TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্যের উইগানে অবৈধ বর্জ্য ফেলার কেলেঙ্কারিঃ কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় জনজীবন বিপর্যস্ত

যুক্তরাজ্যের উইগানের বোল্টন হাউস রোডের শেষ প্রান্তে একটি পুরনো স্ক্র্যাপইয়ার্ড এখন রূপ নিয়েছে ভয়াবহ অবৈধ বর্জ্যভূমিতে। গত শীত থেকেই প্রতিদিন বিশাল ট্রাক সেখানে বর্জ্য ফেলতে আসে— ডায়াপার, রাসায়নিক, প্লাস্টিক, গৃহস্থালির ময়লা— সবকিছু মিশে গড়ে ওঠে এক বর্জ্যের পাহাড়। স্থানীয় বাসিন্দারা কাউন্সিল, পুলিশ ও এনভায়রনমেন্ট এজেন্সির কাছে বারবার অভিযোগ করেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ পাননি।

 

বাসিন্দা লুইজ (ছদ্মনাম) বলেন, “ম্যাগট আর পচা খাবারের গন্ধে ঘরটা অসহ্য হয়ে গেছে। মাছির ঝাঁক, ইঁদুরে ভরে গেছে চারপাশ।” তার প্রতিবেশী অবসরপ্রাপ্ত টম জানান, “কর্তৃপক্ষ যেন কিছুই জানতে চায়নি।” এমনকি কাউন্সিলের একজন প্রতিনিধি নাকি তাকে গিয়ে বর্জ্যের প্রকৃতি “নিজেই দেখে রিপোর্ট করতে” বলেছিলেন।

কয়েক মাসে প্রায় ২৫ হাজার টন বর্জ্য জমে বিশাল স্তূপে পরিণত হয়। জুলাইয়ের প্রচণ্ড গরমে স্তুপের নিচে চাপা পড়ে পুরনো গাড়িগুলো। তারপরই আগুন লাগে— টানা নয় দিন ধরে শতাধিক অগ্নিনির্বাপক কর্মী আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন। পাশের স্কুল বন্ধ হয়ে যায়, পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়ে, বাসিন্দারা জানালা বন্ধ করে ধোঁয়ার মধ্যে দিন কাটান। অনেকে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।

লুইজের অভিযোগ, “আমরা বহুবার সাহায্য চেয়েছি, কেউ এগিয়ে আসেনি। এত বিষাক্ত বর্জ্যের পাশে থাকা একপ্রকার শাস্তি।”
এই ঘটনাকে স্কাই নিউজ বর্ণনা করেছে “দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া বর্জ্য অপরাধের প্রতিচ্ছবি” হিসেবে।

পরিবেশ অপরাধ এখন যুক্তরাজ্যে এক ভয়ংকর লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নামে টাকা নিয়ে অবৈধভাবে তা ফেলে দেওয়া হচ্ছে— কোনো কর না দিয়ে, কোনো নিরাপত্তা ছাড়াই। এনভায়রনমেন্ট এজেন্সির এক সাবেক প্রধান একে তুলনা করেছেন “নতুন মাদক ব্যবসা”-র সঙ্গে। শুধু ইংল্যান্ডেই প্রতি বছর প্রায় ৩৪ মিলিয়ন টন বর্জ্য অবৈধভাবে ব্যবস্থাপিত হয়— যা চার মিলিয়ন স্কিপ ভর্তি আবর্জনার সমান, আর অর্থনৈতিক ক্ষতি প্রায় এক বিলিয়ন পাউন্ড।

উইগানের এই বর্জ্য কেলেঙ্কারির আরেক শিকার নিল হার্ডউইক ও তার মেয়ে কারলা। তারা তিনটি ডিগার ভাড়া দিয়েছিলেন অজানা এক ব্যক্তিকে, পরে জানতে পারেন যন্ত্রপাতি সেই অবৈধ স্থানে ব্যবহার হচ্ছে। যন্ত্র উদ্ধার করতে গিয়ে কারলা মারধর ও হেনস্তার শিকার হন। হামলাকারীরা তাদের কাছ থেকে এক লাখ পাউন্ড চাঁদা দাবি করে। পুলিশে অভিযোগ জানালে স্থানীয় এক কর্মকর্তা উল্টো তাদের গ্রেপ্তারের হুমকি দেন। পরে তারা ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সির সহায়তায় ফের গেলে দেখতে পান মেশিনগুলো সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলা হয়েছে। নিল বলেন, “পুরো ঘটনাটা আমাদের ব্যবসা ও জীবনে ভয়াবহ প্রভাব ফেলেছে, আমাদের হাঁটু গেড়ে দিয়েছে।”

গ্রেটার ম্যানচেস্টার পুলিশ স্কাই নিউজকে জানিয়েছে, ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত চলছে এবং তাদের পেশাদারি মান যাচাই বিভাগ বিষয়টি পর্যালোচনা করছে।

অবৈধ বর্জ্য ফেলার জন্য দায়ী কে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। জমির মালিক কিংবা সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো কারও পক্ষ থেকেই কোনো জবাব মেলেনি। অথচ এসব কোম্পানিই তাদের ওয়েবসাইটে নিজেদের ‘পরিবেশবান্ধব’ ও ‘উদ্ভাবনী বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান’ বলে প্রচার করে।

স্থানীয় এমপি জশ সাইমন্স এ ঘটনাকে বলেন “দায় এড়ানোর সংস্কৃতি”— যেখানে কাউন্সিল, পুলিশ ও এনভায়রনমেন্ট এজেন্সি একে অপরের দিকে দোষ চাপাচ্ছে। তিনি বলেন, “শুরুর দিকেই আমাকে বলা হয়েছিল এটি অপরাধ তদন্তাধীন, তাই কিছুই করা যাবে না— এটা একেবারেই অযৌক্তিক।”

সাইমন্স জানান, জায়গাটি পরিষ্কার করতে প্রায় ৪.৫ মিলিয়ন পাউন্ড লাগবে, কিন্তু স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বাজেটে সেই অর্থের কোনো ব্যবস্থা নেই। তার মতে, “এ ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রম কর্মজীবী মানুষের এলাকা লক্ষ্য করেই করা হয়, কারণ তারা প্রতিরোধ করতে অক্ষম।”

উইগান কাউন্সিলের পরিবেশ পরিচালক পল বার্টন বলেন, “আমরা চাই দ্রুততম সময়ে জায়গাটি পরিষ্কার হোক। বাসিন্দাদের নিরাপত্তা ও মানসিক সান্ত্বনাই এখন আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার।”

এনভায়রনমেন্ট এজেন্সির অপারেশন ডিরেক্টর পল ক্লেমেন্টস বলেন, “আমরা স্থানীয় জনগণ, ব্যবসা ও স্কুলের প্রভাব বিবেচনায় রেখে দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছি। অপরাধীদের চিহ্নিত করতে এবং আইনি ব্যবস্থা নিতে সব রকম প্রয়াস চলছে।”

সূত্রঃ স্কাই নিউজ

এম.কে

আরো পড়ুন

প্যানডেমিক যুগের সবচেয়ে কঠোর লকডাউন যুক্তরাজ্যে!

অনলাইন ডেস্ক

জীবনে সফল হতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া জরুরি নয়ঃ ঋষি সুনাক

ভিসা ফি’র অভাবে স্ত্রী ও সন্তান থেকে তিন বছর বিচ্ছিন্ন ব্রিটিশ বাবা

নিউজ ডেস্ক