বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর কথিত হামলার অভিযোগের বিষয়ে ভারতের সংসদ লোকসভায় আজও আলোচনা হয়েছে। শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে সংসদে বিবৃতি দিয়েছেন। এতে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুসহ সব নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার দায়িত্ব অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ।
লোকসভায় সংসদ সদস্যের প্রশ্নের জবাবে জয়শঙ্কর বলেছেন, ভারতের সরকার এসব ঘটনার বিষয় গুরুতরভাবে বিবেচনায় নিয়েছে এবং বাংলাদেশ সরকারের কাছে দিল্লির উদ্বেগ জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক দুর্গাপূজা উৎসবের সময় মন্দির ও পূজা মণ্ডপে হামলা হবার সম্ভাবনা প্রকাশ্যে এসেছিল। এই হামলার সম্ভাবনা পর বাংলাদেশ সরকার শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা উদযাপন নিশ্চিতে সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েনসহ বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশনা জারি করেছিল।
ভারতের এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, সংখ্যালঘুসহ বাংলাদেশের সব নাগরিকের জীবন ও স্বাধীনতা রক্ষার প্রাথমিক দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকারের উপর বর্তায়।
রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস (ইসকন) বাংলাদেশের সাবেক পুরোহিত চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার ও হিন্দুদের উপর কথিত হামলা বাড়ার অভিযোগ ঘিরে চলমান উত্তেজনার মধ্যে পরপর দুই দিন অর্থাৎ বৃহস্পতি ও শুক্রবার ভারতের সংসদে এই বিষয়ে আলোচনা করা হলো।
এদিকে, একই দিনে (শুক্রবার) চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর গ্রেপ্তার ও সংখ্যালঘুদের নিয়ে দিল্লিতে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে কথা বলেছেন, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। ব্রিফিংয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের বেশিরভাগই বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে জয়সওয়ালকে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করেন।
এ সময় রণধীর বলেন, হিন্দুদের উপর হামলা নিয়ে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। সব সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা নিশ্চিতের যে গুরুদায়িত্ব বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের রয়েছে, সেটি তারা পালন করছে।
তিনি বলেন, আমরা চরমপন্থী বক্তব্যের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাই আমরা বাংলাদেশকে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানাই।
গত ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার উপর গেরুয়া পতাকা উত্তোলনের অভিযোগে হিন্দু নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা হয়। এই মামলায় সোমবার বিকেলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাওয়ার সময় শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষায়িত গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার করেন।
পরের দিন চট্টগ্রামের একটি আদালতে চিন্ময়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার শুনানি ঘিরে আদালত চত্বরে ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়। এ সময় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবিতে আন্দোলনকারীদের হামলায় সাইফুল ইসলাম আলিফ নামে চট্টগ্রামে এক আইনজীবী নিহত হন। পরবর্তীতে জামায়েতের আমির আলিফকে নিজের দলের কর্মী বলে দাবি করেন এবং এ হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানান।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার করা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে ভারতে উত্তেজনা চলছে। এছাড়া বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন বেড়ে গেছে বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে একপেশে ও ঢালাওভাবে সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে। ভারতের বিভিন্ন জায়গায় এ নিয়ে বিক্ষোভও হয়েছে। যদিও এসব অভিযোগের বেশিরভাগই ভিত্তিহীন বলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।
সূত্রঃ এনডিটিভি
এম.কে
২৯ নভেম্বর ২০২৪