অভিবাসন ও জাতিগত ইস্যুতে ক্রমবর্ধমান ‘বিষাক্ত রাজনৈতিক ভাষ্য’ এবং ডানপন্থী উসকানির কারণে যুক্তরাজ্যের শতাধিক দাতব্য সংস্থা এখন নিরাপত্তা সংকটে পড়েছে। কর্মী, স্বেচ্ছাসেবক ও উপকারভোগীদের বিরুদ্ধে ভয়ভীতি, হামলার হুমকি ও বর্ণবাদী গালিগালাজের ঘটনা বেড়েই চলেছে।
শরণার্থী সহায়তা সংস্থা, মুসলিম ও ইহুদি সংগঠন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, নারী ও যুব উন্নয়ন সংস্থা, গৃহহীনদের সহায়তা কেন্দ্রসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান হামলার শিকার হয়েছে। কোথাও অফিস ভাঙচুর, কোথাও দেয়ালে অভিবাসনবিরোধী গ্রাফিতি, আবার কোথাও নারী কর্মীদের ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর ভলান্টারি অর্গানাইজেশনের নির্বাহী পরিচালক সাসকিয়া কনিনেনবার্গ বলেন, “সংস্থাগুলোকে এখন তাদের কাজ ও মূল্যবোধের জন্য টার্গেট করা হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য এক ভয়াবহ নতুন বাস্তবতা।”
২০২৪ সালের সাউথপোর্ট দাঙ্গার পর থেকে পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া উগ্র অভিবাসনবিরোধী বক্তব্যগুলো মাঠপর্যায়ে সহিংসতায় রূপ নিচ্ছে। চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর আক্রমণ এখন অনলাইন থেকে সরাসরি চ্যারিটি অফিস ও আশ্রয়কেন্দ্রে ছড়িয়ে পড়েছে।
১৫০টিরও বেশি দাতব্য সংস্থা, যেমন এজ ইউকে, সিটিজেনস অ্যাডভাইস ও মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেন, এক যৌথ চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের কাছে আহ্বান জানিয়েছে, তিনি যেন “ডানপন্থী রাজনীতিকদের বিভাজন সৃষ্টিকারী উসকানির বিরুদ্ধে” দৃঢ় অবস্থান নেন।
সমতা ও মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা Equally Ours-এর প্রধান নির্বাহী আলি হ্যারিস বলেন, “হিটন পার্ক সিনাগগে ইহুদি-বিরোধী হামলাটি প্রমাণ করে দিয়েছে যে ঘৃণার রাজনীতি এখন কতটা বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। আমরা একত্রে দাঁড়াচ্ছি কারণ আমাদের কর্মী ও সম্প্রদায়গুলো নিয়মিত হুমকি ও সহিংসতার শিকার হচ্ছে।”
লন্ডনের এক শরণার্থী সহায়তা সংস্থার প্রধান জানান, তাদের এখন সময়ের ৬০ শতাংশ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। অনেক সংস্থা বাধ্য হয়ে নিরাপদ কক্ষ তৈরি, নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ, ওয়েবসাইট থেকে কর্মীদের নাম মুছে ফেলা এবং অফিসের নামফলক সরানোর মতো পদক্ষেপ নিয়েছে। এমনকি কিছু প্রতিষ্ঠান পুলিশ পরামর্শে অস্থায়ীভাবে অফিস বন্ধ করেছে ও জরুরি নিরাপত্তা পরিকল্পনা তৈরি করেছে।
পূর্ব লন্ডনের এক দাতব্য সংস্থার দপ্তরে সম্প্রতি জর্জ ক্রস ও ডানপন্থী গ্রাফিতি আঁকা হয়। দেয়াল পুনরায় রঙ করার পরও চরমপন্থীরা ফিরে এসে আবার লেখে—“ইস্ট লন্ডন স্ট্যান্ডস উইথ সাউথপোর্ট।”
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে পাঠানো চিঠিতে সংস্থাগুলো সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে—অন্তর্ভুক্তি, সমতা ও বর্ণবৈষম্যবিরোধী মূল্যবোধ রক্ষায় নেতৃত্ব দিতে এবং “রাজনৈতিক স্বার্থে বিভাজন ও ঘৃণার রাজনীতি”র বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, “ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলোর এই উসকানি শুধু অভিবাসী নয়, বরং সমাজের সব স্তরের মানুষের ক্ষতি করছে, নারীর প্রতি সহিংসতা উসকে দিচ্ছে এবং আইনের শাসন দুর্বল করছে।”
সরকারি মুখপাত্র এক বিবৃতিতে জানান, “বর্ণবাদ সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। আমরা গর্বিত একটি সহনশীল ও বৈচিত্র্যময় জাতি হিসেবে, এবং ঘৃণাজনিত অপরাধ প্রতিরোধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা রয়েছে। যারা এমন অপরাধে জড়িত, তাদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করা হবে।”
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
১৪ অক্টোবর ২০২৫