যুক্তরাজ্যে আশ্রয়প্রার্থীরা আধুনিক দাসত্ব সংক্রান্ত আইন ব্যাপকভাবে অপব্যবহার করছে—এমন সরকারি দাবির পক্ষে শক্ত প্রমাণ নেই বলে জানিয়েছে একটি নতুন গবেষণা। সেন্টার-রাইট থিঙ্কট্যাংক ব্রাইট ব্লু প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আশ্রয়প্রার্থীদের বড় অংশ মিথ্যাভাবে আধুনিক দাসত্বের শিকার হওয়ার দাবি করছে—এমন ধারণা বাস্তব তথ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, আধুনিক দাসত্বের শিকার হিসেবে মূল্যায়নের জন্য কাউকে নিজে থেকে আবেদন করার সুযোগ নেই। কেবল সরকারি বা অনুমোদিত সংস্থাগুলোর মাধ্যমেই কাউকে রেফার করা হয়। এসব রেফারালের প্রায় ৯৭ শতাংশই আসে বর্ডার ফোর্স, পুলিশ, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও হোম অফিসের মতো সরকারি সংস্থা থেকে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, রেফার হওয়া ব্যক্তিদের প্রায় ৯০ শতাংশের ক্ষেত্রেই ‘যৌক্তিক কারণ’ পাওয়া যায়—অর্থাৎ তারা বাস্তবেই আধুনিক দাসত্ব বা মানবপাচারের শিকার হতে পারেন। এতে বোঝা যায়, অধিকাংশ আবেদন হয়রানিমূলক বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়।
২০১৫ সালে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী থেরেসা মে আধুনিক দাসত্ব আইন চালু করেন। এরপর থেকে এই ব্যবস্থায় রেফার হওয়া ব্যক্তির সংখ্যা দ্রুত বেড়েছে। ২০১৫ সালে যেখানে রেফারেলের সংখ্যা ছিল সাড়ে তিন হাজারের মতো, সেখানে গত বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজারের বেশি।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একাধিক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এই বৃদ্ধির জন্য আশ্রয়প্রার্থীদের দায়ী করে আসছেন। তাদের অভিযোগ, বহিষ্কার এড়াতে অনেক আশ্রয়প্রার্থী নিজেকে আধুনিক দাসত্বের শিকার হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে। তবে ব্রাইট ব্লুর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই দাবি পরিসংখ্যানগতভাবে দুর্বল।
বর্তমান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী শাবানা মাহমুদ সম্প্রতি আশ্রয়প্রার্থীদের বিরুদ্ধে “শেষ মুহূর্তে হয়রানিমূলক দাবি” তোলার অভিযোগ করেন। তিনি আধুনিক দাসত্ব সংক্রান্ত আইন পুনর্লিখনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং আগামী বছরের শুরুতেই এ বিষয়ে নতুন প্রস্তাব উপস্থাপন করার কথা রয়েছে।
তবে গবেষণা বলছে, আইন পরিবর্তন করলেও আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা কমানোর ক্ষেত্রে এর প্রভাব সীমিত হতে পারে। কারণ আধুনিক দাসত্বের শিকার হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্থায়ীভাবে যুক্তরাজ্যে থাকার অনুমতি দেওয়া হয় না; সাধারণত সাময়িক অনুমতি বা ক্ষতিপূরণেই বিষয়টি সীমাবদ্ধ থাকে।
প্রতিবেদনটি সুপারিশ করেছে, আধুনিক দাসত্ব শনাক্তে দেরি না করে সীমান্ত ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও আগেভাগে প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত। এতে প্রকৃত ভুক্তভোগীদের দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব হবে এবং সীমিত পরিসরে যে অপব্যবহার ঘটে, তা বন্ধ করা সহজ হবে।
এ বিষয়ে হোম অফিসের এক মুখপাত্র বলেছেন, আধুনিক দাসত্ব সংক্রান্ত রেফারাল বাড়ছে বলেই সরকার সংস্কারের পথে যাচ্ছে। তাদের দাবি, নতুন উদ্যোগের মাধ্যমে একদিকে ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের সুরক্ষা দেওয়া হবে, অন্যদিকে অবৈধ অভিবাসন ও বহিষ্কার ঠেকানোর সুযোগ সীমিত করা হবে।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে

