টেবিলে খাবার, সঙ্গে আনুষ্ঠানিকতা ও পদ-উপাধির বেড়াজালমুক্ত বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ—এভাবেই প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে রাষ্ট্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।
‘মঙ্গলবারের মধ্যাহ্নভোজ’ নামে পরিচিত এ ভোজ প্রতি মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত হয়। এটি জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ইস্যুর সমাধানের জন্য একটি কার্যকর মিলনস্থল হিসেবে কাজ করে বলে জানিয়েছেন একাধিক উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের কর্মকর্তারা।
উপদেষ্টা পরিষদের সভার এজেন্ডাগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো প্রায়শই এসব সভার এজেন্ডায় থাকে না। ফলে অনেকের মনে প্রশ্ন উঠেছে, এসব সিদ্ধান্ত কোথা থেকে আসছে।
আসলে এ সিদ্ধান্তগুলো প্রতি মঙ্গলবার এক অনানুষ্ঠানিক পরিবেশে নেওয়া হয়, যেখানে খাবারের সময় অনানুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা করে উপদেষ্টারা বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছান। এতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর হয় এবং সিদ্ধান্ত দ্রুত নেওয়া সম্ভব হয়।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘সব আলোচনাই অনানুষ্ঠানিক। প্রধান উপদেষ্টা সমস্যাগুলোর বিষয়ে একটি পরিষ্কার ধারণা অর্জন করেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন।’
সরকারের নিয়মিত অধিবেশন যেখানে শ্রেণিবিন্যাস কাঠামো ও আনুষ্ঠানিক কার্যধারাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়, সেখানে মঙ্গলবারের মধ্যাহ্নভোজগুলো ভিন্নভাবে কাজ করে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
বৃহস্পতিবারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকগুলোতে পূর্বনির্ধারিত এজেন্ডায় আলোকপাত করা হলেও মঙ্গলবারের মধ্যাহ্নভোজে প্রধান উপদেষ্টা এবং আমন্ত্রিত উপদেষ্টারা স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ ও উন্মুক্ত পরিবেশে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেন।
‘এখানে সিনিয়র ও জুনিয়র কর্মকর্তাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকে না। খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়,’ বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর নতুন এ ব্যবস্থার সূচনা হয়েছে।
এ মধ্যাহ্নভোজে নিয়মিত অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে রয়েছেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
এসব বৈঠকের তাৎপর্য সম্পর্কে জানতে চাইলে উপদেষ্টা আহমেদ বলেন, ‘আমরা এ মধ্যাহ্নভোজে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করি।’
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, প্রধান উপদেষ্টা যেসব বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন তার ভিত্তিতে উপদেষ্টাদের ব্যক্তিগতভাবে আমন্ত্রণ জানান।
‘এটা সব উপদেষ্টাদের জন্য উন্মুক্ত কোনো আমন্ত্রণ নয়। শুধু প্রাসঙ্গিক আলোচনায় যারা জড়িত তাদেরকেই দাওয়াত দেওয়া হয়,’ তিনি জানান।
এদিকে, বিদ্যুৎ, সড়ক ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এ বৈঠকের প্রকৃতি সম্পর্কে বিস্তারিত মন্তব্য করতে রাজি হননি।
একজন উপদেষ্টার ব্যক্তিগত সহকারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তার উপদেষ্টা নিয়মিত মঙ্গলবারের মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন।
‘সকল গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা এবং সিদ্ধান্ত এ মধ্যাহ্নভোজের সময়ই নেওয়া হয়। মধ্যাহ্নভোজ থেকে ফিরে উপদেষ্টারা তাদের সচিবদের বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দেন,’ তিনি জানান।
আগের সরকারপ্রধানেরাও মন্ত্রীদের নির্দেশনা দিতে ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তলব করতেন। এসব আলোচনা সাধারণত আনুষ্ঠানিক বৈঠকে হতো এবং প্রায়ই খাবার পরিবেশন করা হতো আলোচনা শেষে।
তবে, সেগুলো সম্পূর্ণরূপে আনুষ্ঠানিক বৈঠক ছিল। এসব আলোচনায় আগে থেকে নোটিশ জারি করা হতো এবং পূর্বনির্ধারিত এজেন্ডা অনুসরণ করা হতো।
এম.কে
১২ অক্টোবর ২০২৪