4.4 C
London
December 23, 2024
TV3 BANGLA
আরো

প্লাস্টিক ধ্বংসকারী এনজাইম আবিষ্কার, পোশাকের বর্জ্য নিয়ে আর ভাবনা নয়

গবেষক সিন্তাবি সুলেমান জাপানের ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগারে কাজ শুরু করেন ২০১০ সালে। সহকর্মীদের কাজ ছিল বিভিন্ন ধরনের এনজাইম খুঁজে বের করা। আর তিনি সেগুলো নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতেন অথবা রূপান্তর করতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে একটি পার্কে পচতে থাকা পাতার মধ্যে একটি এনজাইম পেয়েছিলেন তারা। এনজাইমটির নাম এলসিসি—লিফ–ব্রাঞ্চ কম্পোস্ট কিউটিনেজ।

একধরনের অণুজীব এই এলসিসি এনজাইম নিঃসরণ করে। পাতার মোমজাতীয় প্রলেপকে বিশ্লেষিত করতে সাহায্য করে এই এনজাইম। প্লাস্টিক পচাতেও এই এনজাইম ব্যবহার করা যেতে পারে বলে আশা করছেন সুলেমান।

এক বিকেলে সুলেমান তার হেডফোনের প্লাস্টিকের কিছু অংশ কেটে পানিতে এলসিসির কিছু নমুনার সঙ্গে রেখে দেন। পরদিন সকালে দেখেন প্লাস্টিকটির অনেকখানিই বদলে গেছে।

সুলেমান বলেন, ‘প্লাস্টিকের ওই অংশে বেশ কয়েকটি ফুটো ছিল বা কিছু অংশ ক্ষয়ে গিয়েছিল। আমি তা দেখে চমকে যাই।’ ওই প্লাস্টিক ছিল পিইটি পলিমার।

প্রকৃতিতে সব জায়গাতেই পলিমার পাওয়া যায়। এর সবচেয়ে পরিচিত একটি উদাহরণ হলো সেলুলোজ। এটি গাছ ও উদ্ভিদের গাঠনিক উপাদান।

অণুজীবের মধ্যেকার এনজাইম রূপান্তরিত হয়ে এসব পলিমারের রাসায়নিক বন্ধন ছিন্ন করতে পারে। এর কারণে অণুজীবগুলো জৈব পদার্থকে জৈবিকভাবে বিশ্লেষিত করতে পারে।

তবে এ ধরনের এনজাইম প্লাস্টিকের সংস্পর্শে এসেছে মাত্র কয়েক দশক আগে। এ কারণে পলিমার জাতীয় পদার্থ বিশ্লেষিত করার মতো রূপান্তর না ঘটার কারণে এসব পলিমার দীর্ঘদিন প্রকৃতিতে অক্ষত অবস্থায় থাকে। দুই দশক ধরে বিজ্ঞানীরা এনজাইমের বিবর্তনে সহায়তা করার জন্য নতুন এক উপায়ের খোঁজ পেয়েছেন।

ফ্রান্সে টুলুজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক আলাইন মার্টি ও তার সহকর্মীরা এ বিষয়ের ওপর কাজ করছেন।

গত আট বছরে তারা এলসিসির গাঠনিক বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে একে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ‘পিইটি বিশেষজ্ঞে’ পরিণত করেন। এলসিসির বর্তমান নাম এলসিসিআইসিসিজি।

এনজাইমটি এখন এতটাই কার্যকর যে এটি পিইটি পলিমারকে সম্পূর্ণরূপে ভেঙে মনোমারে পরিণত করতে পারে। এ মনোমার দিয়ে নতুন প্লাস্টিক তৈরি সম্ভব। অধ্যাপক মার্টি এটিকে মুক্তার মালা ছিন্ন করার মতো ঘটনা বলে বর্ণনা করেছেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা এমন এক ধরনের এনজাইম ব্যবহার করছি, যাকে বলা যেতে পারে আণবিক কাঁচি। আমরা মুক্তার মধ্যেকার সংযোগ ছিন্ন করে প্রতিটি মুক্তা আলাদা করতে পারি। মুক্তাগুলোকে বিশুদ্ধ করার পর আমরা আবার এ মুক্তা ব্যবহার করতে পারি।’

আলাইন মার্টি বর্তমানে জৈব-রসায়নভিত্তিক প্রতিষ্ঠান কার্বিওসের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা। এ প্রতিষ্ঠানের মধ্য ফ্রান্সের ক্লেরমন্ট–ফেরান্ডে একটি ডেমোনস্ট্রেশন প্ল্যান্ট আছে। এটি অ্যালকোহল তৈরির একটি ক্ষুদ্র ভাটির মতো।

সবচেয়ে বড় যন্ত্রটি পলিস্টারসমৃদ্ধ কাপড়কে প্রক্রিয়াজাত করে। পলিস্টার একধরনের পিইটি প্লাস্টিক। বিশ্বের প্রায় অর্ধেক কাপড়ের সুতা তৈরিতেই এ প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়। উন্নয়নশীল বিশ্বে ব্যবহার শেষে এ ধরনের কাপড় পুড়িয়ে ফেলা হয় বা ভাগাড়ে পাঠানো হয়।

তবে ক্লেরমন্ট-ফেরান্ডের বিশাল এ যন্ত্রের মাধ্যমে কাপড়গুলোর একটি পরিণতি দেওয়া সম্ভব। বোতাম ও সিকুয়েন্স খুলে ফেলে এগুলোকে টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়। এরপর এগুলোকে আরও এক যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষুদ্র প্যালেটে পরিণত করা হয়। প্লাস্টিকের বোতলের টুকরোও সে একই যন্ত্রের মধ্যে দিয়ে যায় এবং একই আকার দেওয়া হয়। এ প্রক্রিয়ায় পদার্থটির পৃষ্ঠতল সম্প্রসারিত হয় এবং প্লাস্টিকের মধ্যকার আণবিক বন্ধন দুর্বল হয়ে পড়ে।

কার্যক্রম বাড়াতে এবার ২০২৫ সাল নাগাদ ফ্রান্সের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কারখানা নির্মাণ করতে যাচ্ছে কোম্পানিটি। এর মাধ্যমে এক বছরে ৫০ হাজার টন পিইটি বর্জ্য পুনর্ব্যবহারের উপযোগী করা যাবে, যা ৩০ কোটি টি–শার্ট বা দুই শ কোটি প্লাস্টিক বোতলের সমান।

কার্বিওসের উদ্দেশ্য পুনর্ব্যবহারের বস্তু তৈরি নয়। তবে কোম্পানিটি অন্য কোম্পানিকে এ প্রক্রিয়ার লাইসেন্স দিতে পারে। অর্থাৎ প্রক্রিয়াটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কোম্পানিটি নেসলে, ল’রিয়েল ও পেপসিকোর মতো বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করছে।

এম.কে
০৪ ডিসেম্বর ২০২৩

আরো পড়ুন

ইফতারের উচ্ছিষ্ট দিয়ে তৈরি হচ্ছে সার!

নিউজ ডেস্ক

পেশা মামলাবাজি, জিতেছেন ৮৭ কোটি টাকা!

হোম অফিসকে যেভাবে আনন্দময় করে তুলতে পারবেন

অনলাইন ডেস্ক