যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, দেশটির আশ্রয় আবেদন সংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলোর মাত্র অর্ধেক তাদের মান নিয়ন্ত্রণের মানদণ্ড পূরণ করে।
ঋশি সুনাকের সময়ের পুরনো আবেদন গুলোর সিদ্ধান্ত দিতে গিয়ে আইনি আপিলের খরচ এবং অন্যান্য বিষয় মিলিয়ে আবেদনকারীদের ক্ষতির ব্যাপক বৃদ্ধি ঘটাচ্ছে।
সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ মান নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ায় পরীক্ষিত ২০২৩/২৪ সালে আশ্রয় সিদ্ধান্তের মাত্র ৫২% সন্তোষজনক ছিল।যা আগের বছরে ৭২% এর তুলনায় অনেক কম। একই সময়ে, ফার্স্ট-টিয়ার ট্রাইব্যুনালে আশ্রয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিলের সংখ্যা ৮,০০০ থেকে বেড়ে ২৯,০০০ দাঁড়িয়েছে। বর্তমান সময়ে প্রায় অর্ধেক আপিল সফল হচ্ছে।
একজন আশ্রয় কর্মকর্তা অবজারভারকে জানান, ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ ৯০,০০০ পুরনো আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়াকরণের জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী সুনাকের নির্দেশনার পরে সিদ্ধান্তের গুণগত মান কমে গিয়েছে।
তিনি বলেন, “আশ্রয় আবেদন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের প্রশিক্ষণের সময় উল্লেখযোগ্য ভাবে কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুরনো ফাইলগুলোর বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত আনতে গুণগত মানের চেয়ে পরিমাণের উপর জোর দেয়া হচ্ছে। সপ্তাহে সাতটি কেইস ফাইল সম্পন্ন করার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছে, যা সিদ্ধান্তের মানের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।”
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বেশিরভাগ আশ্রয় আবেদনের সাক্ষাৎকারের সময় দুই ঘণ্টার নির্ধারণ করেছে, যা যথেষ্ট তথ্য সংগ্রহ এবং টেকসই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আইনি যাচাইয়ের জন্য অপ্রতুল ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দিতে সংক্ষিপ্ত টেমপ্লেট ব্যবহার করা হয়েছে।
২০২৩ সালের জুন মাসের একটি অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদন জানিয়েছে, মান নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া দুর্বল ছিল, যা ভুল সিদ্ধান্তের ঝুঁকি তৈরি করেছে।
“ফ্রিডম ফ্রম টর্চার”- চ্যারিটি এই মান নিয়ন্ত্রণের পরিসংখ্যানকে “উদ্বেগজনক” বলে অভিহিত করেছে। সংস্থার প্রধান সিলে রেনল্ডস বলেছেন, “যদি গুণগত মানের উপর জোর না দেওয়া হয়, তাহলে শরণার্থীদের নির্যাতন এবং অত্যাচারের ঝুঁকিতে ফেরত পাঠানোর সম্ভাবনা তৈরি হবে।”
ডানকান লুইসের একজন সলিসিটার লিলি প্যারট বলেছেন, “আমরা অপ্রত্যাশিত হারে আশ্রয় আবেদন প্রত্যাখ্যান দেখতে পাচ্ছি। এতে পেন্ডিং ফাইলের চাপ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আদালতে সরে যাচ্ছে। সিদ্ধান্তের গুণগত মান কমলে, তা আরও বেশি আপিল এবং প্রত্যাখ্যানের দিকে নিয়ে যায়।”
তিনি আরও বলেন, আশ্রয় প্রত্যাখ্যানের ক্ষেত্রে ভুলের মধ্যে রয়েছে ভুল নাম, ভুল জাতীয়তা, ভুল লিঙ্গ ব্যবহার এবং অন্য সিদ্ধান্তগুলোর অংশ কপি-পেস্ট করা।
অবজারভার আরও জানিয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে ভুল ডায়ালেক্টের দোভাষী নিয়োগ করা হয়েছে, যার ফলে আবেদনকারীদের সাক্ষ্যের ভুল রেকর্ড তৈরি হয়েছে।
কেয়ারফরক্যালাইস চ্যারিটি বলছে, এই ভুলগুলো আশ্রয়প্রার্থীদের উপর গভীর প্রভাব ফেলে, তাদের অনিশ্চয়তা এবং উদ্বেগ বাড়ায় এবং দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করতে হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, “সরকার আশ্রয় ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, যাতে এটি দ্রুত, কঠোর এবং ন্যায়সঙ্গতভাবে কাজ করে। যারা এখানে থাকার অধিকার রাখে না তাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া বাড়িয়ে আমরা আশ্রয় ব্যবস্থা সক্রিয় করছি।”
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
১০ ডিসেম্বর ২০২৪