TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্যে ই-ভিসা বিপর্যয়ঃ হাজার হাজার অভিবাসী ঝুঁকিতে, সময় গড়াচ্ছে শেষ মুহূর্তে

যুক্তরাজ্যের হাজার হাজার অভিবাসী এখনও পর্যন্ত তাদের ই-ভিসার জন্য নিবন্ধন করেননি, ফলে চূড়ান্ত সময়সীমার মাত্র কয়েক দিন আগে তাদের ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাস প্রমাণের কোনো মাধ্যম নেই।

হোম অফিস লক্ষ লক্ষ অভিবাসীর জন্য বায়োমেট্রিক পরিচয়পত্র বাতিল করে তার পরিবর্তে একটি অনলাইন-ভিত্তিক তথ্যব্যবস্থা চালু করেছে। যা ভ্রমণ, চাকুরি পাওয়া এবং বাসা ভাড়া নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজন হবে।

তবে এই নতুন ব্যবস্থাটি শুরু থেকেই নানা প্রযুক্তিগত সমস্যায় জর্জরিত। উচ্চ আদালতে ইতিমধ্যে একটি চ্যালেঞ্জ চলমান রয়েছে, যেখানে দাবি করা হয়েছে, অনলাইন সিস্টেম ব্যর্থ হলে যেন একটি দালিলিক বিকল্প পরিচয়পত্র প্রদান করা হয়।

হোম অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ ৪ মিলিয়নের মধ্যে মাত্র ৩.২ মিলিয়ন মানুষ ই-ভিসার জন্য নিবন্ধন করেছেন। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে আরও ১ লাখ ই-ভিসা অ্যাকাউন্ট তৈরি হয়।

হোম অফিস জানায়, চলতি বছরের শুরুতে প্রায় ১ লাখ ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়—মূলত শিক্ষার্থীদের। তবে তাদের সবাই যুক্তরাজ্য ত্যাগ করেছেন কি না বা বিকল্প ভিসার জন্য আবেদন করেছেন কি না, তা জানা নেই। এর ফলে ১ জুনের সময়সীমার মধ্যে প্রায় ৭ লাখ মানুষ ই-ভিসার জন্য নিবন্ধন না করেই রয়ে যেতে পারেন।

এছাড়াও, অনেকেই ই-ভিসা অ্যাকাউন্ট খুললেও তা কাজ করছে না—এর প্রকৃত পরিমাণ এখনও অজানা।

আইনজীবী, গণমাধ্যম ও অধিকারকর্মীরা জানিয়েছেন, ই-ভিসা সংক্রান্ত অসংখ্য অভিযোগ তারা পেয়েছেন। বিদেশি বিমানবন্দরে ই-ভিসা দেখাতে না পারায় অনেকেই যুক্তরাজ্যে ফেরার ফ্লাইটে উঠতে পারেননি, কেউ কেউ চাকরি বা বাসা ভাড়া পাওয়ার সুযোগও হারিয়েছেন।

হোম অফিস ইতিমধ্যে নিবন্ধনের সময়সীমা দুইবার বাড়িয়েছে—প্রথমে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ থেকে ৩১ মার্চ ২০২৫, পরে তা আবার বাড়িয়ে ১ জুন করা হয়েছে।

হোম অফিস স্বীকার করেছে, অন্তত দুটি বড় আইটি বিপর্যয় ঘটেছে—প্রথমটি ৫-৬ মার্চ এবং দ্বিতীয়টি ৮-৯ মে।

মার্চের ঘটনায়, একটি সিস্টেম আপডেটের কারণে কিছু ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্টে ভুল তথ্য দেখা যায়—যেমন ভুল রেফারেন্স নম্বর বা পরিচয়পত্রে ভুল। মে মাসে ভিসার তথ্য দিয়ে ইমেইল যাচাই করার সময় ব্যবহারকারীদের স্ক্রিনে ত্রুটির বার্তা দেখা দেয়, ফলে আবেদন জমা দিতে পারেননি অনেকে।

এই বিষয়ে ওপেন রাইটস গ্রুপ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
প্রতিষ্ঠানটির মাইগ্রেন্ট রাইটস প্রোগ্রাম ম্যানেজার সারা আলশেরিফ বলেন, “ত্রুটিপূর্ণ ই-ভিসা ব্যবস্থার কারণে যুক্তরাজ্যে বৈধভাবে অবস্থান করলেও অনেক মানুষ বিমানবন্দরে আটক হয়েছেন, চাকুরি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন এবং এমনকি বাস্তুহীনও হয়েছেন।”

আইনজীবী উনখা বান্দা বলেন, “আমরা দেখতে পাচ্ছি, অনেক ক্লায়েন্ট তাদের ই-ভিসা অ্যাকাউন্টে ভুল তথ্য থাকার কারণে গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, যেমন বাসস্থান, সরকারি সুবিধা ইত্যাদি। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, হোম অফিস এই সমস্যা সমাধানে যেসব পদ্ধতি চালু করেছে, সেগুলো ধীর ও কার্যকর নয়।”

তিনি আরও বলেন, “সরকারের হাতে বিকল্প স্ট্যাটাস প্রমাণ দেওয়ার আইনগত ক্ষমতা আছে। এখনই সময়, সেই পথ গ্রহণের—নইলে আরও মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।”

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে
১৬ মে ২০২৫

আরো পড়ুন

গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে ইসরায়েলি চিকিৎসা সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করল ব্রিটিশ বিএমএ

হোম অফিস কর্তৃক কিছু আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের দেশত্যাগের নির্দেশনা

নিউজ ডেস্ক

নতুন লেবার সরকার: প্রপার্টি মার্কেট ও অর্থনীতিতে সম্ভাব্য পরিবর্তন

নিউজ ডেস্ক