পোষা প্রাণী হিসেবে বিভিন্ন তারকার কোলে শোভা পায় ফ্রেঞ্চ বুলডগ জাতের কুকুর। বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও অসংখ্য বিজ্ঞাপনেও এ জাতের কুকুরের দেখা মেলে। কিন্তু হঠাৎই ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের রাস্তায় বেড়ে গেছে পরিত্যক্ত ফ্রেঞ্চ বুলডগের সংখ্যা।
দাতব্য সংস্থা রয়্যাল সোসাইটি ফর দ্য প্রিভেনশন অব ক্রুয়েলটি টু অ্যানিমেলস (আরএসপিসিএ) জানায়, ২০২০ সালে মালিকদের পরিত্যক্ত ফ্রেঞ্চ বুলডগের সংখ্যা ছিল ৮। ২০২৩ সালে এ সংখ্যা বেড়ে হয় ৫৮২। অর্থাৎ গত তিন বছরে পরিত্যক্ত বুলডগের সংখ্যা ৭ হাজার শতাংশ বেড়েছে।
অন্যান্য জাতের কুকুরের মধ্যেও পরিত্যক্ত হওয়ার সংখ্যা বাড়লেও ফ্রেঞ্চ বুলডগের ক্ষেত্রে এ সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি। দাতব্য সংস্থাটির তথ্য অনুসারে, ২০২০ সালে পরিত্যক্ত স্টাফোর্ডশায়ার বুল টেরিয়ার্সের সংখ্যা ছিল ৪৫। ২০২৩ সালে এ সংখ্যা বেড়ে হয় ১ হাজার ৩২২।
আরএসপিসিএর কুকুর কল্যাণ বিশেষজ্ঞ এসমে হুইলার বলেন, পোষা কুকুরকে পরিত্যাগ করার পেছনের কারণগুলো জটিল। কুকুর পালনে ব্যয় বেড়ে যাওয়া এর একটি কারণ হতে পারে। অন্যান্য জাতের কুকুরের চেয়ে ফ্রেঞ্চ বুলডগের পেছনে খরচ অনেক বেশি।
যুক্তরাজ্যের কুকুর জাতীয় প্রাণীর কল্যাণের সরকারি সংস্থা কেনেল ক্লাব অনুসারে, ২০১৪ সালে নিবন্ধিত ফ্রেঞ্চ বুলডগের সংখ্যা ছিল ৯ হাজার ৬৭০। ২০২১ সালে তা বেড়ে হয় ৫৪ হাজার ৭৪টি। কিন্তু ২০২৩ সালে হুট করেই এ নিবন্ধনের সংখ্যা কমে ২৬ হাজার ৭০৪-এ এসে ঠেকেছে। জনপ্রিয়তার দিক থেকে বিশুদ্ধ জাতের কুকুরের মধ্যে ল্যাব্রেডরের পরেই দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ফ্রেঞ্চ বুলডগ।
তবে হুইলার বলছেন, কুকুরের সংখ্যা বাড়লেই যে পরিত্যক্ত কুকুরের সংখ্যা বাড়বে, তা ঠিক নয়। কারণ, পোষা কুকুরকে পরিত্যাগ করার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। আমার মনে হয় না ফ্রেঞ্চ বুলডগ জাতের কুকুর বেড়ে যাওয়ার কারণে এটি হয়েছে।
পাগস ও বুলডগের মতো অন্যান্য চ্যাপ্টা মুখের কুকুরের মতো ফ্রেঞ্চ বুলডগেরও নানা স্বাস্থ্যগত জটিলতা রয়েছে। ব্র্যাকিসেফ্যালিক এ কুকুরগুলোর চর্মরোগ, চক্ষুরোগ, বাচ্চা প্রসবে জটিলতা ও শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি।
রয়্যাল ভেটেরিনারি কলেজের কম্প্যানিয়ন অ্যানিমেল এপিডেমিওলজির সহযোগী অধ্যাপক ড্যান ও’নিল বলেন, ‘রয়্যাল ভেটেরিনারি কলেজের ভেটকম্পাসের গবেষণা অনুসারে, শঙ্করজাতের কুকুরের প্রতিবছর অন্তত একটি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ২৪ শতাংশ বেশি। এ ধরনের কুকুরের মালিকদের এ ক্ষেত্রে চিকিৎসা ব্যয় আরও বেশি গুনতে হতে পারে।’
স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও চিকিৎসা ব্য়য় বেশি হওয়ায় এ ধরনের কুকুরের বিমা খরচও বেশি হয়। অন্যান্য জাতের কুকুরের তুলনায় ফ্রেঞ্চ বুলডগসের এ-সংক্রান্ত ব্যয় অনেক বেশি।
কেনেল ক্লাবের স্বাস্থ্য, কল্যাণ ও প্রজনন বিষয়ক নির্বাহী কর্মকর্তা বিল ল্যাম্বার্ট বলেন, ‘প্রায় সব জাতের কুকুর পরিত্যাগ বেড়ে যাওয়া লকডাউন পরবর্তী জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং অবিবেচনাপ্রসূত ক্রয় সিদ্ধান্তের একটি দুঃখজনক প্রতিচ্ছবি।’
সূত্রঃ আরএসপিসিএ
এম.কে
১৮ মার্চ ২০২৪