TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্যে ইমিগ্রেশন নীতিতে বড় মোড়ঃ অভিবাসীরা নাগরিক না হওয়া পর্যন্ত বেনিফিট পাবে না

যুক্তরাজ্য সরকার এমন এক নতুন ইমিগ্রেশন পরিকল্পনা প্রস্তাব করেছে, যেখানে অভিবাসীরা ন্যূনতম দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হতে পারে সামাজিক ভাতা (benefits) এবং বাসা ভাড়া (social housing) সুবিধা পাওয়ার জন্য। হোম সেক্রেটারি শাবানা মাহমুদ বলেন, এটি “অধিকার নয়, অর্জনযোগ্য বিশেষাধিকার” এবং নতুন নিয়ম “অবদান, সংহতি ও ন্যায্যতার মূল্যবোধকে কেন্দ্র করে” গঠিত হবে।

নতুন কনসেপ্ট অনুযায়ী, অভিবাসীরা সেটেলমেন্ট বা ILR (Indefinite Leave to Remain) পাওয়ার পরই বেনিফিটের জন্য যোগ্য হবেন না, বরং নাগরিক হওয়ার প্রয়োজন হবে। বিশেষ করে, ছোট নৌকায় (small boats) আসা অভিবাসীদের দীর্ঘ মেয়াদে বসবাসের জন্য অপেক্ষার সময় প্রস্তাবিতভাবে ৩০ বছর পর্যন্ত হতে পারে।

সরকারের প্রস্তাবটি যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য ও কেয়ার কর্মী গ্রুপকে বড় পরিবর্তনের মুখোমুখি করবে — “বোরিস ওয়েভ” নামে পরিচিত সময়ের মধ্যে যুক্তরাজ্যে আসা প্রায় ৬ লাখ স্বাস্থ্যকর্মী ও তাদের পরিবার, যদি বেনিফিট দাবি করে থাকেন, তারা ২৫ বছর পর্যন্ত বসবাসের অনুমতি বা সেটেলমেন্ট পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হতে পারে।

এই প্রস্তাব গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে এনজিও ও শরণার্থী সহায়তা গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে। রিফিউজি কাউন্সিল বলেছে, দীর্ঘ প্রতীক্ষা ও প্রায় বারবার পর্যালোচনা প্রক্রিয়া (repeated reviews) “ব্যয়বহুল আমলাতন্ত্র” তৈরি করবে এবং শরণার্থীদের জীবনকে অনিশ্চয়তার মধ্যে আটকে রাখবে, ঠিক তখনই যখন তাদের স্থিতিশীলতা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

অফিশিয়াল ভাষণে মাহমুদ উল্লেখ করেন, “গত বছরের অতিরিক্ত যুক্তরাজ্যে প্রবেশের কারণে পরিকাঠামোগত চাপে” এই প্রবল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি যুক্ত করে বলেন, নতুন সিস্টেম “ভাঙা ইমিগ্রেশন ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করআ যায়” এবং সেটি এমনভাবে ডিজাইন করা হচ্ছে যাতে যারা ইতিবাচক অবদান রাখে সমাজে, তাদের জন্য পথ গড়ে দেওয়া যায়।

সরকার ইতিমধ্যেই একটি “আর্জিত সেটেলমেন্ট” (earned settlement) পন্থা প্রস্তাব করেছে, যেখানে স্বেচ্ছাসেবক কাজ, ইংরেজি দক্ষতা এবং বেনিফিট-নির্ভরতা কম থাকা বিচার বিবেচনায় রাখা হবে দ্রুত সেটেলমেন্টের ক্ষেত্রে। এখন পর্যন্ত পার্লামেন্টে পরিমার্জিত এক বিল চলছে, যা শ্রমিক অধিকার ও ইমিগ্রেশন প্রটেকশনকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কাজ করছে।

তবে সমালোচনায় বলা হচ্ছে, প্রস্তাবিত নিয়মগুলো বাস্তবায়ন ও নজরদারি ব্যবস্থায় বড় ফাঁক রয়েছে। গবেষণা দেখাচ্ছে যে, দীর্ঘ প্রতীক্ষা, প্রশাসনিক জটিলতা এবং অস্পষ্ট নীতিমালা অভিবাসীদের জন্য নতুন ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, বিশেষ করে যাদের আর্থিক ও মানসিক ব্যাকগ্রাউন্ড দুর্বল।

সামগ্রিকভাবে, এই পরিকল্পনা যুক্তরাজ্যের ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা এবং সামাজিক সুরক্ষা নীতিতে এক নতুন অধ্যায় খুলছে — তবে একাধিক পক্ষই বলছেন, এটি বাস্তবায়িত হলে তা অভিবাসীদের অধিকার, সামাজিক একীকরণ এবং মানবিক মূল্যবোধের দৃষ্টিকোণে “কষ্টকর এবং ঝুঁকিপূর্ণ” হয়ে উঠতে পারে।

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে

আরো পড়ুন

যুক্তরাজ্যের একটি অভিবাসন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয়প্রার্থীর মৃত্যু

চার্লসের রাজ্যাভিষেকে আসবেন প্রিন্স হ্যারি

যুক্তরাজ্যে আশ্রয়প্রার্থীর প্রবেশ পথ বন্ধে বিদেশি শিক্ষার্থী নিয়োগে নতুন শর্ত আরোপ