যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা অন্য দেশের নীতিনির্ধারণীতে অংশ নিতে পারেন না। ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের ৩৪৯(এ)(৪) সেকশন অনুযায়ী ভিন্ন দেশের নীতি নির্ধারণে অংশ নিলে সেই মার্কিন নাগরিকের সিটিজেনশিপ বাতিল হয়ে যাবে। অনেক আগেই প্রণীত এ আইনের সর্বশেষ ব্যাখ্যা প্রদান করা হয় এ বছরের ১২ মার্চে। সে অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পরিহার না করেই কেউ যদি অন্য দেশের গুরুত্বপূর্ণ কোনো দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হন এবং এ তথ্য নিকটস্থ কনস্যুলেট জানতে পারে তাহলে ওই আমেরিকানের নাগরিকত্ব বাতিলের সার্টিফিকেট ইস্যু করা হবে।
বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের পার্লামেন্ট, মন্ত্রিপরিষদ, উপদেষ্টা পরিষদ, সংবিধানসহ আইন সংস্কারের নানা কমিটিতে মার্কিন নাগরিকরা অংশ নিচ্ছেন। এদের অনেকেই প্রচলিত রীতি অনুযায়ী স্বেচ্ছায় সিটিজেনশিপ পরিত্যাগ করেননি। অর্থাৎ সেই তথ্য গোপন করেছেন। সর্বশেষ এ ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ওই ধরনের আচরণে লিপ্তরা এখন থেকে আর ছাড় পাবেন না।
এ প্রসঙ্গে নিউইয়র্ক অঞ্চলে ইমিগ্রেশন-বিষয়ক খ্যাতনামা অ্যাটর্নি অশোক কর্মকার বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন আইন লঙ্ঘনের ব্যাপারগুলো গুরুতর অপরাধের শামিল নয়। এজন্য সিটিজেনশিপের তথ্য গোপন করে অন্য দেশের নীতিনির্ধারণীতে অংশ নিলে কেবল সেই ব্যক্তির নাগরিকত্ব বাতিল হয়ে যাবে। অন্য কিছু নয়। তবে নীতি-নৈতিকতার ব্যাপারটি সামনে আসবে অবশ্যই। নৈতিক স্খলনজনিত আচরণের পর্যায়ে পড়বে।
কারণ আপনি একই সঙ্গে দুটি দেশের প্রতি অনুগত থাকতে পারেন না। বিশেষ করে যদি রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণীতে থাকেন। সেনাবাহিনীর পদস্থ অফিসার, সচিব, এমপি, মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী/প্রধান উপদেষ্টা, প্রেসিডেন্ট ইত্যাদি পদগুলো এখানে বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। ’
অ্যাটর্নি অশোক উল্লেখ করেন, ‘তবে যারা সাধারণ নাগরিক, অন্য দেশের নীতিনির্ধারণীতে লিপ্ত নয়, তারা দ্বৈত নাগরিকত্ব নিতে পারেন এবং অনেকে নিচ্ছেন, এটা কোনো অন্যায়ের নয়।নৈতিকভাবেও প্রশ্ন নেই। ইদানীং প্রবাসেও গুঞ্জন উঠেছে, আমেরিকার নাগরিকত্ব গ্রহণকারী অনেকেই বাংলাদেশে গিয়ে এমপি, মন্ত্রী, উপদেষ্টা হচ্ছেন। কয়েক বছর আগে এক ব্যক্তি প্রেসিডেন্টও হয়েছিলেন। বিচারপতির দায়িত্বও পালন করেছেন একাধিক ইউএস সিটিজেন। ’
বাংলাদেশের আইন এ ব্যাপারে কী বলে-জানতে চাইলে অ্যাটর্নি অশোক বলেন, ‘যদি শপথ গ্রহণের ব্যাপারটি থাকে অর্থাৎ দেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশের শপথ নিতে হয়। আর এটি করার পর ধরেই নেওয়া হয় যে, আপনার আনুগত্য শুধু বাংলাদেশের প্রতিই, অন্য কোনো দেশের প্রতি নয়। এতদসত্ত্বেও যারা অন্য দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণের তথ্য গোপন করেন বা মিথ্যা বলেন সেটিকে শপথভঙ্গের শামিল বলে গণ্য করা হয়। কারণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব নিতে একইসঙ্গে দুটি দেশের স্বার্থ সুরক্ষা সম্ভব হয় না। এজন্য পার্লামেন্ট মেম্বার পদে মনোনয়নের ফরম পূরণের সময় অন্য কোনো দেশের নাগরিকত্ব নেই বলে ঘোষণা দিতে হয়। ’
এম.কে
২৫ ডিসেম্বর ২০২৪