যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক মন্দার মুখে পড়েছে বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষজন। অর্থনৈতিক মন্দার উপর ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের নতুন এক গবেষণা অনুসারে, ১০ জনের মধ্যে ৬ জন এনএইচএস নার্সকে গত বছর হতে ক্রেডিট বা তাদের সঞ্চয় ব্যবহার করে জীবন অতিবাহিত করতে হচ্ছে।
তীব্র আর্থিক চাপ মোকাবেলায় নার্সরা খাবার কর্তন করছেন কিংবা ডাবল শিফট করতে বাধ্য হচ্ছেন।প্রতিবেদনে আশঙ্কা করা হয়েছে অর্থ ঘাটতি ও অপর্যাপ্ত বেতন নার্সদের এনএইচএস ছাড়তে বাধ্য করবে। ইতোমধ্যে প্রায় ৩৫,০০০ নার্সের ঘাটতিতে রয়েছে এনএইচএস।
রয়্যাল কলেজ অফ নার্সিং (আরসিএন), ইংল্যান্ডের প্রায় ১১,০০০ নার্সের উপর সমীক্ষা চালিয়েছিল। তারা সমীক্ষা অনুযায়ী দাবি করে যে নার্সিং পেশায় থেকে অন্তত ইংল্যান্ডে কাজ করে তাদের প্রাথমিক চাহিদা পূরণ অসম্ভব। যার কারণে এতো বেশি নার্স এই পেশা ছেড়ে দিতে ইচ্ছুক।
আরসিএন এর করা পৃথক আরেকটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ২০১০ সাল থেকে নার্সরা তাদের আয়ের ২৫% ভাগ অর্থ কম পাচ্ছে। লন্ডন ইকোনমিক্সের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, নার্সদের বেতন ২০১০-১১ থেকে ২০২৩-২৪ এর মধ্যে ২৪.৬৩% হ্রাস পেয়েছে।
আরসিএন সমীক্ষায় এও দেখা গিয়েছে, ৬০% নার্সরা গত ১২ মাস হতে তাদের জীবনযাত্রার ব্যয় মিটাতে সঞ্চয় ভেঙ্গে খরচ করতে হচ্ছে নতুবা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে হচ্ছে।
ইংল্যান্ডের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একজন নার্স আরসিএনকে বলেন, “ আমরা বেঁচে থাকার জন্য ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে আসছি এবং জীবন সংগ্রাম করতে গিয়ে আমরা ক্লান্ত। আমরা আমাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারি না। মাসের শেষে আমাদের হাতে টাকা অবশিষ্ট থাকে না। বেঁচে থাকার জন্য অতিরিক্ত শিফট কাজ করতে হচ্ছে। আমি এমন লোকদের সাথে কাজ করি যারা সকলেই ঋণে জর্জরিত।”
আরসিএন -এর সাধারণ সম্পাদক এবং প্রধান নির্বাহী অধ্যাপক প্যাট কুলেন বলেন, “ আজ নার্সিং কর্মীরা বিদ্যুৎ ও গ্যাসের বিল পরিশোধ করতে হিমসিম খাচ্ছে। নার্সিং সেক্টরে বেতন এত বেশি অবমূল্যায়ন করা হয়েছে যে বেঁচে থাকার জন্য ওভারটাইম ছাড়া কোন পথ খোলা নেই। কিন্তু এই ভয়াবহ পরিস্থিতি সরকার অনুধাবন করতে পারছে না ”
উল্লেখ্য যে ইংল্যান্ডের নার্সরা ২০২৩-২৪ সালে ৫% বেতন বৃদ্ধি পেয়েছে। যা সরকারী খাতে এই অর্থবছরে সকল সেক্টরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ইংল্যান্ডের এনএইচএসের এখনও ৩৪,৭০৯ জন নার্সের শূন্যপদ রয়েছে। সাম্প্রতিক এনএইচএসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৮.৮% নার্সিং পোস্ট খালি রয়েছে। বেতন ও বিভিন্ন সুবিধা প্রদানে ঘাটতির কারণে নতুন করে নার্সিং পেশায় আসতে চাচ্ছেন না লোকজন। যার ফলে বিশাল হুমকির মুখে পড়তে পারে ব্রিটেনের স্বাস্থ্যখাত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
২২ মার্চ ২০২৪