- মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তিন শিক্ষার্থী
- মেজর সিনহার সঙ্গে ছিলেন সিফাত
- রিসোর্ট থেকে আটক হয়েছিলেন শিপ্রা
- এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রকাশ পেতে থাকে অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও সন্দেহজনক নানা তথ্য
শুক্রবার (৩১ জুলাই) রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সাবেক মেজর সিনহা রাশেদ খান।
এদিকে ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন রাজধানীর স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী। তারা হলেন শিপ্রা দেবনাথ, সাহেদুল ইসলাম সিফাত এবং তাহসিন রিফাত নূর।
জানা যায়, তাহসিন রিফাত নূরকে তাদের অভিভাবকের কাছে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। বাকি দুইজন, শিপ্রা দেবনাথ এবং সাহেদুল ইসলাম সিফাত এখন রয়েছেন কক্সবাজার কারাগারে। সিফাতের বিরুদ্ধে দুটি মামলা এবং শিপ্রা দেবনাথের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। ফিল্ম এন্ড মিডিয়া বিভাগের এই তিন শিক্ষার্থী সাবেক মেজর সিনহার সঙ্গে তথ্যচিত্র নির্মাণে সহযোগিতা করছিলেন।
সংবাদ মাধ্যম এবং ইন্টারনেট ভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগের প্লাটফর্মে এ বিষয়ে যত আলোচনা হচ্ছে, এর বেশিরভাগই চলছে নিহত সাবেক সেনা কর্মকর্তা এবং টেকনাফ পুলিশকে কেন্দ্র করে। কারাগারে আটক শিক্ষার্থীদের ভাগ্যে কি ঘটতে চলেছে বা ঘটনার সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা বা ভূমিকার কথা থেকে যাচ্ছে অনেকটাই অগোচরে। এই তিনজনের ভবিষ্যত নিয়ে যেমন শঙ্কিত তাদের অভিভাবকরা, তেমনি তাদেরকে ভুক্তভোগী বলে মনে করছেন আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও সহপাঠীরা। এছাড়াও, এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও সন্দেহজনক নানা তথ্য প্রকাশিত হতে থাকলে জনমনেও জেগে ওঠে হাজারো প্রশ্ন।
মেজর সিনহার সঙ্গে ছিলেন সিফাত
বিবিসি বাংলার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়,পুলিশের গুলিতে যখন সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ নিহত হন তখন সেখানে তার সঙ্গে ছিলেন সাহেদুল ইসলাম সিফাত।
সিফাতের বিরুদ্ধে একটি মামলা হচ্ছে, সরকারি কাজে বাধা দেয়া ও হত্যার উদ্দেশ্যে অস্ত্র দিয়ে গুলি করার জন্য তাক করা। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, সিনহা মোহাম্মদ রাশেদের সাথে যোগসাজশে সিফাত এ কাজ করেছে।
তার বিরুদ্ধে দায়ের করা আরেকটি মামলা মাদকদ্রব্য আইনে। সে মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে ‘অবৈধ মাদক’ ইয়াবা ট্যাবলেট এবং গাঁজা নিজ হেফাজতে রাখার অপরাধ।
রিসোর্ট থেকে আটক হয়েছিলেন শিপ্রা
অন্যদিকে শিপ্রা দেবনাথের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশের ভাষ্য মতে, মেজর সিনহাকে গুলি করার পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, হিমছড়ি নীলিমা রিসোর্টে তাদের অস্ত্রের লাইসেন্স রয়েছে। এরপর সেটি খুঁজতে পুলিশ রিসোর্টে যায়। সে রিসোর্টে গিয়ে একটি কক্ষে শিপ্রা দেবনাথ এবং আরেকটি কক্ষে তাহসিন রিফাত নূরকে পাওয়া যায়।
এজাহারে পুলিশ উল্লেখ করেছে, শিপ্রা দেবনাথের কক্ষ তল্লাশি করে সেখানে বিদেশি মদ, দেশি চোলাই মদ এবং গাঁজা পাওয়া যায়। [সূত্র: বিবিসি বাংলা]
পরিবার ও সহপাঠীদের কথা
এই তিনজনের বিরুদ্ধে পুলিশের দাবি করা অভিযোগ পুরোই ভিত্তিহীন বলে মনে করেন তাদের অভিভাবকরা।
সময়টিভির প্রতিবেদনে জানা যায়, সিফাতের শৈশব কেটেছে বরগুনার বামনা উপজেলায় নানার বাড়িতে। এসএসসি পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন সেখানেই। শিক্ষক ও বন্ধুদের মুখে সিফাতের ফটোগ্রফির শখ ও ভ্রমণ নেশার কথা উঠে আসে। কিন্তু মাদক বা বখাটেপনার কোন তথ্য মেলেনি।
সহপাঠীদের একজন বলেন, ‘আমাদের ব্যাচের মধ্যে সবচেয়ে শান্ত ছেলে সিফাত।‘
স্বজনরা বলছেন, ঘটনায় সম্পৃক্ত পুলিশ সদস্যরা গ্রেফতার হওয়া ও আদালতে রিমান্ড মন্জুর হওয়াই প্রমাণ করে সিফাতের বিরুদ্ধে করা মামলা মিথ্যা ও সাজানো।
এদিকে শিপ্রা দেবনাথের বাড়ি কুষ্টিয়ার মিরপুর থানায়। তার বাবা-মা সেখানেই বসবাস করেন। ঢাকার রামপুরা এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন শিপ্রা দেবনাথ।
শিপ্রা দেবনাথের একমাত্র ভাই প্রান্ত দেবনাথ বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। তার সঙ্গে টেলিফোন সাক্ষাৎকারের বরাত দিয়ে বিবিসি বাংলা প্রকাশ করে, বছর খানেক আগে কোন এক বন্ধুর মাধ্যমে সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের সাথে পরিচয় হয় শিপ্রা দেবনাথের। দুজনেরই আগ্রহের ক্ষেত্র ছিল ইউটিউব চ্যানেলের জন্য ডকুমেন্টারি তৈরি করা।
সহপাঠীদের দাবি
সিফাত ও শীপ্রার মুক্তির দাবি জানিয়েছে স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া অনুষদের শিক্ষার্থীরা।
দেশীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, শুক্রবার (৭ আগস্ট) বিকালে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত শিক্ষার্থীদের এক গণজমায়েত থেকে এই দাবি জানানো হয়। গণজমায়েতে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ করেন।
গণজমায়েতে শিক্ষার্থীরা বলে, চিত্রগ্রাহক সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও নির্মাতা শিপ্রা দেবনাথের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। মিডিয়া পাড়ার প্রত্যেকেই তাদের চেনেন। শিল্পমনা এই শিক্ষার্থীরা কতটুকু অনৈতিক হতে পারে তাও সকলের জানা। তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ বাস্তবতার সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে অসঙ্গতিপূর্ণ।
তাদের দাবি, শিপ্রা ও সিফাতের সার্বিক নিরাপত্তা ও নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে, তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে, আটককৃত শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং তাদেরকে মানসিক প্রহসন হতে মুক্তি প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
৮ আগস্ট ২০২০