TV3 BANGLA
আন্তর্জাতিক

ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা আর,এ,ডাব্লিউ(RAW) এর উপর নিষেধাজ্ঞা চায় আমেরিকান সংস্থা

মার্কিন স্বাধীন ধর্মীয় প্যানেল (USCIRF) ভারতের গুপ্তচর সংস্থা আর,এ,ডাব্লিউ(RAW)-এর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়েছে। তারা ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা RAW-এর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ করেছে বলে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানা যায়।

আমেরিকার এই সংস্থাটির মতে, ভারতে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন বাড়ছে। যদিও ভারত প্রতিবেদনকে পক্ষপাতদুষ্ট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। তাছাড়া আমেরিকান এই সংস্থাটি ভিয়েতনামকে বিশেষ উদ্বেগের দেশ হিসেবে চিহ্নিত করার আহ্বান জানিয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মীয় স্বাধীনতা প্যানেল মঙ্গলবার জানিয়েছে, ভারতে সংখ্যালঘুদের প্রতি আচরণ ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। যার কারণে তারা ভারতের গুপ্তচর সংস্থা (RAW)-এর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করেছে। ভারতের গুপ্তচর সংস্থা শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হত্যার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত বলে তথ্যমতে জানা যায়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা কমিশন (USCIRF) তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে আরও জানিয়েছে, কমিউনিস্ট শাসিত ভিয়েতনাম ধর্মীয় কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। কমিশন ভিয়েতনামকে “বিশেষ উদ্বেগের দেশ” হিসেবে চিহ্নিত করার সুপারিশ করেছে।

সংস্থাটির মতে ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতার অবস্থা দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতার অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। ভারতে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে হামলা ও বৈষম্য বাড়ছে।

হিন্দু জাতীয়তাবাদী ধারনার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) “মুসলিম ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য এবং ভ্রান্ত তথ্য প্রচার” করেছে বলে অভিযোগ করেছে কমিশন।

ভারত বুধবার প্রতিবেদনটি প্রত্যাখ্যান করেছে এবং একে “পক্ষপাতদুষ্ট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” বলেছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এক বিবৃতিতে বলেছেন, “USCIRF বারবার বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলো ভুলভাবে উপস্থাপন করছে এবং ভারতের বহুত্ববাদী সমাজকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করছে। এটি প্রকৃতপক্ষে ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বিগ্ন নয়, বরং একটি নির্দিষ্ট এজেন্ডা অনুসরণ করছে।”

ওয়াশিংটন চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের মোকাবিলা করতে ভারত ও ভিয়েতনামের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়। বিশ্লেষকদের মতে, এ কারণেই যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার ইস্যুগুলো উপেক্ষা করে আসছে।

২০২৩ সাল থেকে, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের লক্ষ্যবস্তু করার অভিযোগ ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে। যা যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কের মধ্যে নতুন উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে এক ব্যর্থ হত্যার ষড়যন্ত্রের ঘটনায় ভারতের প্রাক্তন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বিকাশ যাদবকে অভিযুক্ত করে। ভারত শিখ বিচ্ছিন্নতা বাদীদের তাদের দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে মনে করে এবং এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে দীর্ঘদিন হতে।

২০২৪ সালের এপ্রিলে মোদি মুসলিমদের “অনুপ্রবেশকারী” ও “বেশি সন্তান জন্ম দেয় এমন সম্প্রদায়” বলে মন্তব্য করেন।

মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মানবাধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতা সংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতে সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের বিষয়টি তুলে ধরেছে। তবে নয়াদিল্লি সেগুলোকে “গভীরভাবে পক্ষপাতদুষ্ট” বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।

নরেন্দ্র মোদি, ২০১৪ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি তার সরকারের উপর আনা ধর্মীয় বৈষম্যের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং বলেছেন তার সরকারের বিভিন্ন নীতি, যেমন বিদ্যুৎ সংযোগ ও ভর্তুকি প্রকল্প, সকল সম্প্রদায়ের জন্যই উপকারী।

অন্যদিকে, মানবাধিকার সংস্থাগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করে বলে ভারতে ঘৃণাত্মক বক্তব্য বাড়ছে। একটি নতুন নাগরিকত্ব আইনকে জাতিসংঘ ” বৈষম্যমূলক” বলে অভিহিত করেছে। জাতিসংঘ উষ্মা প্রকাশ করে জানায়, ভারত ধর্মান্তরবিরোধী আইনে ধর্মীয় বিশ্বাসের স্বাধীনতাকে চ্যালেঞ্জ করছে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করা হয়েছে।

কমিশন সুপারিশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে “বিশেষ উদ্বেগের দেশ” হিসেবে চিহ্নিত করুক এবং বিকাশ যাদব ও ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা RAW’-এর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করুক।

তথ্যমতে জানা যায়, এই কমিশনটি একটি দ্বিদলীয় মার্কিন সরকারি পরামর্শদাতা সংস্থা। যা বিশ্বব্যাপী ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর নজর রাখে ও নীতিগত সুপারিশ করে। তবে, কমিশনের সকল সুপারিশ আমেরিকান সরকারের জন্য বাধ্যতামূলক নয়। তাই যুক্তরাষ্ট্র RAW-এর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে কিনা, তা অনিশ্চিত।

সূত্রঃ রয়টার্স

এম.কে
২৬ মার্চ ২০২৫

আরো পড়ুন

মুসলিম শিশুকে হত্যার হুমকি, মার্কিন স্কুল শিক্ষক গ্রেফতার

ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে ভারতীয় রুপি

আয়ারল্যান্ডের অর্থনীতিতে অশনি সংকেত!