণে তা বাজেয়াপ্ত করে কয়েক দফার অকশন নাটকে গেলেন?
পাথর ব্যাবসায়ের সাথে জড়িত কিছু অসাধু ব্যক্তি সিলেটের ভূ-প্রকৃতিকে ধ্বংস করে একেকটি কোয়ারি থেকে প্রতি বছর হাজার কোটি টাকা লুট করছে। আর সেই লুটের ভাগ ধাপে ধাপে উপরমহলের নানান পদ-পদবীতে নজরানা হিসাবে জমা পড়ে।
সম্প্রতি দেশের উপরমহলের উপর মহল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পাথর উত্তোলনের নামে প্রকৃতি ধ্বংসের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে শক্তহাতে পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলেছেন, এমন তথ্য শুনেছিলাম। বিভিন্ন প্রকার অভিযানের তথ্যে শোনা কথাকে বিশ্বাসযোগ্যও মনে হয়েছিল কিন্তু লোভাছড়ার এই বাজেয়াপ্ত করা পাথর পাচারের সংবাদ এবং এই নিয়ে নানা ফিসফাস আমাদের ভাবাচ্ছে।
সিলেটের পাথর লুট রুখতে শুধু পরিবেশবাদী ও হাতেগোনা মিডিয়া যথেষ্ঠ নয়। সবাইকে কথা বলতে হবে। এই কাজ শুধু পরিবেশের ক্ষতি করছে না, আমাদের সমাজ-রাজনীতি নষ্ট করছে। পাথরের টাকার লোভে পড়ে অনেক মানুষ ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
লেখক: আবদুল করিম কিম (কলামিস্ট, পরিবেশবাদী)
[এই কলামের মতামত লেখকের নিজের,টিভিথ্রি কর্তৃপক্ষ এরজন্য দায়বদ্ধ নয়]
২১ আগস্ট ২০২০