ব্রিটেনে যুব কর্মসংস্থানের সূচক ক্রমেই অবনতি করছে, যা এক পুরো প্রজন্মের ভবিষ্যতকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। হিসাবরক্ষণ প্রতিষ্ঠান PwC–এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশের অর্থনীতি বছরে ২৬ বিলিয়ন পাউন্ড পর্যন্ত ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে কারণ কিছু অঞ্চলে তরুণদের কর্মসংস্থান নেই।
PwC–এর বার্ষিক ইয়ুথ এমপ্লয়মেন্ট ইনডেক্স অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যের যুব কর্মসংস্থান হার গত এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে, যখন অন্যান্য উন্নত দেশ তুলনামূলকভাবে অগ্রগতি করছে। OECD–এর ৩৮টি দেশের মধ্যে যুক্তরাজ্য এক বছরে চার ধাপ নেমে ২৭তম স্থানে পৌঁছেছে, যেখানে মেক্সিকো, ফ্রান্স ও এস্তোনিয়া পিছনে পড়েছে।
সরকারের উদ্বেগ বাড়ছে, কারণ ১৬–২৪ বছর বয়সী প্রায় দশ লাখ তরুণ বর্তমানে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ বা কাজের কোনো সুযোগ পাচ্ছে না (Neet)। লেবার সরকার এই সংকট মোকাবিলায় নতুন নীতি গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে “ইয়ুথ গ্যারান্টি”, ১৮ থেকে ২১ বছর বয়সী দীর্ঘমেয়াদি ইউনিভার্সাল ক্রেডিট প্রাপ্তদের জন্য ছয় মাসের বেতনসহ কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা।
কর্ম ও পেনশন মন্ত্রী প্যাট ম্যাকফ্যাডেন ঘোষণা করেছেন, ৩ লাখ ৫০ হাজার নতুন প্রশিক্ষণ ও চাকরির সুযোগ তৈরি করা হবে।
অন্যদিকে ব্যবসায়িক নেতারা বলছেন, কর বৃদ্ধি, ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধিসহ নতুন কর্মসংস্থান আইন তরুণদের নিয়োগ ব্যয় বাড়াচ্ছে, যার ফলে তারা চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের ডেপুটি গভর্নর ক্লেয়ার লোম্বারডেলি বলেন, “যুক্তরাজ্যের যুবদের জন্য চিত্র মোটেও সুখকর নয়।”
সরকারি পরিসংখ্যানও উদ্বেগজনক। যুব বেকারত্ব এক বছরে ১৪.৮% থেকে বেড়ে ১৫.৩% হয়েছে, যা কোভিড–পরবর্তী সময় ছাড়া সর্বোচ্চ। দীর্ঘমেয়াদি যুব বেকারত্বও এক দশকের সর্বোচ্চ পর্যায়ে। গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, লেবার সরকারের সময় কোম্পানির পেরোল থেকে হারানো চাকরির প্রায় অর্ধেকই ২৫ বছরের কম বয়সী তরুণদের।
PwC জানাচ্ছে, যদি যেসব অঞ্চলে Neet হার বেশি সেখানে অবস্থার উন্নতি হয়, তাহলে জিডিপিতে ১৩ বিলিয়ন থেকে ২৬ বিলিয়ন পাউন্ড পর্যন্ত যোগ হতে পারে। বিশেষ করে লন্ডন ও স্কটল্যান্ডে সবচেয়ে বড় সম্ভাবনা রয়েছে, কারণ এখানে ১৬–২৪ বছর বয়সী তরুণদের ১৫% থেকে ১৬% কাজ বা শিক্ষায় নেই।
PwC UK–এর সিনিয়র পার্টনার মারকো অ্যামিত্রানো বলেন, “এক প্রজন্মের ভবিষ্যৎ ঝুঁকির মধ্যে, যা দেশের উৎপাদনশীলতা ও সমৃদ্ধির জন্যও বিপজ্জনক। যুক্তরাজ্যের যুব কর্মসংস্থানের পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য এখনই সময়।”
সরকারের পক্ষ থেকে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা হয়েছিল, তবে কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে

