যুক্তরাজ্যের ফাইন্যান্সিয়াল কন্ডাক্ট অথরিটি (এফসিএ) গাড়ি অর্থায়ন কেলেঙ্কারিতে ক্ষতিগ্রস্ত কোটি কোটি ভোক্তার জন্য ঐতিহাসিক ক্ষতিপূরণ স্কিম ঘোষণা করেছে। এই স্কিমের আওতায় ২০২৬ সাল থেকে ক্ষতিগ্রস্তরা অর্থ পেতে শুরু করবেন, যেখানে মোট খরচ পড়তে পারে ৯ বিলিয়ন থেকে ১৮ বিলিয়ন পাউন্ড পর্যন্ত।
সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায়ের পর এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আদালত গাড়ি অর্থায়নের কমিশন নিয়ে পূর্ববর্তী একটি রায় আংশিকভাবে বাতিল করেছে, যা ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ৪৪ বিলিয়ন পাউন্ডে পৌঁছাতে পারত। লিবারেল ডেমোক্র্যাট এমপি ববি ডিন এই কেলেঙ্কারিকে “পিপিআই-এর পর থেকে সবচেয়ে বড় ভোক্তা আর্থিক কেলেঙ্কারি” হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
২০০৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ৪৬ লাখ গাড়ি ঋণ চুক্তিতে “ডিসক্রেশনারি কমিশন অ্যারেঞ্জমেন্ট” অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই ব্যবস্থায় গাড়ি বিক্রেতারা উচ্চ সুদের ঋণ দিয়ে বেশি কমিশন পেতেন, যার ফলে ভোক্তাদের খরচ বেড়ে যেত। ২০২১ সালে এই কমিশন ব্যবস্থা নিষিদ্ধ করা হয়।
এফসিএ জানিয়েছে, প্রতিটি দাবির জন্য গড়ে ৯৫০ পাউন্ডের কম ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। তবে ক্ষতিপূরণের সুনির্দিষ্ট অঙ্ক কমিশনের পরিমাণ ও প্রদত্ত তথ্যের উপর নির্ভর করবে। সুদসহ অর্থ ফেরত দেওয়া হবে, যা বছরে গড়ে ৩ শতাংশের মতো হতে পারে।
নতুন স্কিমের পরামর্শ প্রক্রিয়া অক্টোবরের মধ্যে শুরু হবে এবং এতে ২০০৭ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে হওয়া গাড়ি অর্থায়ন চুক্তিগুলো বিবেচনায় আনা হবে। একই সঙ্গে এফসিএ নিশ্চিত করবে যে ঋণদাতারা দাবিগুলো ন্যায্যভাবে মূল্যায়ন করছে।
এফসিএ প্রধান নির্বাহী নিকিল রাতি বলেছেন, “কিছু প্রতিষ্ঠান আইন ভেঙেছে, তাই তাদের গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়াই ন্যায্য। আমাদের লক্ষ্য এমন একটি স্কিম তৈরি করা যা সহজ, ন্যায্য এবং ভোক্তাদের জন্য উপকারী হবে।” তিনি আরও সতর্ক করেছেন, আইনজীবী বা দাবি ব্যবস্থাপনা কোম্পানির মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ চাইলে ভোক্তাদের অর্থের একটি বড় অংশ ফি হিসেবে কেটে নেওয়া হতে পারে।
ভোক্তা অধিকারকর্মী মার্টিন লুইস ও অ্যালেক্স নিল উভয়েই ক্ষতিপূরণ স্কিমের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেছেন, এই উদ্যোগ ভোক্তাদের আস্থা পুনরুদ্ধারের বড় সুযোগ। তবে তারা সতর্ক করেছেন, শিল্পখাত আইনি জটিলতা তৈরি করে ক্ষতিপূরণ প্রক্রিয়া বিলম্বিত করার চেষ্টা করতে পারে।
এফসিএ বলেছে, ক্ষতিপূরণ স্কিম চালু হতে সময় লাগবে, তবে ২০২৬ সাল থেকেই অর্থ প্রদান শুরু হওয়ার আশা করা হচ্ছে। যেসব চালক ইতিমধ্যে অভিযোগ করেছেন, তাদের নতুন করে কিছু করতে হবে না। অভিযোগগুলো অন্তত ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত থাকবে, এরপর পর্যালোচনা শুরু হবে।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
০৪ আগস্ট ২০২৫