11.1 C
London
November 5, 2024
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)শীর্ষ খবর

ব্রিটেনে কৃষি শ্রমিকদের শোষণে জড়িত সরকার: টিবিআইজে

ব্রিটিশ সরকার দেশটির শ্রম পরিদর্শন প্রতিবেদনে নথিভুক্ত ব্যাপক শোষণ এবং অন্যায্য নিয়োগ পদ্ধতির অভিযোগ তদন্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে৷ শুধু তাই নয় সেই তথ্য আড়াল রাখার চেষ্টাও করেছে বলে দাবি করেছে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা ব্যুরো টিবিআইজে। ২২ অক্টোবর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন দাবি করেছে সাংবাদিকদের সংগঠনটি৷

টিবিআইজে ২০২১ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে পরিচালিত ১৯টি খামারে সরকারি প্রতিবেদনে পর্যালোচনা করেছে৷

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্য সরকারের শ্রম পরিদর্শন দপ্তরকে সাক্ষাৎকার দেয়া ৮৪৫জন মৌসুমী কৃষি কর্মীদের মধ্যে ৪৪ শতাংশ ব্যক্তি দুর্ব্যবহার, বৈষম্য, মজুরি চুরি এবং নিজ দেশ ফেরত পাঠানোর হুমকি পাওয়ার দাবি করেছেন৷ এসব ব্যক্তিদের সবাই সিজনাল বা মৌসুমী ভিসার অধীনে ব্রিটেনে এসে কাজে যুক্ত হয়েছেন৷

যুক্তরাজ্যে কৃষিমন্ত্রী মার্ক স্পেন্সার সম্প্রতি এ বিষয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটির বিপরীত চিত্র উঠে এসছে খামার পরিদর্শনের সরকারি প্রতিবেদনে৷

কৃষিমন্ত্রী মার্ক স্পেন্সার দাবি করেছিলেন, “মৌসুমী ভিসা প্রকল্পের অধীনে কাজ করা লোকেরা খুব ভালভাবে কাজ করছেন এবং নিয়োগকর্তারা নিশ্চিত করেছেন চাহিদা পূরণ হয়েছে৷ মৌসুমি ভিসা ছাড়াও আরও, দুটি ভিসা স্কিম অপারেটররা হাউস অব লর্ডসকে জানিয়েছে তাদের মাত্র এক শতাংশ কর্মী অভিযোগ করেছেন৷’’

অপরদিকে টিবিআইজে বলছে, সরকারি পরিদর্শনের সময় অভিবাসী শ্রমিকদের উত্থাপিত অভিযোগগুলোর একটিও হোম অফিস বা ভিসা স্কিম অপারেটররা তদন্ত করেনি৷ সরকারের স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রধান পরিদর্শকের সীমানা ও অভিবাসন বিষয়ক প্রতিবেদন অনুসারে এমন দাবি করেছে টিবিআইজে৷

অভিবাসী অধিকার লঙ্ঘনের তদন্ত নিয়ে কাজ করছে এনজিও ফেয়ার স্কয়ার৷ অলাভজনক এই সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা সহ-পরিচালক নিকোলাস ম্যাকগিহান বলেন, যুক্তরাজ্য সরকারের নিষ্ক্রিয়তা ভয়াবহ কিন্তু আশ্চর্যজনক নয়৷

ম্যাকগিহান বলেন, “একদিকে আপনি ছোট নৌকায় পারাপার নিয়ে চিৎকার করে বলছেন শরণার্থীরা অপরাধ করছে৷ অন্যদিকে, তারা এদেশে কাজের ভিসায় আসছে তাদেরকেও রক্ষা করছেন না৷’’

তিনি আরও যোগ করেন, “সরকারের মৌসুমী অভিবাসী কর্মীদের প্রয়োজন। ফলে তাদের নিয়োগ দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের রক্ষা করাও সরকারের দায়িত্ব৷ এটা কোনো রকেট সায়েন্স নয়৷’’

টিবিআইজে তাদের তদন্তে জানিয়েছে, সরকারি পরিদর্শকের প্রতিবেদনের সঙ্গে অভিবাসী কর্মীদের সাক্ষাৎকার সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল৷

বলিভিয়া থেকে আসা ২৩ বছর বয়সি অভিবাসী শ্রমিক জুলিয়া কুয়েকানো ক্যাসিমিরো টিবিআইজে-কে বলেন, তিনি বহু বছর ধরে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ চিলির কৃষি খামারে কাজ করেছেন৷ কিন্তু তিনি যুক্তরাজ্যে কাজ করতে আসার আগে কখনও ধমক, বৈষম্য বা মজুরি কর্তনের মুখোমুখি হননি৷

একজন নিয়োগককর্তা ক্যাসিমিরোকে বলেছিলেন, তিনি মৌসুমী কর্মী ভিসা চুক্তির অধীনে খামারে ফল বাছাই ও সংগ্রহের কাজ করে সপ্তাহে ৫০০ পাউন্ড পর্যন্ত উপার্জন করতে পারবেন৷ ক্যাসিমিরো অভিযোগ করেন, ব্রিটেনের আসার পর প্রথম সপ্তাহে তাকে কোনো কাজ দেয়া হয়নি এবং পরের সপ্তাহে তিনি ১৫০ পাউন্ডেরও কম উপার্জন করেছেন।

অনেক খামারে শ্রমিকেরা তাদের অস্থায়ী থাকার জায়গায় গোসলের স্থান ও টয়লেট নেই বলে জানিয়েছেন৷ অনেকেই তাদের বিছানায় ইঁদুর, তেলাপোকা ও ছারপোকা থাকার কথা জানিয়েছেন৷

টিবিআইজে জানায়, ভিসা স্কিম অপারেটরদের নিশ্চিত করতে হবে যে শ্রমিকেরা সঠিকভাবে বেতন পাচ্ছেন, তাদের সঙ্গে ন্যায্য আচরণ করা হচ্ছে এবং তাদেরকে উপযুক্ত স্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখা হচ্ছে কিনা৷

শ্রম পরিদর্শকদের কাছে কর্মীরা অসংখ্য অভিযোগ উত্থাপন করা সত্ত্বেও সরকারি লাইসেন্সপ্রাপ্ত স্কিম অপারেটরদের কারো লাইসেন্স বাতিল ও জরিমানা করা হয়নি। তবে কিছু অপারেটরদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে যাদের শ্রমিকরা ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও যুক্তরাজ্যে থেকে গিয়েছিলেন৷

ক্যাসিমিরো আনুমানিক ৯০ জন অভিবাসীর মধ্যে একজন যারা যুক্তরাজ্যে তাদের বিমান ভাড়া এবং প্রথম ছয় সপ্তাহের আবাসনের জন্য সপ্তাহ প্রতি ২৫০ পাউন্ড কর্তনের বিরুদ্ধে অনানুষ্ঠানিক ধর্মঘট ও কর্মবিরতি পালন করেছিলেন৷

এটি যুক্তরাজ্য সরকারের মৌসুমী কর্মী প্রকল্প চালুর পর অভিবাসীদের মাধ্যমে সংগঠিত প্রথম কোনো ধর্মঘট।

২০২১ সালের একটি সরকারি সমীক্ষা অনুসারে, যুক্তরাজ্যের কৃষি খাত যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে প্রায় ১৩০ বিলিয়ন পাউন্ড যোগ করে এবং চার লাখ ৬৭ হাজার লোকের চাকরিতে ভূমিকা রাখে৷

শেফিল্ড ইউনিভার্সিটির একটি সমীক্ষা অনুসারে, প্রতি বছর আনুমানিক ৭০ হাজার অভিবাসী শ্রমিক কৃষিকাজের চাকা চলমান রাখে৷ ব্রিটেনের প্রায় ৯৯ শতাংশ মৌসুমী শ্রমিক বাইরের দেশ থেকে আছেন৷

ব্রেক্সিটের কারণে শ্রমিক ঘাটতি আরও খারাপ হয়ে উঠলে ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত মৌসুমী ভিসা দ্রুত প্রসারিত হয়৷ ২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যে দুই হাজার ৫০০ মৌসুমী কর্মী ভিসা ইস্যু করা হয়৷ চলতি বছর ইতিমধ্যে এই সংখ্যা ৫৫ হাজার অতিক্রম করেছে৷ উপরন্তু, হোম অফিস ভিসা ফি ৫০ পাউন্ড থেকে বাড়িয়ে ২৯৮ পাউন্ড করেছে৷

যুক্তরাজ্য জুড়ে ব্রেক্সিট এবং ইউক্রেনের যুদ্ধের জটিল প্রভাবের কারণে কৃষি খাতে ব্যাপক শ্রমিক ঘাটতি চলছে৷ ব্রেক্সিটের কারণে বুলগেরিয়া এবং রোমানিয়ার মতো কম সমৃদ্ধ পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলো থেকে মৌসুমী অভিবাসী নিয়োগের পথ কমিয়ে দিয়েছে৷

সূত্রঃ টিবিআইজে

এম.কে
০৯ নভেম্বর ২০২৩

 

আরো পড়ুন

ভুয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি নিয়েছেন মমতাজ

অনলাইন ডেস্ক

২০২৫ সাল থেকে যুক্তরাজ্য ভ্রমণে লাগবে ই-ভিসা

বাংলাদেশ থেকে নির্মাণ শ্রমিক নিতে আগ্রহী স্কটল্যান্ড