যুক্তরাজ্য থেকে স্থায়ীভাবে বিদেশে চলে যাওয়া ধনী নাগরিকদের ব্যবসায়িক সম্পত্তির ওপর ২০ শতাংশ কর আরোপের পরিকল্পনা বিবেচনা করছে দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়। “সেটলিং-আপ চার্জ” নামে প্রস্তাবিত এই করনীতি কার্যকর হলে সরকারি কোষাগারে বাড়তি দুই বিলিয়ন পাউন্ড রাজস্ব যোগ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চ্যান্সেলর র্যাচেল রিভসের নেতৃত্বে ট্রেজারি এই পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে।
বর্তমানে প্রবাসী বা বিদেশে বসবাসকারী ব্রিটিশ নাগরিকদের যুক্তরাজ্যে থাকা সম্পত্তি ও ভূমি বিক্রিতে ২০ শতাংশ ক্যাপিটাল গেইনস ট্যাক্স প্রযোজ্য হলেও, কোম্পানির শেয়ারসহ অনেক সম্পদের ক্ষেত্রে এই কর থেকে তারা অব্যাহতি পান। নতুন প্রস্তাবটি কার্যকর হলে যুক্তরাজ্য ত্যাগের সময় এসব সম্পদের মূল্যের ওপরও কর আরোপ করা হবে, যাতে ধনী ব্যক্তিরা বিদেশে গিয়ে কর এড়াতে না পারেন।
ট্রেজারির এক সূত্র জানায়, বাজেট ঘোষণার আগে বিভিন্ন কর সংস্কারের বিকল্প বিশ্লেষণ করছে সরকার, যার মধ্যে “সেটলিং-আপ চার্জ” অন্যতম। সূত্রটি আরও জানায়, এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি, তবে এই পদক্ষেপ যুক্তরাজ্যকে অন্যান্য জি-৭ দেশের করনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করবে।
রেজলিউশন ফাউন্ডেশন-এর গবেষণা পরিচালক জেমস স্মিথ বলেন, “ধারণাটি হলো, কেউ যদি কম করের দেশে চলে যেতে চান, তাহলে তার যুক্তরাজ্যে থাকা সম্পদের মুনাফার ওপর কর দিতে হবে। বর্তমানে, কেউ দেশ ছাড়ার পর এসব সম্পদ বিক্রি করলেও তাকে কোনো ক্যাপিটাল গেইনস ট্যাক্স দিতে হয় না। নতুন নীতিটি কার্যকর হলে এই ফাঁকফোকর বন্ধ হবে।”
তবে অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, এই করের ঘোষণা যদি আগেই দেওয়া হয় কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর না করা হয়, তবে অনেক ধনী নাগরিক কর এড়াতে আগেভাগেই দেশ ছাড়তে পারেন। এর ফলে বিনিয়োগ প্রবাহে অস্থিরতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, করদাতারা চাইলে তাদের সম্পদ বিক্রি না করেও কয়েক বছরের জন্য কর পরিশোধ স্থগিত রাখতে পারবেন। পাশাপাশি, নতুন নীতির সঙ্গে এমন একটি প্রস্তাবও যুক্ত হতে পারে, যেখানে যুক্তরাজ্যে আগমনের আগে অর্জিত বিনিয়োগের মুনাফার ওপর আর কোনো ক্যাপিটাল গেইনস ট্যাক্স দিতে হবে না। কর বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে করব্যবস্থা আরও “ন্যায্য ও ভারসাম্যপূর্ণ” হবে এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের যুক্তরাজ্যে আকৃষ্ট করবে।
এই বিষয়ে মন্তব্য করতে ট্রেজারি এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে নীতিটি কার্যকর হলে তা যুক্তরাজ্যের কর কাঠামোতে বড় পরিবর্তন আনতে পারে এবং ধনী প্রবাসীদের অর্থনৈতিক কৌশলে নতুন সমীকরণ তৈরি করতে পারে।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে

