4 C
London
January 22, 2025
TV3 BANGLA
আন্তর্জাতিক

ভারতের বিশ্ব অর্থনীতির মোড়ল হওয়ার খায়েশ ক্রমেই ফিকে হয়ে যাচ্ছে!

ডলারের বিপরীতে রুপি ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে। ২০১৪ সালে এক ডলারের দাম ছিল ৬১ রুপি। গত পনেরো বছরে সেটাই ৮৬.৫৪ রুপিতে পৌঁছে গেছে। এই পতনের সঙ্গে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি হওয়ার স্বপ্নও যেন ম্লান হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। স্বাধীনতার পর থেকেই ভারতীয় মুদ্রায় উত্থান-পতন চলছে। এর পেছনে রয়েছে মূলত রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অস্থিরতা।

১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার সময় ভারতীয় রুপির মূল্য ছিল মার্কিন ডলারের সমান। কোনো বিদেশি ঋণও ছিল না। ১৯৫১ সালে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সূচনা হয়। তখন থেকে শুরু হয় বিদেশি ঋণ নেওয়ার পালা। বাধ্য হয়েই রুপির অবমূল্যায়ন করতে হয়। এরপর ১৮ বছর রুপির মূল্য স্থিতিশীল ছিল। ১৯৪৮ থেকে ১৯৬৬ পর্যন্ত ডলারের বিপরীতে রুপির মান ছিল ৪.৭৯ এর আশপাশে। ১৯৬২ সালে চীন এবং ১৯৬৫ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে ভারত। সেই যুদ্ধে বাজেটে বড় ধরনের ধাক্কা খায়। ফলে কেন্দ্র সরকার ডলারের বিপরীতে রুপির মান ৭.৫৭-তে নামিয়ে আনে।

১৯৭১ সালে ব্রিটিশ মুদ্রার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে মার্কিন ডলারের সঙ্গে যুক্ত হয় রুপি। ১৯৭৫ সালে এক মার্কিন ডলারের বিপরীতে ভারতীয় মুদ্রার দাম ঠিক হয় ৮.৩৯ রুপি। এরপর ১৯৮৫ সালে ফের রুপির অবমূল্যায়ন হয়। দাম দাঁড়ায় ১ ডলার পিছু ১২ রুপি। ১৯৯১ সালে ব্যাপক আর্থিক সঙ্কটে পড়ে ভারত। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে গিয়ে ঠেকে। মাত্র ৩ সপ্তাহ আমদানি করার মতো মুদ্রা ছিল ভারতের নিকট। যার কারণে সেই সময়ে মুদ্রাস্ফীতি লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছিল। এই পরিস্থিতিতে ফের রুপির অবমূল্যায়ন হয়। ডলার পিছু দাম দাঁড়ায় ১৭.৯০ রুপি।

১৯৯৩ সাল ছিল ভারতীয় অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বছর। মুদ্রার মান বাজারের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। বিনিময় হার নির্ধারণও করতে শুরু করে বাজার। অস্থিরতা তৈরি হয়। শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক হস্তক্ষেপ করে। এক ডলারের বিপরীতে রুপির দাম হয় ৩১.৩৭।

২০০০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত রুপি ডলার পিছু ৪০ থেকে ৫০-এর মধ্যে ওঠানামা করেছে। কিন্তু তারপর থেকে দাম ধীরে ধীরে আরও পড়তে শুরু করে। যা এখন গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৮৬.৫৪ রুপিতে। কিছুদিন আগে ৮৭ রুপিতেও পৌঁছে গিয়েছিল।

বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ভারতীয় বাজার থেকে বিনিয়োগ তুলে নিচ্ছেন। এর ফলে রুপির ওপর চাপ তৈরি হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে মার্কিন ডলার শক্তিশালী হয়েছে। ফলে অন্যান্য মুদ্রার বিপরীতে রুপি দুর্বল হচ্ছে। ভারতের রপ্তানি তুলনামূলকভাবে কম। রপ্তানি না বাড়লে বিদেশি মুদ্রা আসবে না। রুপি আরও দুর্বল হবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা এবং যোগানের ভিত্তিতে মুদ্রার মূল্য নির্ধারিত হয়। আন্তর্জাতিক মুদ্রা বাজারে পণ্যের পরিবর্তে মুদ্রা একে অপরের সঙ্গে বিনিময় করা হয়।

সরবরাহের তুলনায় চাহিদা কমে গেলে মুদ্রার মূল্য হ্রাস হয়। তখন বিদেশি মুদ্রার মূল্য আপনা আপনিই বেড়ে যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতি তৈরি করে। সেই অনুযায়ী সরবরাহ করা হয়। একইসঙ্গে বিদেশিদের চাহিদাও একটা বড় ফ্যাক্টর। কোনো দেশের পণ্য বা সম্পত্তি কিনতে হলে স্থানীয় মুদ্রায় কিনতে হয়। ফলে সেই সব জিনিসের চাহিদা বেশি থাকলে মুদ্রার মূল্য বাড়ে। কম থাকলে উল্টোটা।

ডলারের বিপরীতে রুপির পতনের কারণ হিসেবে মার্কিন মুলুকের তুলনায় ভারতের বাড়তি মুদ্রাস্ফীতিকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। মনে করা হচ্ছে, রিজার্ভ ব্যাংকের মুদ্রানীতি মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের তুলনায় কিছুটা ঢিলেঢালা।

ভারত বেশি দাম দিয়ে বিদেশ থেকে তেল, কাঁচামাল কেনে। এটাও রুপি দুর্বল হওয়ার অন্যতম কারণ। ভারত রপ্তানি বাড়াতে পারেনি। সেটা সম্ভব হলে রুপির চাহিদা বাড়ত। এর প্রভাব পড়ছে বিদেশি মুদ্রা ভান্ডারেও। সেপ্টেম্বর মাসে ৭০০ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ৬৪০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা গত ৮ মাসের সর্বনিম্ন। তবে বিশ্লেষকরা এও বলছেন, ডলারের তুলনায় রুপির মানে ভারসাম্য রাখার জন্য রিজার্ভ ব্যাংক যদি হস্তক্ষেপ না করত, তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।

এম.কে
২২ জানুয়ারি ২০২৫

আরো পড়ুন

নোবেল পুরস্কার জয়ের কল পেয়ে অধ্যাপক অ্যানি বললেন ‘আমি ব্যস্ত, ক্লাস নিচ্ছি’

যুক্তরাষ্ট্রে আবারও বন্দুক হামলা, নিহত ১০

নিউজ ডেস্ক

উগ্র ডানপন্থীদের উত্থানে ভয়ে আছে ফ্রান্সের মুসলিম জনগোষ্ঠী