TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

ভিসা সুইচিংয়ে পাকিস্তানিদের অবৈধ প্রবেশের রেকর্ডঃ ব্রিটেনের ইমিগ্রেশন ব্যবস্থায় চরম সংকট

ব্রিটেনের অভিবাসন ব্যবস্থা নজিরবিহীন বিশ্বাসযোগ্যতার সংকটে পড়েছে। সরকারের নতুন তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানি নাগরিকরা বৈধ ভিসার পথ ব্যবহার করে যুক্তরাজ্যে প্রবেশের পর আশ্রয়ের আবেদন করছে রেকর্ড পরিমাণে। এদের মধ্যে স্টুডেন্ট, ওয়ার্ক এবং ভিজিটর ভিসাধারীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। বৈধ ভিসাকে স্থায়ী বসবাসের ‘গোপন দরজা’ হিসেবে ব্যবহারের এই প্রবণতা ব্রিটিশ নীতিনির্ধারকদের মধ্যে তীব্র উদ্বেগ তৈরি করেছে।
সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিশ্বের অন্য ১৭৫টি দেশকে পিছনে ফেলে পাকিস্তান এখন যুক্তরাজ্যে আশ্রয়প্রার্থীর সবচেয়ে বড় উৎস। মোট আশ্রয় আবেদনের প্রতি ১০টির মধ্যে একটি পাকিস্তানি নাগরিকের, যা ২০২২ সালের তুলনায় পাঁচগুণ বেশি। দীর্ঘদিন ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেওয়া নৌকা অভিবাসনই ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু; নতুন তথ্য জানাচ্ছে— বিমানবন্দরের বৈধ প্রবেশপথ দিয়েই চলছে সবচেয়ে বড় অপব্যবহার।

এ প্রবণতার মূল কৌশল ‘ভিসা সুইচিং’। পর্যটক, ছাত্র বা অস্থায়ী কর্মী হিসেবে ভিসা নিয়ে প্রবেশ করেই হাজার হাজার মানুষ রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন জমা দিচ্ছে। সীমান্ত পার হওয়ার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তারা শরণার্থী আবেদনের সুযোগ নিচ্ছে। গত বছর প্রায় ১০ হাজার পাকিস্তানি বৈধ কাগজপত্রে দেশটিতে প্রবেশ করার পরই মত পাল্টে আশ্রয় দাবি করে।

সবচেয়ে বড় অনিয়ম ঘটছে স্টুডেন্ট ভিসার ক্ষেত্রে। উচ্চশিক্ষার জন্য আগত ৫ হাজার ৮৮৮ জন পাকিস্তানি ছাত্র পড়াশোনা ফেলেই আশ্রয়ের আবেদন করেছে, যা ভারত ও বাংলাদেশের সম্মিলিত সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে গেছে। এ ধারা পরিষ্কারভাবেই একটি পরিকল্পিত অপব্যবহারের ইঙ্গিত দিচ্ছে— প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে প্রবেশ নিশ্চিত করা, পরে রাজনৈতিক বা ধর্মীয় অজুহাতে আশ্রয়ের আবেদন করা।

ওয়ার্ক ভিসা ও ভিজিটর ভিসার ক্ষেত্রেও পাকিস্তান বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে। ২০২৪ সালে মোট আশ্রয় আবেদনের ৩৭ দশমিক ৬ শতাংশই এসেছে সেই সব ব্যক্তির কাছ থেকে, যারা সাময়িক ভিসা পথ ব্যবহার করে ব্রিটেনে প্রবেশ করেছিল।

অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকসের সাবেক সিনিয়র কর্মকর্তা জেমি জেনকিন্স এই পরিসংখ্যানকে “পদ্ধতিগত ব্যর্থতা” বলে মন্তব্য করেছেন। তার মতে, যুক্তরাজ্যের উদার ভিসা নীতি এক ধরনের ফাঁকফোকর তৈরি করেছে যা নির্দয়ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। রাজনীতিবিদরা যখন ছোট নৌকা নিয়ে স্লোগানে ব্যস্ত, তখন বৈধ প্রবেশপথেই আশ্রয় ব্যবস্থার ভাঙন গভীর হচ্ছে বলে তিনি সতর্ক করেন।

এই পরিস্থিতি ব্রিটিশ সমাজে নতুন বিতর্ক উসকে দিয়েছে। বিশেষ করে সেই অঞ্চলে উত্তেজনা বেশি, যেখানে অতীতে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত পুরুষদের জড়িত থাকার অভিযোগে ‘গ্রুমিং গ্যাং’ কেলেঙ্কারি এখনও তীব্র ক্ষত হয়ে আছে। অনিয়ন্ত্রিত প্রবেশ সামাজিক আস্থা আরও কমিয়ে দিচ্ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

শ্যাডো হোম সেক্রেটারি ক্রিস ফিলিপ বলেন, ব্রিটেনের সীমান্ত ব্যবস্থা প্রকাশ্যেই অপব্যবহারের শিকার। তার দাবি, আশ্রয় প্রক্রিয়া কখনই ছাত্র বা পর্যটকদের জন্য বিকল্প প্রবেশের পথ হিসেবে তৈরি হয়নি। বিরোধী দল অবিলম্বে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে।

পাকিস্তানের অর্থনৈতিক মন্দা, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি দেশত্যাগের আগ্রহ বাড়ালেও সমালোচকদের মতে, দারিদ্র্য আশ্রয়ের বৈধ ভিত্তি নয়। নিপীড়ন ছাড়া অন্য কোন কারণকে শরণার্থী মর্যাদার যুক্তি হিসেবে গ্রহণ করা যায় না।

হোম সেক্রেটারি শাবানা মাহমুদের নেতৃত্বে হোম অফিস ভিসা ব্যবস্থার অপব্যবহার রোধে নতুন কঠোর নীতি আনছে। যারা ভিসা সুইচিংয়ে জড়াবে, তাদের স্থায়ী বসবাস পেতে ২০ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে এবং প্রতি ৩০ মাসে স্ট্যাটাস পর্যালোচনা করা হবে।

সূত্রঃ ওএনএস

এম.কে

আরো পড়ুন

ব্রেক্সিটের পর যুক্তরাজ্যে কমেছে ইউরোপের শিক্ষার্থী

অনলাইন ডেস্ক

যুক্তরাজ্যের পূর্ব লন্ডনের রাস্তায় রাস্তায় ফিলিস্তিনি পতাকা

ব্রিটেনে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়ে ৭ জনের মৃত্যু

নিউজ ডেস্ক