TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

ফ্রান্স চ্যানেলে নৌকা আটকানোর প্রতিশ্রুতি থেকে সরে যাচ্ছেঃ যুক্তরাজ্যের উদ্বেগ বাড়ছে

ফ্রান্স ইংলিশ চ্যানেলে ছোট নৌকা ঠেকাতে আরও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা থেকে ধীরে ধীরে সরে আসছে বলে জানিয়েছে একাধিক ফরাসি ও ব্রিটিশ সূত্র। বিবিসির অনুসন্ধানে জানা গেছে, ফ্রান্সের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা এই পরিবর্তনের অন্যতম কারণ, যা যুক্তরাজ্যের সরকারের জন্য বড় ধাক্কা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

উত্তর ফ্রান্সের উপকূল থেকে, বিশেষ করে ডানকার্কের কাছাকাছি খালগুলো থেকে, প্রতিদিন বিপজ্জনকভাবে অতিরিক্ত যাত্রী বহনকারী রাবারের নৌকা যাত্রা করছে। যুক্তরাজ্যের সীমান্ত নিরাপত্তা প্রধান মার্টিন হিউইট ইতোমধ্যে ফরাসি বিলম্ব নিয়ে “হতাশা” প্রকাশ করেছেন। এখন ফরাসি সূত্রগুলো বলছে, যে “নতুন সামুদ্রিক নীতি”র মাধ্যমে টহল নৌকা সাগরে গিয়ে ছোট নৌকাগুলো আটকাবে ও উপকূলে ফিরিয়ে আনবে—সেটি বাস্তবে কেবল “রাজনৈতিক বুলি” হয়ে আছে।

চ্যানেল অঞ্চলের সামুদ্রিক প্রশাসন বিবিসিকে জানিয়েছে, এই নতুন নীতিমালা এখনো “পর্যালোচনার অধীনে” রয়েছে। ফরাসি সামুদ্রিক নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত এক কর্মকর্তা একে সরাসরি “রাজনৈতিক নাটক” হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রেতাইয়োর নেতৃত্বে ফ্রান্স চ্যানেলে আগ্রাসী অবস্থান নিয়েছিল, যা গত বছর জুলাইয়ে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারের বৈঠকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে আলোচিত হয়। ওই সময়ে “ট্যাক্সি নৌকা”—পাচারকারীদের দ্বারা পরিচালিত রাবারের ছোট নৌকা—আটকাতে সমুদ্রপথে অভিযান চালানোর পরিকল্পনা হয়।

তবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু হওয়ার আগেই রেতাইয়ো মন্ত্রিত্ব হারান, এবং সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্যে ফরাসি সরকার মনোযোগ হারায়। অক্সফোর্ড মাইগ্রেশন অবজারভেটরির গবেষক পিটার ওয়ালশ মনে করেন, “এই নতুন সামুদ্রিক ব্যবস্থা হয়তো আর কখনো কার্যকরই হবে না।”

চ্যানেল উপকূলে পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ হচ্ছে। গ্রাভলিন এলাকার এক অবসরপ্রাপ্ত ব্যবসায়ী জানান, তিনি একদিনে চারটি নৌকা যাত্রা করতে দেখেছেন। বিবিসিকে দেখানো তার ভিডিওতে দেখা যায়, খালের মাঝপথে মানুষজন নৌকায় উঠছে, অথচ কাছেই থাকা পুলিশ টহল নৌকা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তিনি বলেন, “পুরোটাই বিশৃঙ্খলা। এই নৌকাগুলো থামাতে হবে।”

এক ফরাসি সামুদ্রিক বিশেষজ্ঞ জানান, ওই খালগুলো এত অগভীর যে নিরাপত্তা বাহিনী চাইলে ঝুঁকি ছাড়াই সেখানে অভিযান চালাতে পারে। কিন্তু আইনগত জটিলতা, মানবিক আশঙ্কা এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনীর দায়ের ভয়ে পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে না। অনেক কর্মকর্তা আশঙ্কা করছেন, সমুদ্রে নৌকা আটকাতে গিয়ে মৃত্যু ঘটলে তাদেরকেই আইনি জবাবদিহিতে পড়তে হবে।

ফরাসি নৌবাহিনীও সমুদ্রপথে অভিযান চালানোর বিপক্ষে। এক সূত্র বলেছে, “এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক মিশন। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে কর্মকর্তাদের আদালতে দাঁড়াতে হবে—পুরো বিষয়টি ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।” এমনকি সৈকত থেকে আরও গভীরে গিয়ে নৌকা ঠেকানোর যে প্রস্তাব ব্রিটিশ কর্মকর্তারা তুলেছিলেন, সেটিও ফরাসি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রত্যাখ্যান করেছে।

বর্তমান নিয়মে ফরাসি পুলিশ ও দমকল বাহিনী কেবল অগভীর পানিতে যেতে পারে, তাও তখনই যখন কেউ সরাসরি বিপদের মুখে থাকে। জুলাই মাসে বোলোনের কাছের এক সৈকতে ঠিক এমন এক উদ্ধার অভিযান দেখা গেছে, যেখানে কর্মকর্তারা ডুবে যাওয়া আশঙ্কায় থাকা অভিবাসীদের সাহায্য করেছেন, কিন্তু নৌকা আটকাননি।

ফরাসি পুলিশের ইউনিয়ন বলছে, নতুন পরিকল্পনাগুলো “অতিরিক্ত ঝুঁকিপূর্ণ” বলে স্থগিত রাখা হয়েছে। মুখপাত্র জ্যাঁ-পিয়ের ক্লোয়েজ জানান, “বর্তমান নিয়ম অপরিবর্তিত আছে, আমরা যেভাবে কাজ করি তা-ও একই রয়ে গেছে।” সরঞ্জাম, প্রশিক্ষণ ও কর্মীর ঘাটতি এখনো বড় সমস্যা বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তবে ফ্রান্স উপকূলে টহল ও পাচারচক্র দমন পুরোপুরি বন্ধ করেনি। এখনো ১৫০ কিলোমিটার উপকূলজুড়ে জটিল অভিযানের মাধ্যমে পাচারকারীদের ঠেকানোর চেষ্টা চলছে। এই কার্যক্রমের উল্লেখযোগ্য অর্থায়ন করছে যুক্তরাজ্য, স্যান্ডহার্স্ট চুক্তির আওতায়, যা আগামী বছর নবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে।

ফ্রান্সের স্বেচ্ছাসেবী উদ্ধারকর্মীরা প্রতিদিন সমুদ্র থেকে মানুষ ও মৃতদেহ উদ্ধার করছেন। তবে তাঁদের অনেকেই হতাশ, কারণ সামুদ্রিক কর্তৃপক্ষ বারবার তাদেরকে নৌকাগুলোকে নিরাপদে ব্রিটিশ জলসীমায় পৌঁছে দিতে বলছে—যা ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নেয় এবং কখনো কখনো বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।

বুলোন সি-রেসকিউ সংগঠনের প্রধান জেরার বারোঁ বলেন, “যদি তারা সাহায্য না চায়, আপনি জোর করে উদ্ধার করতে পারবেন না।” তিনি জানান, তার দল কয়েকবার নৌকার কাছে গেলে যাত্রীরা ছুরি দেখিয়েছে কিংবা শিশুদের পানি ওপরে ধরে হুমকি দিয়েছে।

৪৫ বছরের উদ্ধার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বারোঁ বলেন, “যদি ফ্রান্স বিদ্যমান আইন অনুযায়ী অস্থিতিশীল, অনুমতিবিহীন ও অতিরিক্ত বোঝাই নৌকা সমুদ্রে যেতে না দিত, তবে বহু প্রাণ বাঁচানো যেত।”

সূত্রঃ বিবিসি

এম.কে

আরো পড়ুন

ইংল্যান্ডে এসাইলাম আশ্রয়প্রার্থীদের হোটেল থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে

স্বেচ্ছামৃত্যুর বিলে সমর্থন যুক্তরাজ্যে, আইন হতে পারে শিগগিরই

গ্রাহকদের নিকট হতে অতিরিক্ত চার্জ আদায়ের জন্য ক্ষতিপূরণের মুখে ব্রিটিশ টেলিকম