3.8 C
London
December 26, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্যের মিল্টন কীন্সের নির্মাতাদের সতর্কবার্তাঃ নতুন শহর আবাসন সংকট মেটাবে না

ব্রিটেনের সফল নতুন শহরগুলোর অন্যতম মিল্টন কীন্সের পরিকল্পনাবিদরা যুক্তরাজ্য সরকারের ঘোষিত নতুন শহর কর্মসূচি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, বর্তমান পরিকল্পনায় উচ্চাকাঙ্ক্ষার ঘাটতি রয়েছে এবং সামাজিক আবাসনের বিষয়ে সুস্পষ্ট অঙ্গীকার অনুপস্থিত, যা প্রকৃত আবাসন সংকট সমাধানে ব্যর্থ হতে পারে।

 

মিল্টন কীন্স ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের সাবেক পরিকল্পনা পরিচালক এবং টাউন অ্যান্ড কান্ট্রি প্ল্যানিং অ্যাসোসিয়েশনের (TCPA) সাবেক চেয়ারম্যান লি শোস্তাক বলেন, নতুন শহরগুলোর মূল উদ্দেশ্যই যেন বিস্মৃত হচ্ছে। লন্ডনের তীব্র আবাসন চাপ কমাতে মিল্টন কীন্স পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হয়েছিল, যেখানে বড় পরিসরে কাউন্সিল হাউজিং ছিল। কিন্তু বর্তমান পরিকল্পনায় সে ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি দেখা যাচ্ছে না।

তিনি সতর্ক করে বলেন, প্রস্তাবিতভাবে ৪০ শতাংশ ঘর ‘অ্যাফোর্ডেবল হাউজিং’ হলেও তার বড় অংশ সামাজিক আবাসন নয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—লন্ডন বা বড় শহরগুলোর অপেক্ষমাণ গৃহহীন ও নিম্নআয়ের মানুষদের জন্য এসব ঘর আদৌ উন্মুক্ত থাকবে কি না, সে বিষয়ে কোনো স্পষ্টতা নেই।

শোস্তাকের মতে, “আপনি যদি বাড়ি কিনতে না পারেন, তাহলে নতুন শহরে গিয়ে থাকার সুযোগ পাবেন কি না—এই মৌলিক প্রশ্নের উত্তর আজও অজানা।” তার ভাষায়, মূল নতুন শহর কর্মসূচি যে নীতির ওপর দাঁড়িয়ে ছিল, আজ তার বাস্তব প্রতিফলন নেই।

গত সেপ্টেম্বরে সরকার গঠিত নতুন শহর টাস্কফোর্স ১২টি সম্ভাব্য স্থানের তালিকা প্রকাশ করে। প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এই সংসদীয় মেয়াদে অন্তত তিনটি নতুন শহরের নির্মাণকাজ শুরু করার ঘোষণা দিয়েছেন, যা সরকারের ১৫ লাখ ঘর নির্মাণের লক্ষ্য পূরণের অংশ।

তবে মিল্টন কীন্সের আরেক সাবেক পরিকল্পনা পরিচালক ও কমিশন ফর দ্য নিউ টাউনসের সাবেক প্রধান নির্বাহী জন ওয়াকার বলেন, প্রস্তাবিত কোনো এলাকাই মিল্টন কীন্সের মতো বড় ও স্বতন্ত্র নতুন শহরের পর্যায়ে পড়ে না। তার মতে, অনেক ক্ষেত্রেই এগুলো বিদ্যমান জনপদের সীমিত সম্প্রসারণ বা পুনর্গঠন প্রকল্প, যা জাতীয় পর্যায়ের সংকট মোকাবিলায় যথেষ্ট নয়।

ওয়াকার বলেন, “এটি উত্তেজনাকর উদ্যোগ হলেও যথেষ্ট উচ্চাকাঙ্ক্ষী নয়। মানুষ যে ধরনের পরিবর্তন আশা করছে, তা আদৌ আসবে কি না—সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত নই।”

দুজন পরিকল্পনাবিদই জোর দিয়ে বলেন, নতুন শহর সফল করতে হলে সরকারসমর্থিত শক্তিশালী নতুন টাউন করপোরেশন প্রয়োজন, যাদের হাতে ভূমির মালিকানা, পরিকল্পনা ও অবকাঠামো উন্নয়নের পূর্ণ ক্ষমতা থাকবে। শুধু মানচিত্রে এলাকা চিহ্নিত করলে বা ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি দিলেই শহর গড়ে ওঠে না—তার জন্য গতি, নেতৃত্ব ও বিনিয়োগ দরকার।
এদিকে কিছু প্রস্তাবিত স্থানে তীব্র জনরোষ দেখা দিয়েছে।

চেশায়ারের অ্যাডলিংটন গ্রামে ২০ হাজার ঘর নিয়ে নতুন শহর গড়ার পরিকল্পনা স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। চেশায়ার ইস্ট কাউন্সিল আনুষ্ঠানিকভাবে এর বিরোধিতা করেছে এবং প্রতিবেশী স্টকপোর্ট কাউন্সিলের নেতা একে “ওয়েস্টমিনস্টারে বসে মানচিত্রে ডার্ট ছোড়ার সিদ্ধান্ত” বলে আখ্যা দিয়েছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা আয়শা হকাট বলেন, পুরো গ্রাম মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তার অভিযোগ, এই প্রকল্প স্থানীয় আবাসন চাহিদা পূরণ করবে না, বরং বেসরকারি ডেভেলপারদের মুনাফা নিশ্চিত করবে।

TCPA-এর কমিউনিটিজ পরিচালক ক্যাটি লক বলেন, নতুন শহরের স্থান নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কৌশলগত স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে এবং জনগণকে সম্পৃক্ত করা হয়নি। তার মতে, নতুন শহর কর্মসূচি জনআস্থার সংকট কাটানোর সুযোগ ছিল, কিন্তু সরকার সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি।

সরকার অবশ্য সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করেছে। হাউজিং, কমিউনিটিজ অ্যান্ড লোকাল গভর্নমেন্ট মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানান, নতুন শহরগুলোর ৪০ শতাংশ ঘর অ্যাফোর্ডেবল হাউজিং হবে এবং এই কর্মসূচি আবাসন সংকট সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নিশ্চিত করার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে।

তবে মিল্টন কীন্সের অভিজ্ঞ পরিকল্পনাবিদদের বক্তব্যে একটি বার্তাই স্পষ্ট—শক্ত দৃষ্টিভঙ্গি, সামাজিক দায়বদ্ধতা ও বাস্তব ক্ষমতা ছাড়া নতুন শহর গড়ে উঠলেও, পুরোনো আবাসন সংকট থেকেই যাবে।

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে

আরো পড়ুন

যুক্তরাজ্যের নূন্যতম মজুরি আইন প্রশ্নের মুখে

যুক্তরাজ্যে বাড়ছে স্তন ক্যান্সার, গবেষণায় এসেছে নতুন দিক

সরকারের ব্যাংকিত খাতে জালিয়াতি দমনের পরিকল্পনা নিয়ে নতুন ঝুঁকি