20.9 C
London
July 27, 2025
TV3 BANGLA
আন্তর্জাতিক

ভারতে নৈরাজ্যঃ ধর্মস্থলা মন্দিরে শত শত ধর্ষণ ও হত্যার গোপন কাহিনি ফাঁস

কার্ণাটকের ধর্মস্থলা মন্দির শহর ঘিরে একের পর এক ভয়াবহ অভিযোগে ভারতজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এক সাবেক স্যানিটেশন কর্মী প্রকাশ করেছেন, তাকে প্রায় দুই দশক ধরে শত শত লাশ কবর দিতে বাধ্য করা হয়েছিল, যাদের অনেকেই ধর্ষণের পর নির্মমভাবে খুন হয়েছেন।

৪৮ বছর বয়সী এই দলিত ব্যক্তি ১২ বছর গা ঢাকা দেওয়ার পর পুলিশের কাছে এসে স্বীকার করেন, ১৯৯৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনি মন্দির কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বিভিন্ন স্থানে লাশ কবর ও পুড়িয়ে ফেলতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি বলেন, “মৃতদেহ কবর না দিলে আমাকে ও আমার পরিবারকে হত্যার হুমকি দেওয়া হতো।” তার জবানবন্দি ও জমা দেওয়া প্রমাণের ভিত্তিতে কর্ণাটক সরকার বিশেষ তদন্ত দল (SIT) গঠন করেছে।
তার বর্ণনা অনুযায়ী, অনেক লাশই ছিল অল্পবয়সী কিশোরীর, যাদের অন্তর্বাস অনুপস্থিত ও শরীরে যৌন নির্যাতনের স্পষ্ট চিহ্ন ছিল। কিছু দেহে অ্যাসিড পোড়ার দাগ পাওয়া যেত। তিনি গণকবরের স্থানগুলো শনাক্ত করতে এবং তদন্তে ব্রেইন ম্যাপিং ও পলিগ্রাফ টেস্ট দিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, মন্দিরের তত্ত্বাবধানে থাকা সুপারভাইজাররা তাকে নির্দেশ দিত নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে লাশ কবর দিতে অথবা ডিজেল ব্যবহার করে পুড়িয়ে ফেলতে। তিনি বলেন, “শুধু প্রমাণ ধ্বংসের জন্যই এভাবে শত শত লাশ গোপনে কবর দেওয়া হয়েছে।”
এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর নিখোঁজ ও হত্যাকাণ্ডের পুরনো মামলাগুলোও নতুন করে আলোচনায় এসেছে। ২০০৩ সালে নিখোঁজ হওয়া মেডিকেল শিক্ষার্থী অনন্যা ভাটের মা সুজাতা ভাট নতুন অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমার মেয়ের কঙ্কাল খুঁজে বের করুন, যেন সম্মানের সঙ্গে দাফন করতে পারি।”
ধর্মস্থলায় ধর্ষণ ও হত্যার ইতিহাস দীর্ঘদিনের। ১৯৮৭ সালে ১৭ বছরের পদ্মলতার ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়, কিন্তু প্রভাবশালীদের কারণে আন্দোলন দমন করা হয়। ২০১২ সালে কিশোরী সওজন্যার ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় দেশজুড়ে আন্দোলন হলেও মামলাটি এখনো অমীমাংসিত।
মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবী এস বালান বলেন, “স্বাধীনতার পর ভারত এত ভয়াবহ অপরাধ দেখেনি। শত শত কিশোরীর আত্মা ন্যায়বিচারের জন্য কাঁদছে।” তিনি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে SIT গঠনের দাবি জানালে সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেয়।
ধর্মস্থলা মন্দির দীর্ঘদিন হেগগাড়ে পরিবারের নিয়ন্ত্রণে, যারা রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রভাবশালী। মন্দির কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা “ন্যায়সঙ্গত ও স্বচ্ছ তদন্তের” পক্ষে এবং SIT-এর মাধ্যমে সত্য উদঘাটনের প্রত্যাশা করছে।
ভারতে ন্যায়বিচারের এই লড়াইয়ে ধর্মস্থলার মাটির নিচে চাপা পড়ে থাকা অসংখ্য অজানা কণ্ঠ যেন এখনো প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।
সূত্রঃ আল জাজিরা
এম.কে
২৭ জুলাই ২০২৫

আরো পড়ুন

মানুষের মলমূত্র থেকে তৈরি সার নিরাপদ: গবেষণা

কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হওয়ার প্রস্তাব ট্রাম্পের

শ্রমবাজার আকর্ষণীয় করতে এবার নিয়োগদাতাদের ‘বাগে’ আনছে সৌদি