21.1 C
London
June 14, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

বেসরকারি স্কুলে ভ্যাট আরোপঃ হাইকোর্টে হারলো অভিভাবক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো

যুক্তরাজ্যের হাইকোর্ট বেসরকারি স্কুল ফিতে ২০% ভ্যাট আরোপের বিরুদ্ধে আনা একাধিক আইনি চ্যালেঞ্জ খারিজ করে দিয়েছে। আদালত এই সিদ্ধান্তকে ব্রেক্সিট-পরবর্তী যুক্তরাজ্যের স্বাধীন নীতিনির্ধারণের একটি ‘উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।

এই ভ্যাট আরোপ লেবার পার্টির ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের ইশতেহারে উল্লেখ ছিল এবং ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়। সরকার জানায়, নতুন রাজস্ব ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত ৬,৫০০ শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে।

তিন বিচারক—ডেম ভিক্টোরিয়া শার্প, লর্ড জাস্টিস গাই নিউই ও মিস্টার জাস্টিস চেম্বারলেইন—এক যৌথ রায়ে অভিভাবক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে আনা ধর্মীয় স্বাধীনতা, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের অধিকার ও অভিভাবকের পছন্দের অধিকারের ভিত্তিতে আনা চ্যালেঞ্জ খারিজ করে দেন।

আদালত জানায়, “এই ভ্যাট ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য থাকাকালে সম্ভব হতো না। এই ক্ষেত্রে স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, ইউকে ইইউ ছাড়ার মাধ্যমে তার নীতিনির্ধারণের স্বাধীনতা বৃদ্ধি পেয়েছে।”

অভিভাবকদের পক্ষ থেকে যুক্তি দেওয়া হয় যে, তাদের শিশুদের বিশেষ শিক্ষার প্রয়োজন রয়েছে, যা রাষ্ট্রীয় স্কুলগুলোতে সহজলভ্য নয়। আদালত এই বিষয়ে বলেন, “এই অভিভাবকদের অভিজ্ঞতা যেমন কষ্টদায়ক, তেমনি এটা প্রমাণ করে যে, বর্তমানে রাষ্ট্রীয় খাতে থাকা ১১ লক্ষেরও বেশি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরাও সমস্যায় ভুগছে।”

মানবাধিকার প্রসঙ্গে আদালত রায়ে বলেন, ইউরোপীয় মানবাধিকার সনদ শুধুমাত্র রাষ্ট্র পরিচালিত শিক্ষাব্যবস্থায় প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করে; এটি বেসরকারি শিক্ষা গ্রহণে রাষ্ট্রীয় সহায়তা পাওয়ার অধিকার দেয় না, যদি তা ধর্মীয় কারণে হয়ে থাকে তারপরেও।

আইনজীবী রবার্ট লুইস এই রায়কে প্রত্যাশিত বলে উল্লেখ করেন। তার ভাষ্য, “এই মামলা একটি গণতান্ত্রিকভাবে পাস হওয়া নীতি উল্টে দেওয়ার চেষ্টা করছিল।” তবে তিনি বলেন, আদালতের রায়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণও রয়েছে: “যুক্তরাজ্যে প্রাইভেট স্কুল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হলে তা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল হতে পারে।”

ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্কুল কাউন্সিলের (ISC) প্রধান নির্বাহী জুলি রবিনসন বলেন, “এই কর শিক্ষার ওপর একটি নজিরবিহীন আঘাত। আদালতের রায় ও পরবর্তী পদক্ষেপ আমরা গুরুত্ব সহকারে পর্যালোচনা করছি। আমাদের লক্ষ্য থাকবে শিক্ষার্থী, পরিবার ও বিদ্যালয়গুলোকে সহায়তা করা এবং সরকারের কাছে এই সিদ্ধান্তের বিরূপ প্রভাব নিয়ে জবাবদিহি চাওয়া।”

একইসঙ্গে, খ্রিস্টান লিগ্যাল সেন্টার জানিয়েছে, তারা সেই অভিভাবকদের সহায়তা করবে যারা বলছেন, এই ভ্যাট তাদের খ্রিস্টান শিক্ষার অধিকারকে লঙ্ঘন করছে এবং তারা আপিল করবেন।

বর্ডার ও নিরাপত্তা মন্ত্রী বলেন, “সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে সুবিচার প্রতিষ্ঠা ও সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে এই পদক্ষেপ নিয়েছে।” সরকারের ভাষ্যে, এই ভ্যাটের রাজস্ব রাষ্ট্রীয় স্কুল ব্যবস্থার মান উন্নয়নে ব্যবহার করা হবে, যাতে সব শ্রেণির শিশু সুষ্ঠু শিক্ষার অধিকার পায়।

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে
১৪ জুন ২০২৫

আরো পড়ুন

যুক্তরাজ্যে খুচরা দোকানে সংঘটিত অপরাধ বাড়ছেঃ ব্রিটিশ রিটেইল কনসোর্টিয়াম

অর্থনৈতিক দৈন্যতা নিয়ে বাড়ছে যুক্তরাজ্য জনগণের অসন্তোষ

নিক ক্লেগকে গোপন তথ্য সরবরাহ করছেন সরকারি কর্মকর্তা!