TV3 BANGLA
আন্তর্জাতিক

ভারতের আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে মুসলিম শিক্ষককে মাথায় গুলি করে হত্যা

আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় (এএমইউ) ক্যাম্পাসে সন্ধ্যায় হাঁটার সময় রাও দানিশ আলী (৪৫) নামে একজন কম্পিউটার শিক্ষককে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাওলানা আজাদ লাইব্রেরি সংলগ্ন এলাকায় বন্ধুদের সাথে হাঁটার সময় এই হামলার ঘটনা ঘটে। গুলিবর্ষণের পরপরই হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।

 

টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়, যে স্থানটি দিয়ে মানুষ প্রতিদিন নির্ভয়ে চলাচল করে, সেখানেই এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের এই হামলা পুরো ক্যাম্পাসকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। দানিশ আলী দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন এবিকে (এবিকে) হাই স্কুলে কম্পিউটার বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

ঘটনার সময় আলির পাশেই হাঁটছিলেন ইমরান, তিনি জানান, গুলির ঠিক কয়েক মুহূর্ত আগে এক হামলাকারী হুমকি প্রদান করে। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে ইমরান জানান, হামলাকারী তাকে উদ্দেশ্য করে বলেছিল, ‘‘তুমি এখনও আমাকে চেনো না, এখন চিনবে।’’ আলিকে খুব কাছ থেকে কানের কাছে গুলি করা হয় এবং তিনি ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন।

মোহাম্মদ ওয়াসিম আলি নামে তার এক আত্মীয় মেডিকেল কলেজে সাংবাদিকদের জানান, গুলি লাগার পরপরই দানিশ লুটিয়ে পড়েন এবং তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে তার ওমরাহ পালন করতে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল।

এএমইউ প্রক্টর মোহাম্মদ ওয়াসিম আলীর মতে, রাত ৮টা ৫০ মিনিটের দিকে দানিশ তার দুই সহকর্মীর সাথে কেনেডি অডিটোরিয়ামের কাছে হাঁটছিলেন। এসময় স্কুটারে আসা দুই ব্যক্তি তাদের পথরোধ করে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, একজন বন্দুকধারী বলে ওঠে, “তুমি এখনো আমাকে চেনো না, এখন চিনবে,” এবং এরপরই গুলি চালায়। দানিশের মাথায় অন্তত দুটি গুলি লাগে এবং তিনি ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন। তাকে দ্রুত জওহরলাল নেহেরু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

সিনিয়র পুলিশ সুপার (এসএসপি) নীরাজ জাদোন নিশ্চিত করেছেন, দুই হামলাকারীই দানিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে। পুলিশ ঘটনার তদন্তে ৬টি দল গঠন করেছে। সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করা হচ্ছে এবং নিহতের পরিবার ও সহকর্মীদের সাথে কথা বলা হচ্ছে। এসএসপি জাদোন বলেন, ‘‘আমরা ব্যক্তিগত শত্রুতা সহ সব সম্ভাব্য দিক খতিয়ে দেখছি। খুব শীঘ্রই অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হবে।’’

উল্লেখ্য, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বিধানসভায় রাজ্যের উন্নত আইন-শৃঙ্খলার প্রশংসা করার মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরেই এই ঘটনাটি ঘটল।

এএমইউ উপাচার্য নাইমা খাতুন হাসপাতালে গিয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সাথে দেখা করেন এবং কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। ঘটনার পর ক্যাম্পাস জুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। তবে কুয়াশা এবং অন্ধকারের কারণে সিসিটিভি ফুটেজ খুব একটা স্পষ্ট নয় বলে জানা গেছে।

রাও দানিশ আলী ২০১৫ সাল থেকে এবিকে হাই স্কুলে শিক্ষকতা করছিলেন। তিনি এএমইউ-এরই প্রাক্তন ছাত্র ছিলেন এবং একসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের হর্স রাইডিং ক্লাবের ক্যাপ্টেন ছিলেন।দানিশ মূলত দিবাই এলাকার বাসিন্দা এবং তার বাবা অধ্যাপক হিলাল ও মা—উভয়েই এএমইউ-এর অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। তার শ্বশুর ফিদা উল্লাহ চৌধুরী মোরাদাবাদের কাঁঠ কেন্দ্রের প্রাক্তন বিধায়ক ছিলেন।

সূত্রঃ টাইমস অব ইন্ডিয়া

এম.কে

আরো পড়ুন

ইউক্রেনে ‘দ্য গ্রেট গেম’ ব্রিটেন – রাশিয়ার

বিমানে ঘুমন্ত নাবালিকাকে ধর্ষণ ভারতীয় ব্যবসায়ীর, ফেরত পাঠানো হচ্ছে দেশে

হ্যান্ডকাফ-শেকল পরিয়ে আরও ৩১ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠালো যুক্তরাষ্ট্র