5.2 C
London
November 15, 2024
TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্নীতি ডিনামাইটের চেয়েও ধ্বংসাত্মকঃ অ্যাটর্নি জেনারেল

অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, দুর্নীতির প্রচলিত ধারণায় অর্থনৈতিক লেনদেনকে বোঝালেও, বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্নীতি ডিনামাইটের চেয়েও ধ্বংসাত্মক, অ্যাটম বোমার চেয়েও ভয়াবহ, ক্যানসারের চেয়েও মরণঘাতী। আপনার পূর্বসূরিদের সেই মরণঘাতী দুর্নীতির কারণে দেশ আজ গণতন্ত্রহীন, মানুষ অধিকারহীন, গণমাধ্যমের কণ্ঠরুদ্ধ। ওই সব মরণঘাতী বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্নীতির কারণে এই অঙ্গনে মেধাবী আইনজীবীরা অনেকেই শুরুতেই ঝরে যায়। ফুটে উঠে দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতির কিছু বিবেকহীন আইনজীবী। যার ফলে ভালো আইনজীবী তৈরি হতে অসুবিধা হচ্ছে। ভালো আইনজীবী না পেলে ভালো বিচারক, ভালো বিচারাঙ্গন আমরা প্রত্যাশা করতে পারি না।

আজ সোমবার আপিল বিভাগের এক নম্বর এজলাস কক্ষে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে দেওয়া সংবর্ধনায় এসব কথা বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

তিনি প্রধান বিচারপতির উদ্দেশ্যে বলেন, ‘দ্বিতীয় মুক্তিসংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত এক স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রথম প্রধান বিচারপতি আপনি। আপনাকে মহামান্য রাষ্ট্রপতিই শুধু পছন্দ করে নিয়োগ প্রদান করেননি, আপনার নিয়োগের পেছনে রয়েছে এ দেশের শত শত নিরীহ ছাত্রের বুকের তাজা রক্তে ভেজা রাজপথের কালজয়ী অমর কাব্যের এক বীরত্ব গাঁথা উপাখ্যান। পৃথিবীর ইতিহাসে এ ঘটনা বিরল। বিপ্লবোত্তর যে কোনো দেশে রাজপথ কিংবা রণাঙ্গন ঠিক করে দেয় সে দেশের নেতা কে হবে। আর আমাদের দেশের বীর ছাত্ররা, তাদের পাশে থাকা অভিভাবকেরা, তাদের শুভাকাঙ্ক্ষীরা রাজপথ থেকে আপনাকে প্রধান বিচারপতি করার দাবি তুলেছিল। এ ভালোবাসা বিরল, এ ভালোবাসা অমূল্য, এ ভালোবাসা নিয়ে গর্ব করতেই পারি, তাই না?’

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বিগত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া অনেকগুলো গুম হওয়া মানুষের আত্মা, অসংখ্য মানুষের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার বেদনা, অগণিত মানুষের নির্যাতন-নিপীড়নের গল্প, অনেক মৃত মানুষের গায়েবি মামলায় আসামি হওয়ার অভিশাপ, অনেক পরিবারের নিঃস্ব হওয়ার হাহাকার থেকে উৎসারিত প্রতিবাদের ভাষা থেকে প্রতিরোধে রূপ নেওয়ার অন্য অবয়ব আজকের বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশে খুন-গুম-নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার সেই সব আত্মা, সেই সব মানুষ আজ ন্যায় বিচারের প্রতীক্ষায় আছে।

তিনি বলেন, ‘আপনার দিকে তাকিয়ে থাকা গোটা দেশবাসীর মতো আমিও আশা করি আপনি তাদের বিমুখ করবেন না। এই দেশকে, এই দেশের সংবিধানকে, এ দেশের মানুষের অধিকার রক্ষার্থে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সংবিধানের অভিভাবক হিসেবে আপনার নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের অভিভাবকত্ব প্রকাশ পাক এটা আবু সাঈদ-মুগ্ধ-ফারাজসহ শত শহীদের প্রত্যাশা ছিল। তাদের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের অন্তর্নিহিত কারণ ছিল। আশা করি আপনার নেতৃত্বে সবার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে।’

সিন্ডিকেটের কথা উল্লেখ করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘গোটা জাতি প্রত্যাশা করে, বিচার বিভাগ সিন্ডিকেট মুক্ত হোক। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের ভেতর শুদ্ধি অভিযান করে সব ধরনের দুর্নীতি নির্মূল করার প্রত্যাশা রাখছি। অনেক আইনজীবীর মতো আমিও প্রত্যাশা করি আমাদের সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগ সম্পর্কে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, রূপসা থেকে পাথরিয়া, সমতল থেকে পাহাড়-সমুদ্র পর্যন্ত এই ধারণা না পৌঁছাক যে, কোনো আদালতে গেলে কোনো আইনজীবী সুবিধা পাবে। বিগত দেড় দশকের বেশি সময় ধরে কারাগার, ব্যবসা পাড়া, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডিতেও একটি ধারণা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে যে, সরকারি দলের সংশ্লিষ্টতা থাকলে বিচারকদের নিকট থেকে আনুকূল্য পাওয়া যায়। এটা আর ধারণার পর্যায়ে নেই, এটি আজ বিচার বিভাগ ধ্বংসের এক নির্মম বাস্তবতা।’

এম.কে
১২ আগস্ট ২০২৪

আরো পড়ুন

একজন ব্রিটিশ বাংলাদেশী এমাদ মোস্তাক

বিশ্বের সবচেয়ে দুর্বল পাসপোর্টের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অষ্টম

ময়লা হতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সিদ্ধান্ত সিলেটে