ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ সরকারের মন্ত্রীদের দ্বারা চাপের মুখে পড়েছে। ব্রিটিশ সরকারের মন্ত্রীদের দাবি তারা জানতে চান বাংলাদেশের দূর্নীতিবাজ সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সাথে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন এস্টেট এজেন্ট, প্রপার্টি সলিসিটর ও লোন প্রদানকারী সংস্থার কি কোনো অবৈধ ও অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে? ব্রিটিশ সাংসদ ও বিভিন্ন মন্ত্রীদের দাবি তারা সম্পূর্ণ বিষয়ের সুষ্ঠু তদন্ত চান। তারা আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের সাবেক মন্ত্রীর সাথে যে কারো কোনো অনৈতিক ও নিয়মবহির্ভূত সুবিধা প্রদান আইনের আলোকে বিশ্লেষণ করার জন্য। বর্তমান লেবার সরকারকে বাংলাদেশ সরকারের সাবেক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও তারা আহ্বান জানিয়েছেন।
সাইফুজ্জামান চৌধুরী এই বছরের শুরুর দিকে বাংলাদেশের ভূমি মন্ত্রী ছিলেন। যখন শেখ হাসিনার সরকার দূর্নীতির কারণে ক্ষমতা ছেড়ে পলায়ন করতে বাধ্য হয় তখন শেখ হাসিনা সরকারের ভূমিমন্ত্রী যুক্তরাজ্যে এসে বসবাস শুরু করেন। শেখ হাসিনার সরকার ছাত্র-জনতার প্রতিরোধের মুখে টিকতে না পেরে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয় বলে তথ্যমতে জানা যায়।
সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বাংলাদেশের সকল ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছে বর্তমান বাংলাদেশ সরকার। পদচ্যুত সরকারের বেশিরভাগ সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। যারা নিজেদের দেশের টাকা অন্যায়ভাবে অন্যদেশে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগের মুখে পড়েছেন। সাইফুজ্জামান চৌধুরী তাদের মধ্যে অন্যতম।
সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সাবেক এক আইনজীবী জানান, তার ক্লায়েন্টের “লুকানোর মতো কিছুই নেই”। তাছাড়া রাজনীতিতে প্রবেশের আগেই তার বহু সম্পদ অর্জিত হয়। চৌধুরীর ইউকে রিয়েল এস্টেট পোর্টফোলিওতে আনুমানিক ২০০ মিলিয়ন মূল্যমানের ২৫০ টিরও বেশি সম্পত্তি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এখন দুর্নীতি দমন সম্পর্কিত সর্ব-দলীয় সংসদীয় গোষ্ঠী (অ্যাপিজি), এইচএমআরসি, অর্থ বিষয়ক কর্তৃপক্ষ (এফডিসিএ) এবং সলিসিটারস রেগুলেশন অথরিটি (এসআরএ)সহ সকল আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে বাংলাদেশের সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সম্পত্তি কেনা এবং এই সকল বিষয়ক সকল ডিল পূণঃতদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন রাজনীতিবিদেরা।
দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে জানা যায়, লেবার সাংসদ ফিল ব্রিকেল তিনটি নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানকে আহ্বান জানিয়েছেন মি: চৌধুরীর সকল লেনদেনের সাথে জড়িত সংস্থাগুলির কাগজপত্র ঘেঁটে দেখার জন্য। তাছাড়া মিঃ চৌধুরীর সম্পদ এবং তহবিলের উৎস সম্পর্কেও পর্যাপ্ত পর্যালোচনা দাবি করেন তিনি।
যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনকে বিশ্বের দুর্নীতিবিরোধী রাজধানী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে যুক্তরাজ্যের রাজনীতিবিদেরা কাজ করে যাচ্ছেন কিন্তু মিঃ চৌধুরী নিয়ে আল-জাজিরার রিপোর্ট পুরো বিশ্বের কাছে লন্ডনকে প্রশ্নের সম্মুখে ফেলে দিয়েছে। যার কারণে শক্তিশালী তদন্তের প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেছেন লেবার সরকারের একজন মুখপাত্র।
জো পাওয়েল এমপি বলেন, বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন ও দায়িত্বশীল বিভাগ কি কি সাহায্য চায় সে ব্যাপারে যুক্তরাজ্য সরকারের সহায়তা করা প্রয়োজন। অ্যাপজির সদস্যরা বাংলাদেশ সরকারের কর্তৃপক্ষকে কিভাবে তদন্তে সহযোগিতা করবে তা নিয়েও আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর গত মাসে ফিনান্সিয়াল টাইমসকে জানিয়েছিলেন যে তিনি যুক্তরাজ্যের সহায়তা চান। তিনি তথ্য দিয়ে বলেন, হাসিনা সরকারের সদস্যরা শুধু লন্ডনেই ১৩ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ সরিয়ে নিয়েছে কিনা তা তদন্ত করা উচিত।
এসআরএর একজন মুখপাত্র জানান, ” আমরা মানিলন্ডারিং বিধিমালার সম্ভাব্য লঙ্ঘনের বিষয় অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নেই। যদি আমরা খুঁজে পাই কোনো সংস্থা নিয়ম বহির্ভূতভাবে সাইফুজ্জামান চৌধুরীকে সহায়তা করেছে তাহলে আমরা অবশ্যই পদক্ষেপ নেব।”
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
২৩ অক্টোবর ২০২৪