ব্রিটেনে দক্ষ কর্মী ভিসা ইস্যুর নামে সংঘবদ্ধ প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়েছেন বহু অভিবাসী৷ ব্রিটিশ দৈনিক ডেইলি মেইল-এর এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে৷
সোমবার (৯ জুন) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিরক্ষর অভিবাসীদের ‘দক্ষ কর্মী’ ভিসা পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এই প্রতারণায় সংশ্লিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান হাজার হাজার ইউরো হাতিয়ে নিয়েছে৷ এসব অভিবাসীদের পরবর্তীতে যুক্তরাজ্যে নিয়ে গিয়ে কম বেতনের দীর্ঘ মেয়াদি কাজে নিয়োগ করতো অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো৷
অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভিবাসীদের সঙ্গে প্রতারণার এই কৌশলটি ছিল সুপরিকল্পিত৷ ভিসা পাইয়ে দেওয়ার দায়িত্বে থাকা যুক্তরাজ্যের অভিবাসন দপ্তরের (ওআইএসসি) নিবন্ধিত কিছু অভিবাসন পরামর্শদাতা সংশ্লিষ্ট আবেদনকারীদের পড়াশোনা ও কাজের অভিজ্ঞতা অতিরঞ্জিত করে দেখাতে বলতেন৷
একবার ভিসা মিললে, তাদের যুক্তরাজ্যে নিয়ে এসে সপ্তাহে ৬০ ঘণ্টার বেশি খাটানো হতো৷ আর মাস শেষে দেয়া হয়ে নয়শ ইউরোর সমপরিমাণ অর্থ৷
ডেইলি মেইলের অনুসন্ধানে বলা হয়, চাকুরি ও ভিসা মিলিয়ে অভিবাসীদের কাছ থেকে ২২ হাজার থেকে ২৬ হাজার ইউরো পর্যন্ত নেওয়া হতো৷ অথচ নিয়ম অনুযায়ী, ভিসার শর্ত পূরণে তাদের বেতন হওয়ার কথা ছিল সাড়ে তিন হাজার ইউরোর বেশি৷ বাস্তবে সেই অর্থের বড় অংশ কেটে রাখে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান৷
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের রক্ষণশীল এক এমপি ক্রিস ফিলিপ এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানান৷ তিনি বলেন, ‘‘অভিবাসন আইনজীবী ও পরামর্শদাতারা এই ধরনের প্রতারণার সঙ্গে নিয়মিত যুক্ত থাকছেন৷ এটি উদ্বেগজনক৷’’
এ প্রসঙ্গে যুক্তরাজ্যের সীমান্ত নিরাপত্তা ও আশ্রয়বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাঞ্জেলা ঈগল জানান, ইতোমধ্যে এক প্রতিষ্ঠানের স্পনসর লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে৷ অভিযোগ প্রমাণিত হলে আরো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান তিনি৷
ব্রিটেনে ২০২০ সালে চালু হওয়া দক্ষ কর্মী ভিসা কর্মসূচির আওতায় গত তিন বছরেই ইস্যু করা হয়েছে নয় লাখ ৩১ হাজারের বেশি ভিসা৷ যা সরকারের পূর্বানুমানের চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি৷
যুক্তরাজ্যে এই ভিসাগুলোর চাহিদা সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যসেবা ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে৷ তবে নতুন নিয়ম অনুযায়ী, এখন থেকে এই ভিসা পেতে হলে বার্ষিক অন্তত ৩৮ হাজার ৭০০ পাউন্ড অর্থাৎ প্রায় ৪৬ হাজার ইউরো বেতনের চাকরির প্রস্তাব থাকতে হবে৷
প্রতারণামূলক এই প্রক্রিয়া এতটাই লাভজনক হয়ে উঠেছিল যে, কেবল এই উদ্দেশ্যে বহু প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছিল৷ এসব প্রতিষ্ঠান এক বছর অভিবাসীদের খাটিয়ে বন্ধ হয়ে যায় বলে জানায় ডেইলি মেইল৷
যুক্তরাজ্যে স্থায়ী হওয়ার আশায় এই ভিসা ব্যবস্থাকে কাজে লাগাতে গিয়ে অভিবাসীরা শিকার হচ্ছেন ভয়াবহ শোষণের৷ এসব অভিযোগ সামনে আসায় অভিবাসন ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও নজরদারি আরো বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো৷
সূত্রঃ ডেইলি মেইল
এম.কে
১৩ জুন ২০২৫