10.9 C
London
October 5, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্যে অবৈধ অভিবাসী ৭.৫ লক্ষকে দেশছাড়া করবে টোরি পার্টিঃ কঠোর সীমান্ত পরিকল্পনা ঘোষণা

কনজারভেটিভ পার্টি ঘোষণা করেছে, আগামী নির্বাচনে জয়ী হলে তারা পাঁচ বছরের মধ্যে যুক্তরাজ্য থেকে ৭৫০,০০০ অবৈধ অভিবাসীকে বহিষ্কার করবে। দলটি বলছে, যে কেউ অনুমতি ছাড়া যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করবে, তাকে ভবিষ্যতে কখনোই আশ্রয় আবেদন করার সুযোগ দেওয়া হবে না।

নতুন পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, যাদের আশ্রয় আবেদন প্রত্যাখ্যাত হবে, তারা আর আদালতে আপিল করতে পারবে না। পরিবর্তে তাদের আপিল হোম অফিসের কর্মকর্তারা নিষ্পত্তি করবেন। সীমান্ত কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হবে, আটক ব্যক্তিদের “কয়েক ঘণ্টা বা সর্বোচ্চ কয়েক দিনের মধ্যেই” দেশ থেকে সরিয়ে দিতে। এর জন্য “রিমুভালস ফোর্স” নামে একটি বিশেষ ইউনিটের বাজেট দ্বিগুণ বাড়িয়ে বছরে ১.৬ বিলিয়ন পাউন্ড করা হবে।

দলের বার্ষিক সম্মেলন শুরু হয়েছে ম্যানচেস্টারে, যেখানে নেত্রী কেমি বেডনক ভোট জরিপে পিছিয়ে থাকলেও, রিফর্ম ইউকে দলের নাইজাল ফারাজের উত্থানের মোকাবিলায় নতুন কৌশল ঘোষণা করেছেন। ইতিমধ্যেই দলটি জানিয়েছে, তারা ইউরোপীয় মানবাধিকার কনভেনশন (ECHR) থেকে যুক্তরাজ্যকে প্রত্যাহার করবে, যাতে আশ্রয় আবেদনকারীরা আদালতে আন্তর্জাতিক আইন ব্যবহার করতে না পারে।

এই পরিকল্পনা অনুযায়ী, হোম অফিসের ইমিগ্রেশন এনফোর্সমেন্ট ইউনিটকে “রিমুভালস ফোর্স” নামে পুনর্গঠন করা হবে। ইউনিটটি প্রতি বছর অন্তত ১.৫ লক্ষ অবৈধ অভিবাসীকে সরিয়ে দেবে—অর্থাৎ সংসদের পাঁচ বছরের মেয়াদে মোট ৭.৫ লক্ষ। এতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে বর্তমানে অবৈধভাবে বসবাসকারীরা, ভবিষ্যতের অননুমোদিত আগমনকারীরা, এবং যেসব বিদেশি গুরুতর অপরাধে দোষী সাব্যস্ত।

এটি হবে গত বছরের তুলনায় প্রায় পাঁচগুণ বেশি, যখন মাত্র ৩৫,০০০ জন অভিবাসীকে যুক্তরাজ্য থেকে সরানো হয়েছিল, তাদের বেশিরভাগই স্বেচ্ছায় দেশ ত্যাগ করে। টোরি দল জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের মডেল অনুসরণ করবে, যেখানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের ব্যাপক ক্ষমতা দিয়েছেন অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেপ্তার ও বহিষ্কারের জন্য।

নতুন পরিকল্পনায় পুলিশের কাছেও নির্দেশ দেওয়া হবে যে, তারা আটককৃত প্রত্যেক ব্যক্তির বায়োমেট্রিক তথ্য যাচাই করবে এবং প্রয়োজনে জনসাধারণকে না জানিয়েই মুখ চিনে ধরার (facial recognition) প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারবে। অভিবাসীদের আটক রাখার জন্য ১,০০০ থেকে ২,০০০ জন ধারণক্ষমতার একটি নতুন সুবিধা সম্প্রসারিত করা হবে।

আশ্রয়ের শর্তও কঠোর করা হবে—শুধু যারা নিজ দেশের সরকারের হাতে প্রাণনাশের ঝুঁকিতে, তারাই আবেদন করতে পারবে। ধর্মীয় নিপীড়ন বা যৌনতার কারণে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের আর যোগ্য মনে করা হবে না। পাশাপাশি অভিবাসন ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত করে আপিল প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে হোম অফিস কর্মকর্তাদের হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

এছাড়া অভিবাসন সংক্রান্ত মামলায় সরকারি খরচে আইনি সহায়তা বন্ধ করে দেওয়া হবে। টোরি পার্টির নথিতে বলা হয়েছে, “আইনজীবীর প্রয়োজন হবে না, কারণ আবেদনগুলো ন্যায্যভাবে মূল্যায়ন করা হবে নির্ধারিত মানদণ্ডে।”

এই পরিকল্পনা নিয়ে দলীয় নেতা কেমি বেডনক বলেছেন, “রিফর্ম ইউকে শুধু ফাঁকা ঘোষণা দেয়, আমরা বাস্তবসম্মত রূপরেখা দিচ্ছি। আমাদের নীতিমালা বিস্তারিত আইনি বিশ্লেষণের ভিত্তিতে তৈরি।”

টোরিদের এই প্রস্তাব লেবার সরকারের অবস্থানের বিপরীতে নতুন বিভাজন তৈরি করেছে। লেবার দল বলেছে, তারা ECHR থেকে বের হবে না, তবে যুক্তরাজ্যের আইনে এর প্রয়োগ পুনর্মূল্যায়ন করবে। তারা ছোট নৌকা (small boats) মাধ্যমে চ্যানেল পারাপার রোধে কঠোর পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং ফ্রান্সের সঙ্গে “ওয়ান ইন, ওয়ান আউট” নীতি চালু করছে।

রিফর্ম ইউকে যেখানে ৬ লক্ষ অভিবাসী বহিষ্কারের অঙ্গীকার দিয়েছে, টোরি পার্টি বলছে তারা “বাস্তবায়নযোগ্য পরিকল্পনা” হাতে নিয়েছে, যা দেশ থেকে অবৈধ অভিবাসন প্রায় নির্মূল করতে সক্ষম হবে।

সূত্রঃ বিবিসি

এম.কে
০৫ অক্টোবর ২০২৫

আরো পড়ুন

অর্থনৈতিক সংকটে যুক্তরাজ্যের হাই স্ট্রিট ব্র‍্যান্ডের বিভিন্ন ব্রাঞ্চ বন্ধ হবার পথে

আকস্মিক সফরে যুক্তরাজ্যে জেলেনস্কি

গুচ্ছবোমা বিতর্কের মধ্যে যুক্তরাজ্য সফরে বাইডেন

নিউজ ডেস্ক