যুক্তরাজ্যে ১৬ মাস বয়সী শিশু নুসাইবাকে হত্যার ঘটনায় ৩৯ বছর বয়সী কামরান হায়দার দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। ব্রিটেনের ওল্ড বেইলি জুরি বোর্ড শিশু হত্যাকারীর অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার পর তার ছবিও প্রকাশ করেছে।
মাই লন্ডনের খবরে বলা হয়েছে, কামরান হায়দার ১৬ মাস বয়সী শিশু নুসাইবা উমরের মা আসিয়া আমাজিরের বয়ফ্রেন্ড ছিল। ২০১৯ সালের ৫ আগস্টে অনলাইন ডেটিং ওয়েবসাইটে তাদের পরিচয় হয়। এরপর সে আসিয়ার ইলফোর্ডের কলিনটন রোড এলাকার বাড়িতে তার লাইসেন্সবিহীন কুকুর প্রজনন ব্যবসায় সহায়তা করার কথা বলে থাকতে শুরু করে। কয়েকদিনের মধ্যে আসিয়া লক্ষ্য করে নুসাইবার প্রতি তার নতুন সঙ্গী কামরান তার বেশ ঈর্ষান্বিত। সে বিভিন্ন অজুহাতে শিশুটিকে নিষ্ঠুর শাস্তি দিতো। এর মধ্যে ছোট্ট এই শিশুটিকে ‘স্ট্রেস পজিশন’ বা তার পা ভাঁজ করে বসিয়ে রেখে ৪০ মিনিট পর্যন্ত বসে থাকতে বাধ্য করতো। এমনকি সে বলতো শিশুটি দেখতে সুন্দর নয়।
এরপর গত বছরের ২৮হ আগস্ট আসিয়া তার শিশু কন্যা নুসাইবাকে কামরানের তত্ত্বাবধানে রেখে বাইরে কাজে চলে যায়। ওই দিন দুপুর ১টার কিছু পরে কামরান হায়দার তাকে ফোন করে জানায় যে শিশুটি রান্নাঘরে পড়ে গেছে এবং তার মাথায় আঘাত পেয়েছে। খবর পেয়ে আসিয়া দ্রুত বাড়ি যাওয়ার শিশুটিকে তার মাথার বাম পাশে গুরুতর আঘাত পাওয়া অবস্থায় দেখতে পায়। এরপর তিনি একটি অ্যাম্বুলেন্স কল করার সিদ্ধান্ত নিলে কামরান হায়দার আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে এবং তাকে অ্যাম্বুলেন্সের জন্য কল করতে বাধা দেয়। এরপর তিনি একটি ট্যাক্সি ভাড়া করে তার শিশুকে নিউহ্যাম জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান।
হাসপাতালে শিশুটির মাথায় ক্ষত এবং ফুলে যাওয়ার জন্য চিকিৎসা করা হয়। দীর্ঘ দিন চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরার পর ১৩ সেপ্টেম্বরে আসিয়া তার বয়ফ্রেন্ড কামরানকে চলে যেতে বলে। ওই দিন তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। ঝগড়ার এক পর্যায়ে আসিয়া দেখতে পায় কামরান শিশুটিকে চড় মারছে এবং আঘাত করছে।
জুরি বোর্ডকে আসিয়া জানায়, তিনি নুসাইবার একটি ‘অদ্ভুত চিৎকারের আওয়াজ’ শুনতে পান এবং সেই সময় থেকে সে ক্রমশ অসুস্থ হয়ে পড়ে। বিকেল ৫টা নাগাদ তার খিঁচুনি শুরু হয়। এরপর দ্রুত তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালে প্যারামেডিকদের ব্যাপক চেষ্টার পরেও অবস্থা গুরুতর হতে থাকে এবং তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। তাকে বাঁচানোর আর কোনো সম্ভাবনা না থাকায় ১৭ সেপ্টেম্বর লাইফ সাপোর্ট খুলে দেওয়া হয়। এরপরই মৃত্যু হয় শিশুটির।
এদিকে শিশুটির মৃত্যুর পর পোস্টমর্টেম রিপোর্টে দেখা গেছে তার মাথায় বড় ধরনের আঘাত লাগায় মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে। এছাড়া শরীরে বিভিন্ন অংশে যেমন চোখের উপর ক্ষত, নিতম্বে লাল দাগ এবং আঘাতে চেহারায় ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। সমস্ত সাক্ষ্য প্রমাণ ও পোস্টমর্টেম রিপোর্টের ভিত্তিতে জুরি বোর্ড ঘাতক কামরান হায়দারকে হত্যাকারী হিসেবে দোষী সাব্যস্ত করেছেন এবং আজীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন।
৩১ মার্চ ২০২২
এনএইচ