যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব হোম অফিসের একটি ভুল সিদ্ধান্তের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন বলে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যায়। একজন শিক্ষার্থীর স্টুডেন্ট ভিসার আবেদন নিয়ে গুরুতর ত্রুটির সৃষ্টি হয়। একজন ফিলিস্তিনি শরণার্থীকে অনিরাপদ ও অযোগ্য ঘোষণা করে ভিসা রিফিউজ করে হোম অফিস।
খবরে জানা যায়, লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স (এলএসই)’তে পিএইচডি করার জন্য পূর্ণ বৃত্তি পাওয়ার পরেও হোম অফিস সেই শিক্ষার্থীর স্টুডেন্ট ভিসা রিফিউজ করে দেয়। শিক্ষার্থীর নাম আমেনা এল আশকর, যিনি নিজেকে রাষ্ট্রহীন ফিলিস্তিনি হিসাবে পরিচয় দিয়েছিলেন। মর্যাদাপূর্ণ শেভেনিং স্কলারশিপ পাওয়ার পরও ভিসা রিফিউজ নিয়ে শুরু হয়েছে সমালোচনা।
যুক্তরাজ্যের উচ্চ আদালতে আপার ট্রাইব্যুনালের একটি রায়ে, হোম অফিসকে দূর্বল ও গুরুতরভাবে ত্রুটিযুক্ত ভিসা হ্যান্ডেলিংয়ের জন্য ভর্ৎসনা করা হয়।
বিচারক হোম অফিস কর্তৃক ভিসা রিফিউজ করার পিছনে অপেশাদারিত্ব ও ইচ্ছাকৃত ভুলকে দায়ী করেন। হোম অফিসকে দায়ী করার সাথে সাথে এইকথাও বলা হয় তৎকালীন স্বরাষ্ট্র সচিব সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান কর্তৃক গৃহীত ভিসা প্রত্যাখ্যানকে প্রত্যয়িত করা হয়েছিল। তাছাড়া শিক্ষার্থী আমেনা এল আশকরকেও ভিসা রিফিউজের কথা যথাসময়ে অবহিত করা হয় নাই। তাছাড়া হোম অফিস কর্তৃক আইনী চ্যালেঞ্জকে ভুলভাবে আদালতে সামনে উপস্থিত করা হয়।
লেবাননের একটি ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরে জন্মগ্রহণ ও বেড়ে ওঠা আশকর বলেন, ” আমার জীবন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে তা আমি অনুভব করতে পারছি। স্বরাষ্ট্র সচিব ব্র্যাভারম্যান ব্যক্তিগতভাবে আমার ভিসা রিফিউজালের সিদ্ধান্তটি প্রত্যয়িত করেছেন তা শোনার পর আমি বুঝতে পারি আমার সাথে অন্যায় আচরণ করা হচ্ছে। একজন ফিলিস্তিনি হিসাবে আমি হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। আমাকে কেন অনিরাপদ ভাবা হচ্ছে সেটা ছিল আমার হৃদয় ভেঙ্গে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। একজন ফিলিস্তিনি কি মানুষ নন,কোনো সঠিক কারণ ছাড়া ভিসা রিফিউজ করা মনে হয় চপোটাঘাতের মতো।”
আমেনা এল আশকর ২০১৯ সালে স্কুল অফ ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ (এসওএএস) এ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করার পর ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে শেভেনিং বৃত্তির জন্য মনোনিত হন।
আশকর লেবাননে ফিরে এসে ২০২২ সালের আগস্টে এলএসইতে পিএইচডি করার জন্য স্টুডেন্ট ভিসার আবেদন করেন। কিন্তু হোম অফিস এই কারণেই আবেদনটি প্রত্যাখ্যান করে যে আমনা এল আশকর যুক্তরাজ্যের জন্য নিরাপদ ব্যক্তি নন। তার যুক্তরাজ্যে উপস্থিতি ইউকের জনসাধারণের জন্য উপযুক্ত নয় বলে হোম অফিস মত প্রকাশ করে।
একাডেমিক ও বিচারিক পর্যালোচনার পর হোম অফিসের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়। তাছাড়া তদন্তে বের হয় যে সাবেক স্বরাষ্ট্রসচিব ব্র্যাভারম্যান ভিসা প্রত্যাখ্যানকে প্রত্যয়িত করেছিলেন।
এই বিষয়ে হোম অফিসের মন্তব্য জানতে চাইলে একজন মুখপাত্র বলেন, ” এটি দীর্ঘদিনের হোম অফিসের নীতি যে আমরা পৃথক মামলায় নিয়ে মন্তব্য করতে অপারগ”।
উল্লেখ্য যে, আমেনা আশকর এখন কাতারে গবেষণা সহকারী হিসাবে কাজ করছেন, তিনি জানান,” আমি সত্যিই আশা করি আমি দ্রুত ভিসা পেয়ে এলএসইতে যাব, আমি কেবল আমার পিএইচডি শুরু করতে চাই। আমি জানতে চাই কেন এটি ঘটল? আমি সেই বৃত্তি অর্জন করেছি, আমি সেই অবস্থান অর্জন করেছি। তাই ন্যায়সঙ্গতভাবে ভিসা পাওয়া আমার অধিকার।”
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪