যুক্তরাজ্যের হোম সেক্রেটারি শাবানা মাহমুদ দেশের এসাইলাম নীতিতে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে কঠোর ও ব্যাপক সংস্কারের ঘোষণা দিতে যাচ্ছেন, যার মূল লক্ষ্য অবৈধ অভিবাসী ফেরত ত্বরান্বিত করা এবং মানবাধিকার আইনের প্রয়োগ পুনঃসংজ্ঞায়িত করা। সোমবার পার্লামেন্টে দেওয়া বিবৃতিতে তিনি বহুস্তরীয় আপিল বন্ধ করা, অস্থায়ী আশ্রয়ব্যবস্থা চালু করা এবং বিদেশি অপরাধীদের দ্রুত ফেরত পাঠানোর জন্য নতুন স্বাধীন সংস্থা তৈরির পরিকল্পনা তুলে ধরবেন।
নতুন নীতিতে আশ্রয় পাওয়া ব্যক্তিদের আর স্থায়ী সুরক্ষা দেওয়া হবে না। বরং তাদের অবস্থান প্রতি দুই-দুই-অর্ধ বছর পর পর পুনর্বিবেচনা করা হবে। নিজ দেশকে যে কোনো সময় নিরাপদ ঘোষণা করা হলে তাদের ফেরত পাঠানো হবে। স্থায়ী বসবাসের জন্য বর্তমান পাঁচ বছরের বদলে ২০ বছর যুক্তরাজ্যে থাকতে হবে, আর পরিবারের সদস্য আনার ক্ষেত্রে অনুমতি সীমিত থাকবে কেবল নিকটাত্মীয়—পিতা-মাতা বা সন্তান—পর্যন্ত।
অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠাতে সহযোগিতা না করলে অ্যাঙ্গোলা, নামিবিয়া ও ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোকে ভিসা দেওয়া বন্ধ করা হবে—এ ঘোষণাও দিতে প্রস্তুত হোম সেক্রেটারি। হোম অফিসের এক সূত্র জানায়, এই দেশগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে তাদের “অত্যন্ত কম সহযোগিতা ও বাধাসৃষ্টিকারী ফেরত নীতি”র কারণে।
সরকার দাবি করছে, এসব পরিবর্তন ছোট নৌকাযোগে অভিবাসী প্রবেশ কমাবে এবং ব্যর্থ আবেদনকারীদের অপসারণ দ্রুত হবে। নতুন পরিকল্পনায় আপিলের সুযোগ সীমিত করে একটি মাত্র আবেদনেই সব যুক্তি তুলে ধরতে হবে। ডেনমার্কের মডেল অনুসরণ করে একটি স্বাধীন সংস্থা বিদেশি অপরাধী ও সম্ভাবনাহীন মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করবে।
মানবাধিকার আইনেও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসছে। ECHR-এর আর্টিকেল ৮—যা পরিবারিক জীবনের অধিকার দেয়—এখন কেবল যুক্তরাজ্যে থাকা সরাসরি আত্মীয়দের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। আর্টিকেল ৩–এর প্রয়োগ, যা অমানবিক আচরণ থেকে সুরক্ষা দেয়, পুনর্গঠন করা হবে কারণ সরকার মনে করে এটি অপব্যবহারের সুযোগ তৈরি করেছে; বিশেষ করে অপরাধীরা স্বাস্থ্যসেবার যুক্তি দিয়ে বহিষ্কার রুখে দিচ্ছে। একইভাবে ‘মডার্ন স্লেভারি অ্যাক্ট’ কঠোর করা হবে যাতে শেষ মুহূর্তের দাবি এনে অপসারণ ঠেকানো না যায়।
প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টার্মার বলেন, সংস্কারগুলো “অবিরাম আপিলের চক্র” ভেঙে যাদের থাকার অধিকার নেই তাদের দ্রুত ফেরত পাঠানোর পথ তৈরি করবে। মাহমুদ যুক্তি দেন, অভিবাসনের “গতি ও মাত্রা” স্থানীয় সম্প্রদায়কে অস্থিতিশীল করেছে এবং “শৃঙ্খলা ও নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে আনতে” এসব পদক্ষেপ প্রয়োজন।
ব্যাকলগও পরিস্থিতিকে জটিল করেছে। জুন ২০২৫ পর্যন্ত এক বছরে যুক্তরাজ্যে আশ্রয়ের আবেদন রেকর্ড ১,১১,০০০-এ পৌঁছেছে এবং আপিলে জট আটকে আছে আরও ৫০,০০০ মামলা, যেখানে অপেক্ষার সময় কমপক্ষে এক বছর।
তবে লেবার পার্টির ভেতর থেকেই সমালোচনা উঠেছে। এমপি রেচেল মাস্কেল বলেন, ECHR–এ পরিবর্তন আনা “এক ধাপ বেশি” এবং মানবাধিকার কাঠামো দুর্বল করার আশঙ্কা তৈরি করবে। রিফর্ম ইউকের নেতা নাইজেল ফারাজ মন্তব্য করেন, পরিকল্পনা “রিফর্মের মতো শোনালেও” মানবাধিকার আইন ও লেবার ব্যাকবেঞ্চারদের কারণে এটি বাস্তবায়ন অসম্ভব।
রিফিউজি কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী এনভার সলোমন বলেন, ২০ বছর অপেক্ষার নিয়ম মানুষকে দীর্ঘমেয়াদি অনিশ্চয়তায় ফেলবে এবং “উদ্বেগের” জন্ম দেবে।
লিবারেল ডেমোক্র্যাটসের ম্যাক্স উইলকিনসন বলেন, সরকারের উচিত দাবিগুলো দ্রুত ও সঠিকভাবে প্রক্রিয়া করা এবং অবৈধদের দ্রুত ফেরত পাঠানো—নীতি জটিল না করে।
সূত্রঃ বিবিসি
এম.কে

