বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের মধ্যে লন্ডনসহ যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় কোটি কোটি টাকার বিলাসবহুল প্রপার্টি কেনাবেচার ঘটনা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, আওয়ামীলীগের সাবেক মন্ত্রী বা ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি ও শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাজ্যে যেসব প্রপার্টির মালিক, সেগুলোর একাংশ বর্তমানে বিক্রি, হস্তান্তর অথবা মর্টগেজের আওতায় চলে গেছে। এদের অনেকেই দুর্নীতি দমন কমিশন (ACC) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত তালিকায় রয়েছেন।
জাতীয় অপরাধ সংস্থা (NCA) ইতিমধ্যে দুইটি আলোচিত পরিবারের বিপুল সম্পদ ফ্রিজ করেছে। মে মাসে ফ্রিজ করা হয় রহমান পরিবারের £৯০ মিলিয়ন মূল্যের সম্পদ এবং জুনে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর £১৭০ মিলিয়ন মূল্যের সম্পদ।
বসুন্ধরা গ্রুপের মালিক সোবহান পরিবারের লন্ডনের নাইটসব্রিজ এলাকার একটি বাড়ি প্রথমে একটি দুবাইভিত্তিক কোম্পানি থেকে ব্রিটিশ কোম্পানির নামে স্থানান্তর করা হয় এবং পরে সেটি £৭.৩৫ মিলিয়নে এক রহস্যজনক ক্রেতার কাছে বিক্রি হয়।
পরিবারটির সদস্য শফিয়াত সোবহানের নামে ভার্জিনিয়া ওয়াটারে £৮ মিলিয়ন মূল্যের একটি সম্পত্তি সম্প্রতি অন্য কোম্পানির নামে হস্তান্তর করা হয়েছে। যদিও সোবহান পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা সম্পূর্ণভাবে আইনের মধ্যে থেকেই এসব লেনদেন করেছেন।
গার্ডিয়ানের অনুসন্ধানে আরও দেখা গেছে, হাইকোর্টে কর্মরত একজন সিনিয়র আইনজীবী যিনি শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত, তিনি তার কোম্পানির মালিকানাধীন একাধিক সম্পত্তি সম্প্রতি অন্য কোম্পানির নামে হস্তান্তর করেছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান মনসুর এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন যুক্তরাজ্য সরকারকে এসব সম্পত্তি অবিলম্বে ফ্রিজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের বক্তব্য, তদন্ত চলাকালে সম্পত্তি হস্তান্তর বা বিক্রি হতে থাকলে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
এদিকে ব্রিটিশ এমপি জো পাওয়েল মন্তব্য করেছেন, “এই প্রপার্টিগুলো বাংলাদেশের জনগণের টাকা দিয়ে কেনা হয়ে থাকলে, তা ফেরত পাঠানো উচিত।”
যুক্তরাজ্যে আওয়ামীলীগের ঘনিষ্ঠজনদের বিভিন্ন লেনদেনে যুক্ত ছিল ব্রিটেনের নামকরা আইন সংস্থা Jaswal Johnston এবং Merali Beedle। যদিও গার্ডিয়ানের প্রশ্নে তারা বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হয়নি।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, এই ধরনের কোম্পানিগুলোকে অবশ্যই জানাতে হবে যদি কোনো লেনদেন সন্দেহজনক হয় এবং তৎক্ষণাৎ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে রিপোর্ট করতে হবে।
বর্তমানে লন্ডনের বিলাসবহুল প্রপার্টিগুলো হয়ে উঠেছে বাংলাদেশে দীর্ঘদিনের দুর্নীতির একটি আন্তর্জাতিক আলামত। এই সম্পদ লেনদেন শুধু ন্যায়বিচার ব্যাহত করছে না, বরং প্রশ্ন তুলছে যুক্তরাজ্যের সম্পদ ব্যবস্থাপনার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিয়েও।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
২০ জুলাই ২০২৫