যুক্তরাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল রিচার্ড হারমার দেশটির মন্ত্রিসভাকে সতর্ক করে জানিয়েছেন, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধে যুক্ত হওয়া আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী হতে পারে— আত্মরক্ষামূলক সমর্থন ছাড়া অন্য কোনও ভূমিকায় অংশ নেওয়া আইনগতভাবে বেআইনি হতে পারে।
দ্য স্পেকটেটর-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হারমার সরকারকে যে আইনি পরামর্শ দিয়েছেন, তাতে তিনি যুক্তরাজ্যের কোনো ধরনের বোমা হামলায় অংশ নেওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “অ্যাটর্নি জেনারেল মনে করছেন আত্মরক্ষা ছাড়া অন্য কোনো ভূমিকা যুক্তরাজ্যের নেওয়া ঠিক হবে না।”
প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার বিবেচনা করছেন, যদি ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানে হামলার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রকে সামরিক সহায়তা দেওয়া হবে কিনা এবং ভারত মহাসাগরের দিয়েগো গার্সিয়া ঘাঁটি ব্যবহার করতে দেওয়া হবে কিনা। হারমারের পরামর্শে যুক্তরাজ্যের ভূমিকা সীমিত হয়ে যেতে পারে।
অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, দীর্ঘদিনের প্রচলিত রীতি অনুযায়ী আইন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে কোনো আইনি পরামর্শ চাওয়া হয়েছে কি না এবং তারা কী পরামর্শ দিয়েছেন— তা প্রকাশ করা হয় না। এতে নিশ্চিত করা হয় যে সরকার সর্বোচ্চ সতর্ক ও সৎ আইনি পরামর্শের ভিত্তিতেই কাজ করবে।
বুধবার প্রধানমন্ত্রী জরুরি কোবরা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন, যেখানে বিভিন্ন সম্ভাব্য পরিস্থিতি ও কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হয়। বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে ওয়াশিংটনে সাক্ষাৎ করবেন।
ট্রাম্প এখনও ইরানে হামলার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি। দ্য গার্ডিয়ান-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনি প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের বলেছেন, হামলা কেবল তখনই যৌক্তিক হবে যদি তথাকথিত ‘বাংকার বাস্টার বোমা’ ইরানের গুরুত্বপূর্ণ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনাটি সম্পূর্ণ ধ্বংস করতে পারে— যেটি ফরদো শহরে ৮০–৯০ মিটার মাটির নিচে একটি পাহাড়ের ভেতরে অবস্থিত।
ইসরায়েল ও ইরান কয়েক দিন ধরে একে অপরকে হামলা করছে। ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা তেহরানকে পারমাণবিক অস্ত্র বানানো থেকে ঠেকাতে বিমান হামলা চালিয়েছে। অন্যদিকে ইরান জানিয়েছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ এবং ইসরায়েল শত শত বেসামরিক লোক নিহত করেছে।
ফরদোর পারমাণবিক স্থাপনাটি বন্ধ করা— কূটনৈতিক বা সামরিক উপায়ে— ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ফরদোতে ৮৩.৭ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করা হয়েছে, যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ৯০ শতাংশের কাছাকাছি।
জ্বালানি মন্ত্রী মিয়াটা ফাহনবুলেহ বলেন, স্টারমার একজন আইনজীবী এবং মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ, তাই তিনি অবশ্যই আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় থেকে যে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি বলেন, “আইনি পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর জন্য, আমি সেটি নিয়ে মন্তব্য করব না। তবে এতটুকু বলব, আমরা এমন একজন প্রধানমন্ত্রী পেয়েছি যিনি শান্ত মাথায় সিদ্ধান্ত নেন।”
তিনি আরও বলেন, “কেউ চায় না এই সংঘাত আরও বিস্তৃত হোক এবং পুরো অঞ্চলে অস্থিরতা সৃষ্টি করুক। এখন প্রধানমন্ত্রীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হচ্ছে শান্ত ও সংযত নেতৃত্ব দিয়ে কূটনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করা।”
অপরদিকে, ছায়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল বলেছেন, “সঙ্কটের সময়ে শুধু আইনি পরামর্শকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা ঠিক নয়।” টাইমস রেডিও-কে তিনি বলেন, “আমি মনে করি না, এমন একটি সঙ্কটপূর্ণ ও জাতীয় নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট সময়ে আমরা কেবল আইনগত পরামর্শের পেছনে লুকাতে পারি। যখন আমাদের সবচেয়ে বড় মিত্র যুক্তরাষ্ট্র আমাদের দিক থেকে সামরিক সহযোগিতার প্রত্যাশা করে, তখন আমাদের নিজেদের ঘাঁটি ব্যবহার করেই তাদের সহায়তা করতে হতে পারে।”
বুধবার রাত পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দিয়েগো গার্সিয়া বা অন্য কোনো ব্রিটিশ ঘাঁটি ব্যবহারের জন্য আনুষ্ঠানিক অনুরোধ আসেনি।
দিয়েগো গার্সিয়া সাম্প্রতিক সময়ে মরিশাসের সঙ্গে এক নতুন ৯৯ বছরের চুক্তির আওতায় এসেছে, যাতে ঘাঁটির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাজ্যের কাছেই রয়েছে। যদিও বাস্তবে এটি মূলত যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবহারে থাকে, তবে ঘাঁটির মালিকানা যুক্তরাজ্যের হওয়ায় স্টারমারের অনুমোদন ছাড়া এখানে হামলার প্রস্তুতি নেওয়া যাবে না।
যুক্তরাষ্ট্র রাফ অ্যাক্রোটিরি (সাইপ্রাসে অবস্থিত একটি ঘাঁটি) ব্যবহার করতে চায় বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখান থেকেই বোমারু বিমানগুলোকে জ্বালানি দেওয়া হয়। যুক্তরাজ্য ইতিমধ্যে ওই ঘাঁটিতে ১৪টি টাইফুন যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে, যা ঘাঁটির নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক মিত্রদের সুরক্ষায় নিয়োজিত রয়েছে।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
১৯ জুন ২০২৫