14.7 C
London
November 3, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণাজনিত অপরাধ দ্রুত বাড়ছে, এখনই পদক্ষেপ জরুরিঃ আফজাল খান এমপি

ইসলামোফোবিয়ার ক্রমবর্ধমান বিস্তারের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাজ্যের ৪০ জন লেবার ও স্বতন্ত্র এমপি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইসলামোফোবিয়ার একটি আনুষ্ঠানিক সংজ্ঞা দ্রুত গ্রহণ করার জন্য। আফজাল খানের নেতৃত্বে প্রেরিত এই চিঠিতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণাজনিত অপরাধ গত এক বছরে প্রায় এক-পঞ্চমাংশ বেড়েছে।

চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন লেবার এমপি ডায়ান অ্যাবট, ডন বাটলার, কিম জনসন এবং স্বতন্ত্র এমপি অ্যান্ড্রু গুইনসহ আরও অনেকে। তারা সরকারের মন্ত্রী স্টিভ রিডের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন, ইসলামবিরোধী ঘৃণার একটি স্পষ্ট সংজ্ঞা গ্রহণ সরকারের জন্য একটি “গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ” হবে, যা সমাজে বিদ্যমান বৈষম্য, পূর্বধারণা ও ঘৃণার মোকাবিলায় সহায়ক হবে।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, “২০২৫ সালে যুক্তরাজ্যে সংঘটিত ধর্মীয় ঘৃণাজনিত অপরাধের ৪৫ শতাংশ মুসলমানদের লক্ষ্য করে সংঘটিত হয়েছে। এটি গত বছরের তুলনায় ১৯ শতাংশ বৃদ্ধি নির্দেশ করে।” এতে আরও বলা হয়, “২০২৩ সালের পর থেকে ইসলামোফোবিক অপরাধ বেড়েছে ৯২ শতাংশ। তাই সরকারের পক্ষে একটি আনুষ্ঠানিক সংজ্ঞা গ্রহণ এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি জরুরি।”

এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে সরকার মুসলমানদের প্রতি বৈষম্য, ঘৃণা ও পূর্বধারণার সংজ্ঞা নির্ধারণে একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করে। জানা গেছে, এই গ্রুপটি চলতি মাসের শুরুতে গৃহমন্ত্রী স্টিভ রিডের কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, যেখানে ইসলামোফোবিয়ার একটি অ-বাধ্যতামূলক সংজ্ঞা প্রস্তাব করা হয়েছে। যদি এটি অনুমোদিত হয়, তাহলে প্রস্তাবিত সংজ্ঞাটি জনপরামর্শের জন্য প্রকাশ করা হবে।

স্বাক্ষরকারী এমপিরা আশা প্রকাশ করেছেন, নভেম্বরের ইসলামোফোবিয়া সচেতনতা মাসেই সরকার সংজ্ঞাটি গ্রহণ করবে এবং যাদের সুরক্ষার জন্য এটি তৈরি করা হচ্ছে সেই মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে।

তবে কিছু সমালোচক উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, ইসলামোফোবিয়ার সংজ্ঞা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও ইসলামের সমালোচনার সুযোগ সীমিত করতে পারে। এ বিষয়ে দ্য গার্ডিয়ান-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন সংজ্ঞাটি এমনভাবে তৈরি করা হচ্ছে যাতে ইসলাম সমালোচনার স্বাধীনতা রক্ষা পায়।

ওয়ার্কিং গ্রুপের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার ডমিনিক গ্রিভ কে.সি. (ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল), সদস্য হিসেবে আছেন ব্রিটিশ মুসলিম নেটওয়ার্কের সহসভাপতি আকিলা আহমেদ এবং হাউস অব লর্ডসের ক্রসবেঞ্চ সদস্য শায়েস্তা গোহির।

সম্প্রতি গোহির, যিনি মুসলিম উইমেন্স নেটওয়ার্কের প্রধানও, সরকারের নীরবতার সমালোচনা করে বলেন, “ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে ৩.৯ মিলিয়ন মুসলমানের বসবাস, অথচ ইসলামোফোবিক অপরাধ গত এক বছরে ২,৬৯০ থেকে বেড়ে ৩,১৯৯-এ পৌঁছেছে।”

২০১৯ সালে লেবার পার্টি অল-পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ (APPG) অন ব্রিটিশ মুসলিমসের প্রস্তাবিত সংজ্ঞা গ্রহণ করে। সেখানে বলা হয়েছিল, “ইসলামোফোবিয়া বর্ণবাদের শিকড়ে নিহিত এবং এটি মুসলিম পরিচয় বা মুসলিম হিসেবে ধারণার ওপর ভিত্তি করে এক ধরনের বর্ণবাদ।”

এই সংজ্ঞাটি লেবার পার্টি, লিবারেল ডেমোক্র্যাটস ও স্কটিশ কনজারভেটিভরা গ্রহণ করলেও, কনজারভেটিভ সরকার তখন তা প্রত্যাখ্যান করে জানায় যে সংজ্ঞাটি “বিস্তৃতভাবে গৃহীত হয়নি” এবং আরও পর্যালোচনা প্রয়োজন।

ইক্যুয়ালিটি অ্যাক্ট ২০১০ অনুযায়ী ইসলাম ধর্ম হিসেবে সুরক্ষিত, কিন্তু মুসলমানদের একটি বর্ণগোষ্ঠী হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি। ফলে তারা বর্ণগত বৈষম্যের বিরুদ্ধে পূর্ণ সুরক্ষা পান না। বিপরীতে, ২০১৬ সালে সরকার ইন্টারন্যাশনাল হলোকাস্ট রিমেমব্রেন্স অ্যালায়েন্স (IHRA)-এর প্রস্তাবিত ইহুদিবিদ্বেষবিরোধী সংজ্ঞা গ্রহণ করেছিল, যা পরবর্তীতে সব প্রধান রাজনৈতিক দল অনুসরণ করে।

দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসা আফজাল খান বলেন, লেবার সরকার যেন “গতি হারিয়ে না ফেলে”। তার ভাষায়, “যুক্তরাজ্যে রেকর্ডকৃত ধর্মীয় ঘৃণাজনিত অপরাধের মধ্যে মুসলমানরাই সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত। এটি চরম ডানপন্থিদের উস্কানিমূলক বক্তৃতার ফল।”

ম্যানচেস্টারের রাশহোম আসনের এই এমপি বলেন, “আমাদের এখনই এমন একটি শক্তিশালী সংজ্ঞা দরকার যা মুসলমানদের সুরক্ষা দেবে এবং একইসঙ্গে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাও বজায় রাখবে।”

একজন কমিউনিটি ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন, “আমরা ওয়ার্কিং গ্রুপের সুপারিশগুলো সতর্কতার সঙ্গে পর্যালোচনা করছি এবং যথাসময়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাব।”

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে

আরো পড়ুন

ক্যারফিলিতে লেবারের শতবর্ষী দুর্গ ভেঙে দিল ভোটারদের রায়ঃ বোরিস জনসনের কটাক্ষ

‘আগস্টের মধ্যে করোনামুক্ত হবে যুক্তরাজ্য’

বরিস জনসনকে প্রকাশ্যে মিথ্যাবাদী ও আইনভঙ্গকারী বললেন ব্রিটিশ কলামিস্ট