6.5 C
London
December 19, 2024
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্য হতে ডিপোর্ট পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ করার পরিকল্পনা

যুক্তরাজ্য সরকার ঘোষণা করেছে যে ক্ষমতায় আসার পর থেকে তারা প্রায় ১৩,৫০০ মানুষকে নির্বাসিত করেছে। যুক্তরাজ্যের মন্ত্রীরা দাবি করছেন তাদের কঠোর অভিবাসন নীতির কারণে এই সফলতা সম্ভব হয়েছে। তবে মানবাধিকার কর্মীরা সতর্ক করেছেন কঠিন অভিবাসন নীতির কারণে অনেক মানুষের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়তে যাচ্ছে।

লেবার সরকার জানিয়েছে তারা পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক ফেরত পাঠানোর লক্ষ্যে কাজ করছে। যেখানে ডিপোর্টেসনের জন্য চারটি ফ্লাইট অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে জানা যায়, এই মাসের শুরুতে চারটির মধ্যে অন্তত তিনটি ফ্লাইট ব্রাজিলে গিয়েছে। চতুর্থ ফ্লাইটটিও সেখানেই যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

খবরে জানা যায়, ৫ জুলাই থেকে ৭ ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত মোট ১৩,৪৬০ জনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। যার অধিকাংশই স্বেচ্ছায় নিজ দেশে ফেরত গিয়েছেন। তবে জোরপূর্বক ফেরতের সংখ্যা ২০২৩ সালের একই সময়ের তুলনায় ২৫% বৃদ্ধি পেয়েছে।

হোম অফিস অন্তত সাতটি দেশে নির্বাসন ফ্লাইটের ব্যবস্থা করেছিল, যার মধ্যে পাকিস্তান, নাইজেরিয়া এবং আলবেনিয়া রয়েছে। হোম অফিস সূত্র নিশ্চিত করেছে যে পাকিস্তানে পাঠানো ফ্লাইটে ৩৭ জন ব্যক্তি ছিল। এদের মধ্যে একজন ছিলেন প্রত্যাখ্যাত আশ্রয়প্রার্থী।

হোম অফিস সেই ব্যক্তিকে নির্বাসিত করেছে কিন্তু তার স্ত্রীকে যুক্তরাজ্যে রেখে দিয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে যে নির্বাসিতদের মধ্যে অনেকেই পরিবারের সদস্যদের থেকে জোরপূর্বক বিচ্ছিন্ন হয়েছেন।

চ্যারিটি সংস্থা মেডিক্যাল জাস্টিস-এর পরিচালক এমা গিন বলেন, ” সরকার যে নতুন পরিসংখ্যান উন্মুক্ত করছে সেখানে অনেক ব্যক্তি রয়েছে শারীরিকভাবে অসুস্থ। যারা বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত থাকায় মেডিকেল প্রমাণ সংগ্রহ করতে পারেনি। এর ফলে তাদের অনেকেই নিজ দেশে ফেরার পর গুরুতর ঝুঁকির মুখে পড়তে পারেন।”

“আমাদের স্বেচ্ছাসেবী ডাক্তাররা তাদের মধ্যে অনেকের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ক্ষত চিহ্ন নথিভুক্ত করেছেন। তাছাড়া, যুক্তরাজ্যের বিপজ্জনক অভিবাসন আটক ব্যবস্থার কারণে তাদের অবস্থা আরও অবনতি হয়েছে। অনেকেই পরিবার, বন্ধু ও কমিউনিটি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন।”

গৃহসচিব ইভেট কুপার অবৈধভাবে যুক্তরাজ্যে কাজ করা অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কার্যক্রম বাড়ানোর পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। শনিবার তিনি রোমে ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যাত্তেও পিয়ান্তেদোসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, যাতে মানব পাচারকারী গ্যাংদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

কুপার বলেন:
“অবৈধ কাজ আমাদের অর্থনীতির জন্য একটি অভিশাপ। এটি শ্রমিকদের শোষণ করে এবং নিয়ম মেনে চলা ন্যায়পরায়ণ নিয়োগকারীদের জন্য অসম প্রতিযোগিতা তৈরি করে।”

“নির্বাচনের পর থেকে আমরা অবৈধ কাজ ও শোষণ বন্ধে প্রচেষ্টা বাড়িয়েছি – অভিযান এবং গ্রেফতারের সংখ্যা বেড়েছে এবং আমরা পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক ডিপোর্ট করবো এই লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি।”

সরকার সীমান্ত নিরাপত্তা বাড়াতে একটি আন্তঃসরকারি ইউনিট প্রতিষ্ঠা করেছে। নতুন এই যৌথ আন্তর্জাতিক অনিয়মিত অভিবাসন ইউনিটে এফসিডিও এবং হোম অফিস-এর কর্মকর্তারা থাকবেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেন:
“অভিবাসন কেবল একটি অভ্যন্তরীণ ইস্যু নয়। এটি আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জের সঙ্গে জড়িত, যেমন সংঘাত, জলবায়ু সংকট এবং সীমান্ত অপরাধ। গ্যাংদের ধ্বংস করতে আমাদের আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করতে হবে।

“পররাষ্ট্র দপ্তর হোম অফিসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নতুন এই যৌথ আন্তর্জাতিক অভিবাসন ইউনিটের মাধ্যমে অনিয়মিত অভিবাসন মোকাবিলা করছে।”

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল যুক্তরাজ্যের শরণার্থী ও অভিবাসী অধিকারের পরিচালক স্টিভ ভালদেজ-সাইমন্ডস বলেন,
“নতুন সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ও বোঝার ক্ষেত্রে এত কম পরিবর্তন দেখা হতাশাজনক।

“বড় সংখ্যায় মানুষকে তাড়িয়ে দেওয়া মানব শোষণ কমাবে না এবং এটি সংঘবদ্ধ অপরাধকেও ভাঙতে পারবে না।”

“এর ঝুঁকি হলো, যাদের যুক্তরাজ্যে অবস্থান করার যথেষ্ট যৌক্তিক দাবি রয়েছে বা যারা শোষণকারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও বিচারে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী হতে পারতেন তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।”

” তবে আগের সরকারের ক্ষতি মেরামত করার জন্য বর্তমান সরকারের মন্ত্রীরাও যথেষ্ট সময় পান নাই। তাই তাড়াহুড়ো করে দ্রুত যুক্তরাজ্য হতে মানুষ বা আশ্রয়প্রার্থীদের নির্বাসন অনিরাপদ এবং অবিবেচনাপ্রসূত হতে পারে।”

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে
১৬ ডিসেম্বর ২০২৪

আরো পড়ুন

বাংলাদেশের শেয়ারবাজার উন্নয়নে কাজ করবে লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ

ব্রিটেনে আশ্রয় আবেদন বাতিল বাংলাদেশিদের দ্রুত ফেরত পাঠাতে চুক্তি

চায়ের ‘নিখুঁত’ স্বাদ পেতে লবণ নিয়ে ‘হইচই’ যুক্তরাজ্যে