ব্রিটেনের শহুরে হাই স্ট্রিটগুলো এখন ভয়াবহভাবে বিদেশি গ্যাং চক্রের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে। সরকারি একাধিক তদন্তে উঠে এসেছে, মিনি-মার্কেট ও ফাস্ট ফুড দোকানগুলো নকল সিগারেট এবং অবৈধ মাদক বিক্রির কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এই অপরাধ থেকে সরকার ইতিমধ্যেই প্রায় £২.২ বিলিয়ন ট্যাক্স রাজস্ব হারিয়েছে।
বিবিসির সাম্প্রতিক অনুসন্ধান বলছে, অনেক দোকানে বিক্রি হওয়া সিগারেটে অ্যাসবেস্টস, মৃত মাছি ও মানব বর্জ্য পর্যন্ত পাওয়া গেছে, যা সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকিকে ভয়ানকভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছে। এক দোকান বন্ধ হলে, দ্রুত আরেকটি চালু হয়ে যাচ্ছে—প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ একপ্রকার অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
এই দোকানগুলো শুধু নকল পণ্য নয়, অবৈধ অভিবাসী কর্মীদেরও কাজে লাগাচ্ছে। কুর্দি ও চাইনিজ গ্যাংদের হাত ধরে এই অপরাধ এখন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে। শুধুমাত্র হাল শহরেই আনুমানিক ৮০টি দোকানে অবৈধ দ্রব্যের সরাসরি বিক্রি চলছে।
২০২৫ সালের প্রথমার্ধে ছোট নৌকায় করে চ্যানেল পাড়ি দিয়ে কমপক্ষে ২০,০০০ অবৈধ অভিবাসী ব্রিটেনে প্রবেশ করেছে। এই অভিবাসীদের অনেকে রাষ্ট্রীয় সহায়তা পাচ্ছে, আবার অনেকেই অবৈধ ব্যবসায় যুক্ত হয়ে পড়ছে। সরকারের “গ্যাং ধ্বংস” উদ্যোগ এখন শুধু রাজনৈতিক বুলি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সরকারের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, বর্তমানে ১০,০০০ বিদেশি অপরাধী যুক্তরাজ্যের কারাগারে বন্দী, যা মোট কয়েদির প্রায় ১২%। কিন্তু আদালতের মানবাধিকার আইনের ব্যাখ্যা তাদের বহিষ্কার প্রক্রিয়ায় বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে গ্যাং সদস্যরা আরও সাহসী হয়ে উঠছে।
বিদেশি সম্প্রদায়ের একটি অংশ স্থানীয় সমাজে আইন-শৃঙ্খলা ও সামাজিক মূল্যবোধকে অবজ্ঞা করছে। রদারহ্যাম, রচডেলসহ বিভিন্ন শহরে পাকিস্তানি পুরুষদের দ্বারা সংঘটিত ধর্ষণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় জাতি-ভিত্তিক মনোভাব ও নারী বিদ্বেষের আশঙ্কাজনক চিত্র প্রকাশ পেয়েছে।
জাতীয় পরিসংখ্যান অফিসের পূর্বাভাস বলছে, ২০৬৩ সালের মধ্যে সাদা ব্রিটিশরা সংখ্যালঘু হয়ে যাবে এবং ২১০০ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্যের প্রায় ২৫% জনগণ মুসলিম হবে। রাজনৈতিক শূন্যতা ও সীমাহীন অভিবাসন নিয়ন্ত্রণহীন গতিতে এই পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করছে।
পাকিস্তান, আফগানিস্তান, আলবেনিয়া, ইরাক ও নাইজেরিয়ার মতো দেশ থেকে আগত লোকজন ব্রিটেনে নিয়ে আসছে দুর্নীতি, আইন অবমাননা ও অপরাধপ্রবণ সংস্কৃতি, যা ব্রিটিশ সমাজের মৌলিক কাঠামোকে ভেঙে দিচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেদের মতে, এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় প্রয়োজন শক্তিশালী রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এবং জনমতের সুসংগঠিত প্রতিফলন। এই দ্রুত পরিবর্তনের মুখে দাঁড়িয়ে ভোটই এখন ব্রিটিশদের একমাত্র অস্ত্র—নিজেদের মূল্যবোধ ও জীবনধারা রক্ষা করার জন্য।
সূত্রঃ এক্সপ্রেস
এম.কে
০৯ জুলাই ২০২৫