যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় পেনশন বয়স নিয়ে নতুন একটি পর্যালোচনা শুরু করেছে সরকার, যা শেষ হবে ২০২৯ সালে। বর্তমানে পেনশন বয়স ৬৬ বছর এবং প্রতি ছয় বছর অন্তর এ বিষয়ে পর্যালোচনা করা বাধ্যতামূলক।
পর্যালোচনায় বিবেচনায় নেওয়া হবে বর্তমান পেনশন বয়স যথাযথ কি না, বিশেষত দেশের গড় আয়ু ও আর্থসামাজিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে। এই পদক্ষেপ এসেছে এমন সময়ে, যখন বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন—২০৫০ সালে অবসরে যাওয়া নাগরিকরা প্রতি বছর বর্তমানের তুলনায় গড়ে £৮০০ কম পেনশন পাবে।
ডিপার্টমেন্ট ফর ওয়ার্ক অ্যান্ড পেনশনস (DWP) জানিয়েছে, কর্মক্ষম বয়সী জনগণের ৪৫% এখনো কোনো ধরনের পেনশন সঞ্চয় করছেন না। উচ্চ জীবনযাত্রার ব্যয়, রেন্টাল খরচ এবং আয়-ব্যয়ের ভারসাম্যহীনতা এর পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে।
কাজ ও পেনশন বিষয়ক সচিব লিজ কেন্ডাল বলেন, “অনেক মানুষ এখন পেনশনের চেয়ে বেশি চিন্তিত খাবার জোগাড় ও বাসাভাড়ার বিষয়ে।” তিনি আরও বলেন, “ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোও কঠিন চাপে রয়েছে, টিকে থাকাটাই অনেকের কাছে চ্যালেঞ্জ।”
এই বাস্তবতায় সরকার পেনশন কমিশন পুনরায় চালু করছে। কমিশনটি ২০০২ সালে টনি ব্লেয়ারের আমলে গঠিত হয়েছিল। এটি পর্যালোচনা করবে কেন ভবিষ্যতের পেনশনভোগীরা আর্থিকভাবে আজকের তুলনায় দুর্বল হবে।
কমিশনের অন্যতম প্রধান বিষয় হবে—অটো এনরোলমেন্টে প্রবেশের বয়স ও আয়ের সীমা কমিয়ে আরও বেশি মানুষকে পেনশন সিস্টেমের আওতায় আনা।
লিজ কেন্ডাল জানিয়েছেন, নারীরা এখনো পেনশন ব্যবস্থায় পিছিয়ে। ৫০-এর কোঠার নারীরা পুরুষদের তুলনায় অর্ধেক পেনশন আয় করছেন। তদ্ব্যতীত, স্বনির্ভর জনগোষ্ঠীর মাত্র এক-পঞ্চমাংশ পেনশনে সঞ্চয় করছেন—যার সংখ্যা ৩০ লাখের বেশি।
তিনি বলেন, “তরুণ প্রজন্ম পেনশন নিয়ে বিনিয়োগ করতে পারছে না কারণ তারা বাড়ি কিনতে পারছে না এবং ভাড়ার চাপে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। এটা এক ধরনের ‘পেনশন দারিদ্র্যের সুনামি’ তৈরি করছে।”
তবে পেনশনের ‘ট্রিপল লক’ নীতিমালায় কোনো পরিবর্তন আসবে না বলে তিনি নিশ্চিত করেছেন। এই ট্রিপল লক অনুযায়ী, পেনশন বৃদ্ধির হার নির্ধারিত হয় গড় আয়, মূল্যস্ফীতি বা ২.৫%—যেটি বেশি হয় তা অনুযায়ী।
পেনশন সংস্কার নিয়ে রিফর্ম ইউকের নেতা নাইজেল ফারাজ বলেন, অবসরের বয়স বৃদ্ধি অনিবার্য, কারণ মানুষ আগের চেয়ে বেশি দিন বাঁচছে। তিনি বেসরকারি পেনশন খাতের দুর্বলতা নিয়েও সমালোচনা করেন।
ডাউনিং স্ট্রিট জানিয়েছে, এই পর্যালোচনা রুটিন প্রক্রিয়া এবং ২০২৯ সালের মার্চে রিপোর্ট জমা দেবে। সরকারের মূল লক্ষ্য—আর্থিকভাবে অরক্ষিত ভবিষ্যতের নাগরিকদের জন্য একটি শক্তিশালী পেনশন কাঠামো গড়ে তোলা।
সূত্রঃ স্কাই নিউজ
এম.কে
২১ জুলাই ২০২৫